Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: চুল নিয়ে চুলোচুলি

 ‘চুলের বিচিত্র বাহার বন্ধ করুন, আবেদন শিক্ষকের’ শীর্ষক সংবাদ (৭-২) হাস্য উদ্রেক করল। এক জন শিক্ষিকা হিসাবে মনে করি, ছাত্রদের চুলের ছাঁটের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বা পঠনপাঠনের কোনও বিরোধ থাকতে পারে না।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

‘চুলের বিচিত্র বাহার বন্ধ করুন, আবেদন শিক্ষকের’ শীর্ষক সংবাদ (৭-২) হাস্য উদ্রেক করল। এক জন শিক্ষিকা হিসাবে মনে করি, ছাত্রদের চুলের ছাঁটের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বা পঠনপাঠনের কোনও বিরোধ থাকতে পারে না।

বিদ্যালয়ের কাজ বিদ্যা বিতরণ ও বিদ্যা উৎপাদন। সেই কাজটি যথাযথ হলে ছাত্রদের শৃঙ্খলা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই তৈরি হয়। বিদ্যালয় কোনও সেনাবাহিনী তৈরির প্রতিষ্ঠান নয়, যে সকল ছাত্রকে একই রকম ভাবে চুল ছাঁটতে হবে!

চুলের ছাঁট বা পোশাকের ভিন্নতা সর্ব যুগে যেমন এক থাকেনি, তেমন প্রতি যুগে মানুষের মধ্যেও এর ভেদ থেকেছে। একটি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারও চুলের ছাঁট ভিন্ন ভিন্ন।

একদা ছাত্রদের মস্তক মুণ্ডন করে, কেবল সামান্য কয়েক গাছি চুল টিকির মতো রাখতে হত। ইংরেজ আসার পর তাদের অনুকরণে চুল ছাঁটা শুরু হয়। না-হলে বাটি বসানো ছাঁটই প্রচলিত ছিল। গত শতকের সত্তরের দশকে ছাত্রদের লম্বা জুলপি রাখার চল ছিল। এর কিছু পরে কানচাপা চুল। সব সময়ই কিছু অভিভাবক ও শিক্ষক রক্ষণশীল হয়ে তালিবান সুলভ ফরমান জারি করে এসেছেন। তাতে ফ্যাশনের পরিবর্তনকে আটকে রাখা যায়নি।

নিজেকে আধুনিক ও যুগোপযোগী দেখানোর চাহিদা স্বাভাবিক। চিত্রতারকা বা ক্রীড়া-তারকার অনুকরণে সাধারণত যা হয়ে থাকে। এতে শিক্ষায় নৈরাজ্য আসে না। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ বা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালামের চুলের ছাঁটের জন্য, তাঁদের শিক্ষা বা শৃঙ্খলার অভাব ঘটেনি।

ছাত্রদের চুলের ছাঁটের বৈচিত্রের সমস্যার চেয়ে অনেক গুরুতর সমস্যা আছে আমাদের দেশের বিদ্যালয় শিক্ষায়। তাই চুল নিয়ে চুলোচুলি না করে, সে দিকে মনোযোগী হওয়া সকল শিক্ষকের আশু কর্তব্য।

নন্দিতা তমসা হালদার

পাঁতিহাল, হাওড়া

রেজ়াল্ট সাজাও

অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরই ছেলেদের বোঝাতে হবে যে, নিজেকে সাজালে অন্যেরা তোমাদের যত দেখবে, তার থেকে অনেক বেশি দেখবে যদি তোমরা পরীক্ষার রেজ়াল্টটাকে যত্ন করে সাজাও। এই প্রসঙ্গে চলে আসে রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত স্কুলগুলির কথা। মিশনের ছাত্রদের বাধ্যতামূলক ভাবে ছোট ছোট করে মাথার চুল কাটাতে হয়, যা ‘মিশন ছাঁট’ নামে পরিচিত।

গৌতম মুখোপাধ্যায়

খড়দহ

কুপ্রভাব

সেলুনকর্মীদের প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আবেদনের বিষয়টি প্রথমটা মজাদার মনে হলেও, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কতখানি অসহায় হয়ে এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছে ভাবলে, ‘মজা’ ‘হতাশা’য় রূপান্তরিত হয়।

এ সভ্যতা কোন দিকে এগোচ্ছে? ছাত্ররা শিক্ষকের বারণ শুনছে না, অভিভাবকদের গুরুত্ব দিচ্ছে না, বৈদ্যুতিন মাধ্যমের প্রভাবে গা ভাসিয়ে লাগামছাড়া

জীবনযাত্রার পঙ্কিল আবর্তে নিজেদের ঠেলে দিচ্ছে। কানে দুল, হাতে বালা, গায়ে উল্কি এঁকে শ্রেণিকক্ষে বসে থাকা ছাত্রটিকে দেখে নিজেকেই প্রশ্ন করি: আমরা কি শিক্ষক হয়ে যথাযথ শিক্ষাদানে ব্যর্থ হচ্ছি?

১৭ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় দেখছি, ছাত্ররা সাময়িক অনুকরণপ্রিয়তায় মত্ত থাকলেও, ওদের বোঝালে কখনও কখনও তা থেকে সরে আসে। কিন্তু বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কুপ্রভাব, মারণ-গেমের অমোঘ আকর্ষণ, প্রিয় খেলোয়াড়ের অদ্ভুত চুলের ছাঁট, একটু ভাল খেলতে পারা খেলোয়াড়ের উদ্ধত আচরণ— এ সব দেখে কিশোর-তরুণরা কী ভাবে নিজেদের সংযত রাখবে?

শ্রেণিকক্ষের সময়টুকু না-হয় সংযত থাকল; বাকি সময় রাস্তায়, দোকানে, বাজারে কিশোরদের অদ্ভুত আচরণ নিবারণ করবে কে? সামাজিক সু-শিক্ষা প্রদানে শুধু শিক্ষক নয়, অভিভাবক, সমাজবন্ধু, সবার সচেতন প্রয়াস কাম্য।

সুবীর সাহু

জফলা, পশ্চিম মেদিনীপুর

এই ব্রিগেড

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় সঠিক ভাবেই বলেছেন, ৩ ফেব্রুয়ারির বিগ্রেডের নেতারা মানবজমিন আবাদ করার সুবর্ণসুযোগ পেয়েও, সোনা না ফলিয়ে শুধু বিষবৃক্ষই ফলিয়েছেন (ব্রিগেড এবং ..., ৬-২)। বামফ্রন্টের এই দুর্মূল্যের বাজারেও যে মানুষগুলি ব্রিগেডে এসেছিলেন, তাঁরা তো এ কথা জেনেই এসেছেন যে ক্ষমতায় ফেরার ক্ষীণ সম্ভাবনাও অদূর ভবিষ্যতে নেই। কিন্তু সমাবেশ থেকে কী নিয়ে গেলেন বামপন্থায় বিশ্বাসী এই মানুষগুলি? কী পেলেন তাঁরা নেতাদের বক্তৃতা থেকে? পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী, অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সভায় আনতে খুবই আগ্রহী ছিলেন দলের নেতারা। সেটা নাকি সমাবেশের কাছে একটা বাড়তি পাওনা। তিনি এসে কী বলে গেলেন? বললেন, ‘এই ভিড় যেন ভোটে যায়’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪-২)।

স্রেফ ভোট, ব্যস? কোনও লড়াইয়ের কথা নয়, গণআন্দোলনের কথা নয়, সমাজমুক্তি, শোষণমুক্তির কথা নয়, বামপন্থাকে শক্তিশালী করার কথা নয়, শুধুই ভোট?

ভোটের কথা তো আগের ব্রিগেড সমাবেশের নেতারাই বলেছেন, তার সঙ্গে এই ব্রিগেডের তফাত তবে কিসে? সারা বিশ্বের মতো এ দেশেও তো শ্রমিক শ্রেণি, শোষিত মানুষ আজ বেপরোয়া মালিকদের একতরফা আক্রমণের শিকার। শোষণের মাত্রা অতীতের সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ধনী-দরিদ্রে বৈষম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙেছে। এর প্রতিবিধান কি শুধু ভোট দিয়ে সরকার বদলে হবে?

না কি সংগ্রামী বামপন্থাকে, শ্রেণিসংগ্রামকে শক্তিশালী করা এবং শেষিত মানুষের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনই তা প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায়? মানুষগুলি কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন কোনও আহ্বান শুনলেন না।

আর কী বললেন ব্রিগেডে নেতারা? বললেন, বাংলায় তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে। দিল্লি থেকে বিজেপিকে হটাতে পারলে বাংলা থেকে তৃণমূলকে ঠেলে ফেলে দেওয়াটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। বললেন, ফিরে গিয়ে নিজের নিজের বুথে ব্যারিকেড গড়ে তোলো।

পাড়া নয়, কর্মক্ষেত্র নয়, কলকারখানা নয়, ব্যারিকেড শুধু বুথে বুথেই গড়ে তুলতে বললেন নেতারা। অর্থাৎ সেই ক্ষমতায় ফেরার লোভ দেখানো। বামপন্থী মানুষের সমস্ত আবেগ, তেজ, স্পর্ধাকে শুধুই ভোটের বাক্সের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া।

এই যে কর্মীদের সামনে বারে বারে ঘোষণা করা, তৃণমূলকে ঠেলে ফেলে দেওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা— এর মূল ইঙ্গিত তো: এর পর আমরাই ক্ষমতাই ফিরছি। তাই আমাদের সঙ্গে থাকো। এই নিয়েই কি ফিরবেন বামপন্থায় বিশ্বাসী মানুষগুলি? যে ক্ষমতায় ফেরার গল্প সমাবেশে উপস্থিত মানুষগুলিকে শোনালেন নেতারা, সেই ক্ষমতায় তাঁরা তো কম দিন ছিলেন না। প্রায় সাড়ে তিন দশক। তার দ্বারা কি দেশে বামপন্থা শক্তিশালী হয়েছে? মানুষের দারিদ্র ঘুচেছে? শোষণমুক্তি হয়েছে? কিংবা শোষণমুক্তির লড়াই জোরদার হয়েছে? না কি বামপন্থার আলখাল্লা গায়ে দিয়ে যে শাসন তাঁরা জনগণের উপর কায়েম করেছিলেন তাকেই বামপন্থা, মার্ক্সবাদ, কমিউনিজ়ম হিসাবে দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে একতরফা প্রচার করার সুযোগ পেয়েছে প্রতিক্রিয়াশীলরা?

আজ আবার যে তাদের নেতারা সেই ক্ষমতায় ফেরার লোভ দেখাচ্ছেন, এর সঙ্গে দেশের শোষিত নিপীড়িত মানুষের, বামপন্থায় বিশ্বাস রাখা মানুষের স্বার্থের কী সম্পর্ক আছে? সম্পর্ক তো সেই নেতাদের, যাঁরা এমএলএ–এমপি–মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার সুখটাই শুধু ভোগ করতে চান।

সমরেন্দ্র প্রতিহার

কলকাতা–৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Academics Education Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE