পোস্তার উড়ালপুল
পোস্তার বিবেকানন্দ উড়ালপুল নিয়ে যা ঘটে গেল, সেটাকে ২০১৭-র সেরা তামাশা বলা যেতে পারে (‘ভাঙা সেতু থাকবে কি, প্রশ্ন কমিটির’, ২-১)। সেই কোন ২০১৬-র মার্চে একটা পিলারসহ পুলের কিছুটা অংশ ভেঙে পড়েছিল, তার কারণ আর ভবিষ্যৎ কী জানতে দুটো বছর পার হতে চলল, এখনও ঠিকঠাক জানা গেল না।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সম্ভাব্য রিপোর্ট সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তাও বিভ্রান্তিকর। মনে রাখতে হবে, খানপঞ্চাশেক তৈরি পিলারের মধ্যে মাত্র একটি, অর্থাৎ চল্লিশ নম্বর পিলারটাই ভেঙেছে। আর বাকি প্রায় এক কিলোমিটার অংশটা এখনও দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে কংক্রিটের ডেকসমেত। তা হলে পুল অনুপযুক্ত হয় কী করে? নাকে একটা ফোড়া হলে পুরো নাক কাটা যায় নাকি?
শহরে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে বলে পুলের ধারণক্ষমতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে— অনেকে এমন আশঙ্কা করছেন, জানা গেল। তা হলে তো হাওড়া ব্রিজসমেত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়া দরকার। সবাই অতিরিক্ত ভার বহন করছে।
বিভিন্ন বড় শহরে যখন একের পর এক উড়ালপুল তৈরি হয়ে যান-চলাচলের পথ সুগম হচ্ছে, তখন দুশো কোটি টাকা খরচ করে এই তামাশা দেখা অত্যন্ত লজ্জার। আগামী দিনে আরও অনেক উড়ালপুলের পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের আছে এবং তা যেন অযোগ্য পরিকল্পনাবিদ এবং ডিজাইনারের হাতে না যায়, তা বরং দেখা দরকার।
অরূপকুমার চট্টোপাধ্যায় কলকাতা-২৬
মেলা ছিল না?
‘প্রকৃত উৎসবের বাংলা?’ (৫-১) নিবন্ধে দেবাশিস ভট্টাচার্য আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর বর্তমান কাজ এবং স্বপ্ন নিয়ে যা লিখেছেন,তাতে আগের সরকারের চরম ব্যর্থতা আর নির্লিপ্তির কথা বেশ চোখে পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাংলার মেলা এবং উৎসব কি আগে ছিল না? কত দিন ধরে হয়ে আসছে রামকেলি মেলা, জয়দেব মেলা, পৌষ মেলা, রথের মেলা, পিরের মেলা, গাজনের মেলা, চড়কের মেলা এবং ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও নানা ছোট-বড় মেলা। কলকাতায় ‘গান মেলা’ এবং ‘লিটল ম্যাগাজিন মেলা’ আগে থেকেই ছিল। বাম আমলে ‘বড় উৎসব’ দুর্গাপুজো ছাড়া কিছু ছিল না? ‘বইমেলা’, ‘চলচ্চিত্র উৎসব’ তুচ্ছ? ‘এমনকী চলচ্চিত্র উৎসব কার্যত নন্দনের চৌকাঠ পেরোত না’ পড়ে অবাক লাগল। নন্দন ছাড়াও অনেক প্রেক্ষাগৃহে বিভিন্ন দেশের অতি উচ্চ মানের ছবি দেখানো হত।
রাজারহাট, নিকো পার্ক, ইকো পার্ক ইত্যাদি অধুনা দর্শনীয় স্থানগুলির সৃষ্টির কথা লেখক জানেন কি? হ্যাঁ, পার্ক এবং রাস্তাঘাট সেজে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। লেখক উন্নত দেশগুলোর ব্যবস্থা দেখেছেন সম্ভবত। সেখানকার আলো দিনের মতো। এখানে সাজানো বাহারি আলোর চমক আছে কিন্তু তার ঔজ্জ্বল্য অপ্রতুল হওয়ার ফলে আমাদের পরিচিত কলকাতায় মেয়েদের হাত ধরে টানা, ছিনতাই, চুরির সম্ভাবনা বেড়েছে।
আর, কলকাতার ফ্লাইওভার, সুন্দরবনের সেতু, জেলা-সদরে প্রেক্ষাগৃহ, বাংলা আকাদেমি, নাট্য অ্যাকাডেমি নির্মাণ, জেলায় জেলায় নাটকের প্রসার, দূরপাল্লার বাস ইত্যাদি কাজগুলোর জন্যে একটু প্রশংসা কি বাম জমানা পেতে পারে না? আর সেক্টর ফাইভ? এক সময় কম্পিউটার-বিরোধী আন্দোলন করে বামেরা যে ভুল করেছিল তার ক্ষতিপূরণ করেছে সেক্টর ফাইভের দ্রুত উন্নতি ঘটিয়ে। ওই অঞ্চলে যাতায়াতের পরিবহণের উন্নতি সাধন করেছিল তারাই।
তখন এত বিজ্ঞাপন ছিল না। আগে দেখিনি মুখ্যমন্ত্রীর ছবিসহ তাঁর ‘অনুপ্রেরণা’র ফলাও প্রচার। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা এত ঢক্কানিনাদে বোধহয় বিশ্বাসী ছিলেন না। রুটিন কাজের প্রচারও এখন নজর কাড়ে।
তরুণকুমার ঘটক কলকাতা-৭৫
ভুলিয়ে রাখতে
‘প্রকৃত উৎসবের বাংলা?’ নিবন্ধে বাংলার মানুষের অনেক না-পাওয়ার অভাব ভুলে থাকার জন্য, বাড়তি জীবনীশক্তি সঞ্চারের ‘সুযোগ’ করে দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। প্রশ্ন: উন্নয়নের জোয়ার যদি হয়েই থাকে, ‘অনেক না-পাওয়ার অভাব’গুলি তা হলে ঠিক কী?
তৃণমূল স্তর থেকে উঠে আসা জননেত্রীর ন্যায় জনগণের নাড়ি খুব কম জনই বুঝতে পারেন। মঞ্চসফল গায়ক যেমন অডিয়েন্স বুঝে গান নির্বাচন করেন, তিনিও ঠিক মানানসই ভাষায় কথা বলে জনগণের মন জয় করে নেন। জমি অধিগ্রহণ এ রাজ্যে রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল, তাই এ প্রশ্ন তিনি সযত্ন এড়িয়ে চলেন। অথচ ভারী শিল্প স্থাপনের জন্য ‘ল্যান্ড ব্যাংক’, ‘একজানালা নীতি’, ‘বিজনেস সামিট’ ইত্যাদি আয়োজন করা সত্ত্বেও আশাব্যঞ্জক শিল্পস্থাপন (যেখানে এক লপ্তে বহু কর্মসংস্থান হয়) অধরা থাকে। তেলেভাজা, মুড়িভাজার মতো শিল্পের গুণগান করতে শোনা যায়, তোলাবাজি-সিন্ডিকেট দাপিয়ে বেড়ায়, বেকার যুবক টোটো কিনে চক্কর কাটতে থাকে। কলেজে কলেজে ছাত্র সংঘর্ষে শিক্ষামন্ত্রীকে প্রায়শই চেতাবনি দিতে শোনা যায়। চিটফান্ডে টাকা রেখে প্রতারিত অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষদের চোখের জল শুকিয়ে যায়, বিচারের বাণী নীরবে কাঁদতে থাকে। না-পাওয়ার অভাবের তালিকায় কি এগুলি আসা উচিত! তাই জন্যই কি মাটি-ধূলি-পিঠে-পুলি এবংবিধ সাংবাৎসরিক উৎসবের আয়োজনের মাধ্যমে জনগণকে মজিয়ে রাখা? মহালয়া থেকে শারদোৎসবের ঘণ্টা বাজিয়ে রেড রোডে বিসর্জনের শোভাযাত্রা পর্যন্ত উৎসবের রেশকে দীর্ঘায়িত করা? ক্লাবগুলোকে দেদার টাকা বিলিয়ে হাতে রাখার চেষ্টা? ক্ষমতায় আসার ৬৮ দিনের মধ্যে ৪০টি কমিটি গঠন করে আনুগত্যের পুরস্কার প্রদান? ইমাম-মোয়াজ্জেম ভাতা প্রদানের মাধ্যমে সংখ্যালঘু মানুষদের কাছে টানার চেষ্টা? সরকারি ছুটি বাড়িয়ে কর্মচারীদের মন জয়ের অভিলাষ?
বাঙালি স্বভাবত অলস ও হুজুগপ্রিয়, এ অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বন্ধের ডাক শুনে খুশি হয়, শুয়ে বসে দিন কাটায়। মুখ্যমন্ত্রী আলসেমি কাটিয়ে উৎসবের হুজুগে সবাইকে শামিল করছেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি অবশ্যই ধন্যবাদার্হ।
রাজশেখর দাস কলকাতা-১২২
ধর্মকে নিয়েই
এত দিন ধরে বলতে গেলে একই ধরনের লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল, একমাত্র মোদী সরকারকে দেশের বর্তমান অশান্তি অস্থিরতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু তা করা যায় না। যে কোনও কাজের কারণ থাকে। হতেই পারে স্বাধীনতার পর দেশ শাসনে এবং দেশ সম্পর্কিত চিন্তাধারায় এমন কিছু ঘটেছে, যার ফলে দেশে বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ প্রবল ভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। সুগত বসুর নিবন্ধটি (‘আবার নতুন করে চর্চা...’, ২৯-১২) সময়োপযোগী। এই লেখার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বার্তাটি: ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মকে সচেতন ভাবে বর্জন করার আত্মঘাতী রাজনীতি পরিবর্তন করে যদি ভারতীয় ধর্মসহায়ক রাজনীতির প্রবর্তন করা যায়, তবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাত থেকে দেশকে বাঁচানো যাবে। কট্টর মোদী-বিরোধীরা এই বিচার মানবেন কি?
সুগতবাবু বিবেকানন্দের প্রসঙ্গ আনায় বলি, বিবেকানন্দ ভারত পুনর্গঠন ও ভারতীয় শাসনপদ্ধতিতে ধর্মের স্থান আবশ্যিক ভেবেছেন। তাঁর মুক্ত, বৈজ্ঞানিক, বেদান্ত চিন্তা সেকুলারদের ভাল লাগে কি?
সে দিনের লেখায় অন্তত ভারতীয়দের ধর্মবোধ, ঈশ্বরবিশ্বাসের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তার কথা সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ শুধুমাত্র মোদী-বিরোধিতায় আটকে না রেখে, বাস্তবসম্মত ও ভারত-উপযোগী করতে হবে।
রজত ভট্টাচার্য করিমগঞ্জ, অসম
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy