Advertisement
০৬ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

মুঘল তথা মুসলমান শাসকদের অত্যাচারের গল্প তো প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে। ধর্মীয় বিভাজনের ধারণাটা শক্ত করতে সেখানে সকলকেই একই বৃত্তে চিহ্নিত করা হয়েছে।

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ইতিহাসের নামে

কল্পবিজ্ঞানের গল্প, উপন্যাস ইত্যাদির সঙ্গে পরিচয় ছিল। ভালই লাগত বেশ। কিন্তু ইদানীং এই ‘কল্প-ইতিহাস’ ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না মোটেই। রানা প্রতাপের মতো বিচক্ষণ শাসকও কল্পনা করতে পারেননি, এক দিন হলদিঘাটের যুদ্ধে তিনি আকবরকে পরাজিত করবেন। তা হলে শুধু শুধু আর ওই ঘাসবিচালির বিছানায় শুয়ে কষ্ট করতেন না। এমন কথা শুনলে হয়তো ওঁর প্রিয় চৈতকও হাসত। মোগলসরাই স্টেশনের নামের মধ্যেই হয়তো ইঙ্গিতটা লুকিয়ে ছিল। মোগল-সরাই; ফলে জোরকদমে শুরু হয়ে গেছে সরানোর কাজ। রাজস্থানের পাঠ্য ইতিহাস বইয়ে ‘মোগল’রা এখন লুপ্তপ্রায় প্রাণী। এর পর মহারাষ্ট্রও সেই পথে হাঁটছে।

মুঘল তথা মুসলমান শাসকদের অত্যাচারের গল্প তো প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে। ধর্মীয় বিভাজনের ধারণাটা শক্ত করতে সেখানে সকলকেই একই বৃত্তে চিহ্নিত করা হয়েছে। কুতুবউদ্দিন আইবকের সঙ্গে সম্রাট আকবর, মহম্মদ ঘোরি-র সঙ্গে শের শাহ, সব ঘেঁটে ঘুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসকে কোথাও বিকৃত করে, কোথাও একটু পাশ কাটিয়ে গিয়ে, ‘সত্যের খুব কাছাকাছি মিথ্যে’ দিয়ে গড়া সে সব আশ্চর্য উপাখ্যান। লক্ষণীয় এই যে, অত্যাচারী শাসকদের মধ্যে হিন্দু রাজা, জমিদার বা নীলকর সাহেবরা আপাতত প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। কল্প-ইতিহাস রচয়িতাদের আর একটি আসুরিক প্রচেষ্টা, গডসে মন্দিরের একটা একটা করে ইট স্থাপনার কাজ চলছে। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে ‘মিথ্যের আলোকে’ নতুন করে অবমূল্যায়ন করা শুরু হয়েছে।

একটি সংগঠন— নিন্দুকেরা পরিহাস ছলে বলে থাকে, স্বাধীনতা সংগ্রাম বা দেশগঠনে যাদের অবদান হিসেব করতে গিয়েই নাকি আর্যভট্ট শূন্য আবিষ্কার করেন— ক্রমাগত তাদের আদি নেতৃবর্গের নামসংকীর্তনের ঠেলায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, স্টেশন-বাজার সব অন্ধকার করে তুলেছে। এমনকী সরকারি খরচে ছাপা মন্ত্রীর প্যাডেও অশোকস্তম্ভের নীচে নিজের দলের তাত্ত্বিক নেতার ছবি! গাঁধীজি সম্পর্কে অপপ্রচারে যাঁরা বিভ্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বলব, ওঁকে কিছুটা বুঝতে হলে, আপনার আমার সবার জানা ইতিহাসের কিছু তথ্য নিয়ে একটু তলিয়ে ভেবে দেখুন। যেমন, ১) সারা ভারত ঘুরে সমগ্র ভারতবাসীকে বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ করার কাজটা প্রথম মহাত্মা গাঁধীই শুরু করেন। আজকের এই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটা এমনি এমনি গড়ে ওঠেনি। পরবর্তী নেতৃবৃন্দের জন্য স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর প্রবল জনসমর্থনের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন ওই মানুষটিই।

২) নেতাজি আর গাঁধীজির লক্ষ্য ছিল এক। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনের পথটা হয়ে গিয়েছিল আলাদা। তাই ওঁদের মতান্তর হয়েছিল, ‘মনান্তর’ নয়। প্রমাণস্বরূপ বলতে পারি, এখন আমরা যে ভাবে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করি, সে রকম ভাবে নেতাজির আজাদ হিন্দ
ফৌজ কুচকাওয়াজ করে গাঁধীজির জন্মদিন পালন করেছিল। তাঁর প্রতি কতটা শ্রদ্ধা থাকলে তবে তাঁর জীবদ্দশাতেই এ রকম অনুষ্ঠান করা যায়! অথচ আমরা, ইতিহাসবিমুখ বাঙালিরা নেতাজির পক্ষ নিয়ে গাঁধীজিকে ‘দূর ছাই’ বলাটা একটা ফ্যাশন করে ফেলেছি।

৩) দেশভাগ আর তার কাছাকাছি সময় কংগ্রেসের কিছু ভুলের জন্য গাঁধীজিকে দায়ী করার সময় আমরা ভুলে যাই যে, উনি দেশভাগ চাননি, বলেছিলেন, ‘আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে যেন দেশভাগ হয়’। বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেস ভেঙে দেওয়া দরকার’। ভুলে যাই, সে সময় তাঁর বয়স হয়েছে, প্রবল ইংরেজ আর নেহরু, পটেল, জিন্নাদের মতো শক্তিশালী নেতারাই তখন মূলমঞ্চে। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেল ভারতবাসীর প্রত্যাশার চাপ ক্রমবর্ধমান। ওই সময় হয়তো অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সমকাল যেমন সময়ের যাচাই পর্ব শেষ হলে তবেই ইতিহাসে প্রবেশাধিকার পায়, তেমনই সমকালের সাক্ষ্যকে অস্বীকার করে ইতিহাস লেখা যায় না। তাই আজও যখন দীনদয়াল বা গডসেবাবুর ভাবশিষ্যরা বিপাকে পড়েন, তখন সমকালকেও আশ্রয় নিতে হয় ইতিহাসের আড়ালে। উদ্ধৃত করতে হয় গাঁধীজির আদর্শের কথা।

মানস ঘোষ

হাওড়া

নাবালিকা

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হলে এখন থেকে তা ধর্ষণ বলেই গণ্য হবে।

নাবালিকা স্ত্রীকে ধর্ষণ, বৈবাহিক ধর্ষণ— এই সব পাশ্চাত্য চিন্তাপ্রসূত। প্রশ্ন ওঠে, পাশ্চাত্যের চিন্তাপ্রসূত আইনগুলি ভারতীয় সমাজের পক্ষে কতটা মঙ্গলজনক? এই প্রেক্ষিতেই বলতে চাই যে, সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অসমীচীন হবে না। ‘নাবালিকা স্ত্রী’কে ধর্ষণ— এই শব্দবন্ধের মধ্যে স্ব-বিরোধ আছে। আইন নাবালিকার বিয়েতে স্বীকৃতি দিল কি না, পরের প্রশ্ন। কিন্তু যে বিবাহের পিছনে সমাজের স্বীকৃতি থাকে, পরিবারের সম্মতি থাকে এবং পাত্রপাত্রীর সম্মতিসাপেক্ষে বৈবাহিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যৌন সংসর্গ তাদের ব্যক্তিগত অধিকার, রাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

নাবালিকা বিবাহ প্রতিরোধই উদ্দেশ্য হলে, নাবালিকার সঙ্গে বিবাহ এবং তাকে স্ত্রী হিসাবে মান্যতা রাষ্ট্র দিতে পারে না— সরাসরি এটা বলা হচ্ছে না কেন? মাননীয় বিচারপতি বলেছেন, একটি মেয়ের ১৮ বছরের নীচে বিয়ে হলে যে সব সমস্যা হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল যৌন সম্পর্ক, যা ওই বয়সের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার পক্ষে কাঙ্ক্ষিত নয়। সামাজিক দিক থেকেও ওই বয়সে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন মেয়েটির জন্য একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়। এই সময় মেয়েটি যৌন সম্পর্কে সম্মতি দেবে কি না, তা অপ্রাসঙ্গিক। ১৮-র নীচে মেয়ের বিয়ে হলে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পক্ষে কাঙ্ক্ষিত নয়— কথাটি সর্বাবস্থার জন্য কতটা যুক্তিসংগত, ভেবে দেখা দরকার।

মেয়েদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ জন্মগতির ধারায় তথা জেনেটিক সূত্রে এবং আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থান ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে, সম্প্রদায়ে, গোষ্ঠীর ভিতরে মানুষে মানুষের মধ্যে যখন মেজাজে, দৈহিক সক্ষমতায়, শারীরিক গঠন কাঠামোয় এবং মানসিক গড়ন ও সক্ষমতায় পার্থক্য বিরাজমান, তখন জোর করে একই আইন সবার উপর চাপিয়ে দেওয়া মানবীয় অধিকারকে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করারই শামিল নয় কি? তা ছাড়া সন্তান ধারণের ঝুঁকি এড়াতে বৈজ্ঞানিক উপায় সহজলভ্য। সেই সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

বাল্যবিবাহ রোধের জন্য আগে স্ত্রীশিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে, সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে যাতে শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ে।

মসিহুর রহমান

কলকাতা-১৩

পুরুলিয়া

একটু বৃষ্টি হলেই পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের ছবিটা বদলে যায়। প্রতীক্ষালয় নেই, নেই হকারদের জন্য আলাদা জায়গা। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা। টয়লেট, পানীয় জলের সমস্যা লেগেই আছে। অথচ এখান থেকেই কলকাতা, জামশেদপুর, শিলিগুড়ি, বোকারো, ধানবাদের অনেক বাস যায়। পর্যটকের আনাগোনাও লেগেই থাকে। কোনও সুরাহা হয়নি আজও। নির্বিকার প্রশাসন।

শুভজিৎ সার

পুরুলিয়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

ভ্রম সংশোধন

সুকৃতী রায়ের মৃত্যু সংক্রান্ত খবরে (১০-১১, ১১-১১, পৃ ১৩) লেখা হয়েছে,
তিনি আয়কর দফতরের কর্তা। কিন্তু তিনি বাণিজ্য কর দফতরের আধিকারিক
ছিলেন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE