Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: রাগে রস সঞ্চার

বিলাসখানি টোড়ী বা তোড়ি রাগে পণ্ডিতজির গুরুভাই উস্তাদ আলি আকবর খানের সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দির স্বরসঙ্গতির রকমফের নিয়ে শ্রীগুপ্ত যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেই প্রশ্নেই লুকিয়ে আছে রাগবিদ্যার জাদু।

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

পণ্ডিত রবিশঙ্করের জন্মশতবর্ষে সঙ্গীত আলোচক নীলাক্ষ গুপ্ত পণ্ডিতজির সঙ্গীত ভাবনা প্রসঙ্গে (‘তিনি ও তাঁর সঙ্গীত’, ২০-৪) লিখেছেন, ‘‘সঙ্গীত বিষয়ে পণ্ডিতজির জ্ঞানের সূচনা হয়েছিল তাঁর গুরুর প্রশিক্ষণে, আর তার পাশাপাশি সঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর অধ্যয়নে এবং সঙ্গীতের ইতিহাস চর্চায়।’’ শ্রীগুপ্তর মতে, ওই ত্রিবেণী ধারায় রবিশঙ্করের রাগ রূপায়ণে অন্তরের ধ্বনি ধ্বনিত হয়েছিল। এ কথা বলার পরই তিনি লেখেন, ‘‘...বিশাল এবং রীতিমতো সুনির্দিষ্ট কাঠামোয় এতখানি স্বতন্ত্র শৈলী এবং ব্যক্তিগত ভাবনার প্রয়োগ কী ভাবে সম্ভব হতে পারে?’’ উত্তর, ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত বা হিন্দুস্থানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কাঠামো নির্দিষ্ট হলেও, সেখানে শিল্পীর ভাবাবেগ ও অনুভূতিকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। তাই, একই রাগ আমরা ভিন্ন ভিন্ন শিল্পীর কাছে বার বার শুনি। কখনও একই শিল্পীর পরিবেশিত রাগ ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভিন্ন আমেজ তৈরি করে। তবু তো পুরনো হয় না। কেন? শুনতে ভাল লাগে— শুধু সে জন্য নয়। শিক্ষিত কান, রসিক জন দেখতে চায়— শিল্পী কী রঙে রাগকে দেখেছেন। যাঁরা সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যেই রাগে রসসঞ্চার করেন তাঁরাই রবিশঙ্কর হয়ে যান। এবং এখানেই রাগবিদ্যার প্রাণশক্তি।

প্রাচীনেরা রাগ-রাগিণীকে শুধু স্বর-শ্রুতির কাঠামোয় বেঁধে রাখেননি। পণ্ডিত রবিশঙ্করও তাঁর ‘রাগ অনুরাগ’ বইয়ে জানিয়েছেন, ‘‘...একটা রাগ আমার কাছে একটা মানুষের মতন।... রাগ তো কাঠামোর বিচারে একটা মাধ্যম মাত্র। তার মধ্যে প্রাণ দেওয়াই শিল্পীর কাজ।’’ তাই, বিলাসখানি টোড়ী বা তোড়ি রাগে পণ্ডিতজির গুরুভাই উস্তাদ আলি আকবর খানের সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দির স্বরসঙ্গতির রকমফের নিয়ে শ্রীগুপ্ত যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেই প্রশ্নেই লুকিয়ে আছে রাগবিদ্যার জাদু।

সে দিন এ প্রসঙ্গে পণ্ডিতজি প্রশ্নকারী নীলাক্ষ গুপ্তকে কী উত্তর দিয়েছিলেন, তা লেখায় নেই। তবে, বিলাসখানির যুগলবন্দি বাজানোর সময় পণ্ডিতজি কোমল নি-কে গ্রহস্বর হিসাবে ব্যবহার করেছেন আর উস্তাদজি কোমল ধৈবত স্বরকে গ্রহস্বর হিসাবে ব্যবহার করেছেন, আর তাই যুগলবন্দি জমে উঠছে।

রাগ-রাগিণী পরিবেশনে আগে গ্রহস্বরের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। এখন যাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীতের কোর্স করেন, তাঁরা থিয়োরিতে গ্রহস্বরের সংজ্ঞাটুকু পড়েন। দেখেছি, ব্যবহার জানেন না। গ্রহস্বর সম্বন্ধে সঙ্গীতশাস্ত্রী সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর মতামত মনে পড়ে। নীলাক্ষ গুপ্তও লিখেছেন, তিনি সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর পথনির্দেশ মেনে চলেন।

সেই সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘‘তবে প্রাচীন শাস্ত্রের কোনো কোনো পরিভাষা এবং নীতি এখনো হিন্দুস্তানী সঙ্গীতে যথাযথভাবে প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া যায়, কিন্তু সে রকম প্রয়োগ সচরাচর করতে দেখা যায় না। গ্রহ, ন্যাস আর অংশ শব্দ তিনটির কথা বিদ্যালয় পাঠ্য বই-এ আছে, কিন্তু রাগ বিচারের সময় এইগুলিকে কিভাবে কাদে লাগানো যায় তার স্পষ্ট নির্দেশ নেই।... আজকাল যে কোনো গুণী আলাপ করবার শুরুতেই সা-কে অবলম্বন করেন, কিন্তু মাত্র কিছুকাল পূর্বে যখন সেনী ঘরাণার এবং অন্যান্য ঘরাণার দিকপাল গোছের গুণীরা বেঁচেছিলেন তখন এ রকমটা দেখা যায়নি।’’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রবিশঙ্কর এবং আলি আকবর দু’জনেই তো মূলত সেনী ঘরানার বাহক। কেননা, তাঁদের গুরু আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন তানসেনের বংশধর রামপুরের ধ্রুপদী-বীণাকার উজির খাঁ-র শিষ্য।

প্রসঙ্গত, বিলাসখানি তোড়ি রাগটি তানসেনের ছেলে বিলাস খাঁ তাঁর বাবার মৃত্যু শয্যার পাশে বসে প্রথম গেয়েছিলেন। অর্থাৎ রাগটি তানসেনের ছেলে বিলাস খাঁর তৈরি। প্রচলিত বিলাসখানি-র সব স্বরগুলিই কোমল। কিন্তু এর বাইরেও বিলাসখানি-র রাগরূপ আছে। কাশীর ধ্রুপদী হরিনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের (ইনি উস্তাদ উজির খাঁ-র কাছেও ধ্রুপদ শিক্ষা করেছিলেন) ‘প্রাচীন ধ্রুপদ স্বরলিপি’তে (১৩৪১ সাল) শুদ্ধ নি যুক্ত বিলাসখানি-র একটি করণ অঙ্গের চৌতাল আছে। চৌতালটির রচয়িতা বিলাস খাঁ স্বয়ং।

এ ছাড়া গুরুমুখে শুনেছি, কখনও কখনও বিলাসখানিতে দুই নিখাদেরও ব্যবহার হত। রাগটির সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং কী কী স্বরে এবং বিন্যাসে রাগটি গাইতেন, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

তবে এ সব রাগবিদ্যা চর্চার ক্ষেত্রে গতিময়তার চিহ্ন। কালের কলতানে রাগ-রাগিণীর বিবর্তিত ধ্বনি।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া

প্রচার হচ্ছে

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের দিন ভোট শেষ হওয়ার সময় থেকে দু’দিন আগে পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হওয়ার কথা। অনেক আগে যখন এক দফায় নির্বাচন হত, যখন আমাদের জীবনে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের এত রমরমা চালু হয়নি। তখনই একমাত্র এই নিয়ম বোধ হয় সঠিক ভাবে মানা হত। কিন্তু এখন ভোটের দফা অনেক বেড়েছে, আর প্রতি ঘরে ঘরে টেলিভিশনের দৌলতে ভোটের দিনেও প্রচার করা হচ্ছে। ভোটের দিনেও রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা, যে জেলায় ভোট হচ্ছে না, সেখানে সারা দিন নির্বাচনী সভা করে ভোটের প্রচার করেন আর বিভিন্ন টিভি চ্যানেল সেগুলি অবিরত দেখিয়ে যায়। এখন টিভি প্রায় প্রতি ঘরেই থাকার ফলে, যে যে জেলায় ভোট হচ্ছে সেখানকার ভোটারদের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। অন্তত এই নিয়ম করা দরকার: ভোটের সব দফার দু’দিন আগে প্রচার বন্ধের নিয়ম অনুযায়ী, অন্য জেলায় রাজনৈতিক জনসভার সরাসরি প্রচার চ্যানেলগুলো বন্ধ করুক।

নির্মল মৌলিক

কলকাতা-৮৪

আশ্চর্য গল্প

‘বুথে হাতি’ (১৮-৪) চিঠিটি পড়ে পুরনো দিনের নির্বাচন পরিবেশ কেমন ছিল, জানলাম। আজও বহরমপুর শহরের প্রবীণ মানুষের মুখে মুখে চর্চিত একটি ঘটনার কথা বলি। ১৯৭১। লোকসভার নির্বাচন। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন দুই নামী মানুষ। কংগ্রেসের হয়ে, পণ্ডিত রেজাউল করিম। অন্য দিকে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী, আরএসপি-র ত্রিদিব চৌধুরী। ভোটপ্রচার তুঙ্গে।

বহরমপুরে কংগ্রেসের নির্বাচনী সভা চলছে। বিশিষ্ট নেতারা মঞ্চে আসীন। কংগ্রেসের নানা ভাল কাজের বর্ণনা এবং প্রার্থী রেজাউল করিমের চরিত্রের গুণাবলি পরিবেশিত হল। এর পর বক্তব্য পেশ করার ডাক পড়ল, রেজাউল করিমের।

মঞ্চে উঠে ‘মা-বোন, বাবা সকল’ বলে সম্বোধন করার পর বললেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে ঢাকু (ত্রিদিব চৌধুরীর ডাক নাম)। ও বড় ভাল ছেলে। পরিশ্রমী, সৎ, নিষ্ঠাবান। দেশের জন্য ওর অনেক কাজ আছে। আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমার খুব স্নেহের এবং কাছের...।’’ একনাগাড়ে ত্রিদিব চৌধুরী সম্পর্কে প্রশংসা করলেন। পিছনে যাঁরা বসেছিলেন, উসখুস করতে লাগলেন। করিমসাহেব নিজের কথা কিছু বললেন না।

তিনি মঞ্চ থেকে নেমে আসার পর নেতারা বললেন, আপনি এ কী করলেন! আপনাকে তো ত্রিদিব চৌধুরীর বিরুদ্ধে বলতে হবে। ‘‘না, বাপু, আমি কারও বিরুদ্ধে মিছিমিছি কুৎসা করতে পারব না। খারাপ কথা বলতে পারব না।’’

সে বছর ত্রিদিব চৌধুরী জয়ী হয়েছিলেন। রেজাউল করিম হেরেছিলেন ভোটে। কিন্তু তাঁর রুচিবোধ, মহত্ত্ব আজও মানুষের মন জয় করে আছে।

দীপক বিশ্বাস

ইন্দ্রপ্রস্থ, খাগড়া, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

• ‘অশোক মিত্র স্মরণে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (কলকাতার কড়চা, পৃ ৪, ২৯-৪) উল্লেখিত সভাটি অনুষ্ঠিত হবে ২ মে সন্ধে ৬টায় রোটারি সদনে।

• ‘চারমূর্তি (বহরমপুর)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (দিল্লির দৌড়/রাজ্য, পৃ ৫, ২৮-৪) লোকসভা ভোটের তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকারের ‘মাইনাস’ হিসেব ‘অধীর চৌধুরীর প্রাক্তন সদস্য’ লেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উনি অধীর চৌধুরীর প্রাক্তন অনুগামী।

অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ravi Shankar Musician
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE