Advertisement
০৬ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

মেলায় আনন্দ করতে গিয়ে গোবিন্দের আর সেই কাজ করা হয়ে ওঠেনি। শিক্ষক পড়া ধরলে সে পড়া বলতে পারল না, কোনও উপযুক্ত কারণও দেখাতে পারল না। সুতরাং গুরু ছাত্রের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। রামনাথ গৃহিণীকে ডেকে বললেন, গোবিন্দর পড়া না হওয়া পর্যন্ত তিনি অভুক্ত থাকবেন।

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

নিজে শাস্তি নিলেন গুরুমশাই

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়ের লেখা পড়ে (‘প্যান্টটা...মানে...’, ১৬-৯) শাস্তিদানের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ঘটনাটি অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগের। যে ছাত্রটি শাস্তি পেয়েছিলেন, তিনি গোবিন্দ চন্দ্র (পরবর্তী কালে তিনি ন্যায়তীর্থ উপাধি পান)। শিক্ষক ছিলেন বুনো রামনাথ (সঙ্গের ছবিতে)। এক বার উৎসব উপলক্ষে তিনি ছাত্রদের তিন দিনের ছুটি দেন এবং সেই সঙ্গে কিছু বাড়ির কাজও দেন। মেলায় আনন্দ করতে গিয়ে গোবিন্দের আর সেই কাজ করা হয়ে ওঠেনি। শিক্ষক পড়া ধরলে সে পড়া বলতে পারল না, কোনও উপযুক্ত কারণও দেখাতে পারল না। সুতরাং গুরু ছাত্রের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। রামনাথ গৃহিণীকে ডেকে বললেন, গোবিন্দর পড়া না হওয়া পর্যন্ত তিনি অভুক্ত থাকবেন। স্বামী অভুক্ত থাকলে স্ত্রী খান কী ভাবে? সুতরাং গৃহিণীও উপবাস করবেন বলে জানালেন। বাকি ছাত্ররাও একই পথের পথিক হল। গোবিন্দ অনুতাপে কেঁদে ফেলল। সে ছুটতে ছুটতে বাড়ি গিয়ে না খেয়েদেয়ে সন্ধের মধ্যে তিন দিনের পড়া তৈরি করে ফেলল। গুরুর কাছে পড়া বলতে পারার পর সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা হল।

আমরা দুটি সিদ্ধান্তে আসতে পারি। এক) অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়। বিনা কারণে ছাত্রের বাড়ির কাজ না করাটা অপরাধ। তার জন্য শাস্তি পাওয়া উচিত। দুই) শাস্তির ক্ষেত্রে শিক্ষককে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে। ছাত্রের মন বুঝে তিনি এমন শাস্তি নির্বাচন করবেন, যাতে ছাত্রটি অনুতপ্ত হয়। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই অপমানিত বোধ না করে। শাস্তি যেন দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার না হয়ে যায়। এ জন্য শিক্ষককে হতে হবে সমানুভূতিশীল। চাইল্ড সাইকোলজি-তেও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। শিক্ষক নির্বাচন করার সময় এই বিষয়গুলিতে নজর রাখা দরকার। নয়তো স্কুলে বিচিত্র শাস্তিদানের সমস্যার সমাধান হবে না।

পিন্টু ভট্টাচার্য বহিরগাছি,

নদিয়া

‘সাফ কথা’টি কী

বিশ্বজিৎ রায়ের নিবন্ধে ‘সাফ কথা’টি বিবেকানন্দের, না লেখকের, তা বোঝা গেল না (‘ধর্মের নামে কারবার নয়, বিবেকানন্দের সাফ কথা’, ১৫-৯)। কার্ল মার্ক্স ধর্মকে আফিমের ‘কারবার’ বলে ছিলেন বলে এ দেশের মার্ক্সবাদীরা আড়ালে বিবেকানন্দকে ‘আফিম ব্যবসায়ী’ বলতে ছাড়েননি। কিন্তু বিবেকানন্দ ধর্ম নিয়ে ভণ্ডামি, কুসংস্কার, ও জাতপাত নিয়ে হিন্দু সমাজের সমালোচনা করেছেন, যাতে হিন্দু সমাজকে শুধরে দেওয়া যায়। অন্য ধর্মেরও সমালোচনা করেছেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। শিকাগো বক্তব্যে তিনি ব্যাঙের গল্প বলে ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতাকে উপহাস করেছেন, তেমনই তিনি মানব জাতির উন্নতির পাথেয় যে ধর্ম, সে কথাও বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞান ও বেদান্ত বিবেকানন্দের তৃতীয় দৃষ্টির জ্যোতি ছিল।

বিবেকানন্দও যুক্তি-বুদ্ধি-বিবর্জিত শিষ্যকুলের অযৌক্তিক ভাবাবেগকে সমালোচনা করেছেন। তিনি খাবারদাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তার মধ্যে থেকে বেছে বেছে কয়েকটামাত্র বাক্য উদ্ধৃত করা হল। তার পর আবার হিন্দুত্ববাদীরা নিজেদের সমর্থনে বিবেকানন্দের কয়েকটামাত্র উদ্ধৃতি বেছে নেয়: এই সমালোচনা করা হল। এটা স্ববিরোধিতা নয় কি? লেখক বলেছেন, বিবেকানন্দ বেশ কিছু প্রসঙ্গে মুসলমান সমাজের প্রশংসা করেছেন। যেমন, নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ভ্রাতৃত্ববোধ। কিন্তু কোনও মাদ্রাসা বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন করে না— এটাও বাস্তব। তবে ভারতে ইসলামের অত্যাচারের কথাও তিনি বার বার বলতেন। আর হিন্দুর দুর্বলতাকে সমালোচনাও করতেন। নিজেকে বুদ্ধিজীবী বা ধর্মগুরু কস্মিনকালেও ভাবেননি।

কিন্তু আজ হিন্দুর সমালোচনা বা হিন্দুত্ববাদীদের সমালোচনা কি বর্তমানে প্রগতিশীলতার মানদণ্ড? ভারতের সমস্ত সংবাদপত্র হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে যতটা কলম ধরেন, তার অর্ধেক কলম যদি হিন্দু সমাজের বঞ্চনা, অশিক্ষা, জাতপাত, ভণ্ড বাবাদের কথা লিখত, তবে এ ভারতের চেহারাটা বদলে যেত। কিন্তু মনে মনে ভাবি, কলমের জোর যতই থাকুক, রাজাকে উলঙ্গ বলার মতো নিষ্পাপ কলজের জোর সবার থাকে না। বিবেকানন্দের ছিল। হিন্দু বলতে তিনি গর্ব বোধ করতেন। কেউ কেউ এখন হিন্দু বলতে লজ্জা পায়। এদের অনেকে প্রগতিশীল।

আসলে বিবেকানন্দ বিবেকের কথা বলেছেন। পরমহংসের কাছে দুধ আর জলকে আলাদা করার কায়দা শিখেছেন। কোনও রাজনৈতিক দলকে তুষ্ট করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। সাহেবদের মনের মতো কথা বলে ইনটেলেকচুয়াল হওয়ার বাসনা ছিল না। বিবেকানন্দ হিন্দু সন্ন্যাসী। মানবজাতির বড় গর্বের ধন। ‘ইঁদুর চড়া’ গণেশ বলার অধিকার তাঁর আছে। কারণ এই ধর্মটার জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। যাঁরা হিন্দু দেবদেবীকে নিয়ে রসিকতা করছেন, তাঁদের বোঝা দরকার তাঁরা না রসিক, না মানবিক। যা বিবেকানন্দকে মানায়, তা ও পাড়ার বুদু, মধুদের মানায় না।

তথাকথিত ‘জাতীয়তাবাদী’ দলগুলি বিবেকানন্দের জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণাকে কতটা মর্যাদা দেন, তাতে সন্দেহ আছে। এ দেশে পুরোহিতের চাল-কলা, আর মৌলবীদের ভাতার কথা রাষ্ট্র কিন্তু ভাবে। এ দেশে ছাত্রের পরিচয় সে সংখ্যালঘু, না সংখ্যাগুরু। সেই পরিচয়ে বৃত্তি পাওয়া যায়। সংরক্ষণের নামে জাতপাতকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ সবই ভোটের লক্ষ্য। লেখক শুধু হিন্দুবাদীদের দেখলেন, বিবেকানন্দকে নিয়ে কারবার করতে!

গেরুয়া পরিহিত চিরযুবা বিবেকানন্দকে নিয়ে এ দেশে বহু দিনের কারবার। এ দেশ রাম রহিমের লড়াই দেখেছে। জন্মভূমি ভাগ হতে দেখেছে। ধর্ম বিবেকানন্দের মাতৃভূমিকে ভাগ করে দিয়েছে। বিবেকানন্দকে অনুকরণ বা অনুসরণ করে যদি হিন্দুত্ববাদী যুবা শক্তি সংঘবদ্ধ হয়, তবে মেকি সেকুলারিস্টদের জায়গা এ দেশে থাকবে না। তাই কি বিবেকানন্দকে মনে পড়ল! তাঁকে উদ্ধৃতি রূপে ব্যবহার করে তাঁর আদর্শে জাগ্রত যুবা শক্তি রোকো— এও কি রাজনীতি নয়! বিবেকানন্দের কোন ধারণা কে, কী ভাবে গ্রহণ করবে— সেটা কে ঠিক করবে? যদি কেউ বিবেকানন্দকে পড়তে গিয়ে ভুল বোঝেন, তবু তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারণ কেউ তো বিবেকানন্দের একটা পাতা উল্টেছে। হিন্দুত্ববাদীদের হাতে যদি বিবেকানন্দ নিরাপদ না থাকেন, তবে কার হাতে থাকবে সেটা ‘সাফ’ করে না বলাটা কি চিন্তার অবসন্নতা, না কি ভাবের ঘরে চুরি?

সুব্রত পাল নাটনা-করিমপুর,

নদিয়া

নরকযন্ত্রণা

আমি শিবপুর হাওড়ার বাসিন্দা। কাজের সুবাদে জি টি রোড দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্তমানে এই পথে যাতায়াত প্রায় নরকযন্ত্রণার সমান হয়ে গিয়েছে। শিবপুর ট্রামডিপো থেকে হাওড়া স্টেশন পৌঁছতে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট লাগছে, যদিও পথের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। যানবাহনের শম্বুকগতির ফলে মানুষের অনন্ত হয়রানি। ট্রাফিক পুলিশ প্রায় চোখেই পড়ে না। যাঁদের দেখা যায়, তাঁরাও উদাস চোখে দাঁড়িয়ে থাকেন। সামনে ৫৫এ বাস থাকলে তো আর কথাই নেই। এমন ভাবে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকে, পাশ কাটিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য। মঙ্গলাহাটের দিন পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে পড়ে।

প্রশাসন সক্রিয় থাকলে এ রকম হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এটাই হয়ে চলেছে দিনের পর দিন। রিকশা ও টোটো সকাল আটটা থেকে বারোটা পর্যন্ত নিষিদ্ধ হলেও তাদের চলাচল দিব্যি চোখে পড়ে। প্রশাসনের কাছে আবেদন, এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়। এই পথের যাত্রীরা যেন একটু স্বস্তিতে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারেন।

সমীর রায়চৌধুরী শিবপুর,

হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE