Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: কথায়, রেখায় ছবি

তাঁর শিল্পীমানসের এই বিশেষ দিকটি কিন্তু তাঁর উপন্যাসের নিবিড় পাঠেও ধরা পড়ে— ‘কীর্তিহাটের কড়চা’ উপন্যাসে সুরেশ্বর তার পারিবারিক ইতিহাসের আলেখ্য রচনা করে চলে ছবির পর ছবি এঁকে।

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১

‘ছবি আঁকতেন কাঠের ক্যানভাসে’ (রবিবাসরীয়, ২১-৪) পড়ে কিছু কথা মনে হল। তারাশঙ্করের গল্প-উপন্যাসে বেদে, কাহার, বাউল-কবিয়াল সম্প্রদায়ের বিচিত্র লোকগানের সম্ভার, এবং তাঁর নিজের লেখা গান নিয়ে আলোচনা হয়েছে অল্পবিস্তর; কিন্তু কারুশিল্পের প্রতিও এই মহান সাহিত্যিকের অনুরাগ যে কম ছিল না, সে কথা প্রায় অনালোচিত থেকে গিয়েছে।

তাঁর শিল্পীমানসের এই বিশেষ দিকটি কিন্তু তাঁর উপন্যাসের নিবিড় পাঠেও ধরা পড়ে— ‘কীর্তিহাটের কড়চা’ উপন্যাসে সুরেশ্বর তার পারিবারিক ইতিহাসের আলেখ্য রচনা করে চলে ছবির পর ছবি এঁকে। এ সব ছবি শুধুই একটি জমিদার বাড়ির বংশানুক্রমিক ইতিহাসের চিত্ররূপায়ণ নয়, এর মধ্যে ধরা দেয় বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন।

সুরেশ্বর ও সুলতার কথোপকথনের মাধ্যমে তারাশঙ্কর যে ভাবে এক-একটি ছবির নান্দনিক ও বিষয়গত আবেদনকে জীবন্ত করেছেন, শিল্পচর্চায় অনভিজ্ঞ হলে তা সম্ভব হত বলে মনে হয় না।

তারাশঙ্কর প্রখর গ্রীষ্মে একটি শুকনো গাছের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার মধ্যে ভাস্কর্যের রূপ অনুসন্ধান করতেন বলে জানিয়েছেন লেখক। ঠিক এ রকমই একটি অনুভূতির কথা জানা যায় ‘অরণ্য-বহ্নি’ উপন্যাসের কথকের জবানিতে।

সাঁওতাল পরগনার এক বাংলোয় রাত কাটাতে গিয়ে একটা গাছের মধ্যে তিনি আবিষ্কার করেন বিদ্রোহী নেতা সিধুর অবয়ব। এর পর সাঁওতাল বিদ্রোহের না-বলা কাহিনি খুঁজে পেতে কথক পৌঁছে যান এক অখ্যাত গ্রামীণ পটুয়া নয়ন পালের কাছে। তাঁর পটচিত্রে আর পাঁচালি-গানে মিলেমিশে যায় লোকশিল্প আর প্রথাগত ইতিহাসপাঠের বাইরে গড়ে ওঠা এক নতুন অন্বেষণের পথ।

শোনা যায় যামিনী রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় তাঁকে ছবির জগতের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। তারাশঙ্করকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রে তাঁর আঁকা বেশ কিছু ছবি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, তাতে অবশ্য যামিনী রায়ের প্রভাব তেমন চোখে পড়েনি।

চারকোল আর গাঢ় রঙের ব্যবহারে এক গূঢ়, মনস্তাত্বিক অভিব্যক্তি ধরা পড়ে তাঁর ছবিতে— তাঁর উপন্যাসের গভীর চরিত্রগুলির মতো। অন্য দিকে তাঁর হাতে গড়া কাঠের কাজ দেখে মনে পড়ে তাঁর রচনার বিশাল পটভূমি— রুক্ষ, আদিম অথচ জীবন্ত আর মানবিক।

প্রশ্ন হল, এগুলো কি শুধুই বিক্ষিপ্ত উদাহরণ, না কি এর মধ্যে নান্দনিকতার বৃহত্তর কোনও সত্য লুকিয়ে আছে? ইউরোপীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় সহযোগী শিল্পের ধারণা যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। Surrealism বা Impressionism-এর মতো শিল্পকলাবাদ সেখানে সাহিত্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বলেই ধরা হয়। একাধারে চিত্রকর-লেখক বা কবি-অভিনেতা যদি কেউ হন, তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষকদের উৎসাহের অভাব থাকে না বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে।

অথচ আমাদের বাংলায় এক লেখক যদি ছবি আঁকেন বা হাতে তুলে নেন ছেনি-হাতুড়ি, গায়ক যদি কলম ধরেন বা অভিনেতা মন দেন দুর্লভ শিল্পসামগ্রী সংগ্রহে— সে কাজ লোকসমাজে প্রায় অবহেলিত থেকে যায়, নয়তো স্থান পায় তাঁর স্মৃতিচারণা বা জীবনীগ্রন্থে উল্লেখমাত্র হয়ে। রবীন্দ্রনাথ বা সত্যজিৎ রায়ের মতো দু’একটি নাম হয়তো উজ্জ্বল ব্যতিক্রম— এ ছাড়া আর কত জন স্রষ্টার বিচিত্র, বহুমুখী প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়নে আমরা মন দিয়েছি?

আমাদের শিল্পসাহিত্যের পাঠ তাই স্বাধীনতার এত বছর পরেও প্রথাগত তাত্ত্বিক আলোচনার বাইরে বেরোতে পারেনি অনেক ক্ষেত্রেই। শিল্পের নানা শাখার মধ্যে যে আন্তঃসংযোগ, তাকে উপলব্ধি না করতে পারলে জীবন, সমাজ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মেলবন্ধন গড়ে তোলার কাজ যে অসম্পূর্ণ থেকে যায়— সে-কথা আমরা অনুভব করব আর কত দিনে?

পৃথা কুণ্ডু

কলকাতা-৩৫

চলেছে যুদ্ধে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বিশ্বের একাধিক দেশ যে ভাবে মারণখেলায় লিপ্ত হয়েছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, এ বার ভারতও সে রকম এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সম্মুখীন। নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে যে ভাবে ক্রমাগত ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গ উঠলেই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠছে, তাতে গণতান্ত্রিক ভারতের মূল সুরটি উধাও হয়ে, একনায়কতন্ত্রী সুর বেজে উঠছে।

প্রধানমন্ত্রী কি জানেন না, ভারতের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকে শক্তিশালী করতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন কী? জানেন নিশ্চয়ই, তবে তার থেকেও বেশি জানেন, নির্বাচনী দেবতাকে তুষ্ট করতে কোন ফুল বেশি কাজে দেয়। তিনি যেমন পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নিজেকে প্রবল প্রতাপান্বিত প্রমাণে সচেষ্ট, তেমনই অমিত শাহ বা যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতারা ক্রমাগত রাষ্ট্রবাদ, যুদ্ধ আর হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের কথা তুলে হিন্দুস্থান জয়ের নকশা প্রস্তুত করে ফেলেছেন।

একদা যাঁর নামের সঙ্গে যুদ্ধবাজ শব্দটি লাগসই মনে হত, সেই উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, যুদ্ধে এক পক্ষের পরাজয় ঘটে ঠিকই, কিন্তু কোনও পক্ষই বিজয়ী হয় না। তাঁর কথার সূত্র ধরেই মনে একটা প্রশ্ন জাগছে, যুদ্ধ লাগলে পাকিস্তান হয়তো পরাজিত হবে, কিন্তু ভারত জিতবে কি?

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-৩৪

ব্যাঙ্কে বামপন্থী

লোপামুদ্রা মিত্র অনবদ্য নিবন্ধ লিখেছেন (‘গানও দাঁড়িয়ে অাছে বেয়নেটের সামনে’, ২০-৪)। তিনি লিখেছেন, এক কালে ব্যাঙ্ক ইউনিয়নে বামপন্থী শক্তি প্রধান ছিল। এখন আর আছে কি না, জানেন না বা অনুভবে ধরা দেয় না।

শৈশব থেকে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে এবং বর্তমানেও সমান সক্রিয় থাকার সুবাদে দায়িত্ব নিয়ে জানাই, সব ভারতীয় স্তরে আজও ব্যাঙ্ক ইউনিয়নে একমাত্র বামপন্থীদেরই একচ্ছত্র আধিপত্য। কেবল ব্যাঙ্ক ইউনিয়নই নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে এখনও বামপন্থী শক্তিগুলির প্রাধান্য।

তবে এ-ও ঠিক, আজ আর বামপন্থী শক্তিগুলি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কোনও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে না। বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন এখন কেবল বাৎসরিক পার্বণ বন্‌ধ পালন। সেই পবিত্র দায় ও কর্তব্য সেরে তাঁরা পাপক্ষালন করেন, ‘আসছে বছর আবার হবে’ বলে যে যাঁর নীড়ে ফিরে যান।

তাপস কুমার চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-৩০

কার ভূমিকা

পণ্ডিত রবিশঙ্করের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধেয় শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অন্য কিছুর খোঁজে?’ (৭-৪) লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। লেখক একটি বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন। সেটি হল, চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক ও চলচ্চিত্র পরিচালকের মধ্যে, কার ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘জেনেসিস’ নির্মাণকালে ক্ষুব্ধ পণ্ডিতজি মৃণাল সেনকে মাঝ রাতে ফোন করে যা বলেছিলেন (‘‘আমি কম্পোজ়র। আমার কম্পোজ়িশন-এ হাত দেওয়ার কোন অধিকার আপনার নেই।’’), সেটি কি যুক্তিসঙ্গত?

আমার মনে হয়, চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিচালকের স্বাধীনতা, সিজার পত্নীর সতীত্বের মতোই, সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করেছিলেন বলেই বোধ হয় সত্যজিৎ তিন দিকপাল যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পীর (রবিশঙ্কর, বিলায়েত খাঁ ও আলি আকবর) সঙ্গে কাজ করেও ‘তিন কন্যা’ থেকে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব নিজেই নিয়েছিলেন।

অবশ্য সেটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর সঙ্গীতে গভীর পাণ্ডিত্য ও প্রতিভার জন্য। দূরদর্শনের সাক্ষাৎকারে হয়তো স্বভাবসুলভ শিষ্টতাবোধ থেকেই সত্যজিৎ এ কথা বলেননি।

অঞ্জন মজুমদার

কলকাতা-৮৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘লন্ডনে জিৎ-কোয়েলের প্রেমের শুরু’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (আনন্দ প্লাস, ২৫-৪) ছবির নাম ভুল প্রকাশিত হয়েছে। ছবিটির নাম ‘শেষ থেকে শুরু’। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Novelist Tarasankar Bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy