Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Cricket

সম্পাদক সমীপেষু: সাম্যের মর্যাদা

সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২২ সালের লিঙ্গবৈষম্য সূচকে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩৫। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও লিঙ্গবৈষম্যের এমন করুণ চিত্র সত্যিই চিন্তার কারণ।

ভারতের লিঙ্গবৈষম্য শুধুমাত্র ক্রিকেটের মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।

ভারতের লিঙ্গবৈষম্য শুধুমাত্র ক্রিকেটের মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৫
Share: Save:

বিসিসিআই-এর মহিলা ক্রিকেটারদের পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান বেতন প্রদান সত্যিই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। যে মহিলা খেলোয়াড়রা এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সাদা বলের ম্যাচের জন্য ১ লক্ষ এবং একটি টেস্ট ম্যাচের জন্য ৪ লক্ষ টাকা পেতেন, তাঁরা এখন টেস্ট ম্যাচের জন্য ১৫ লক্ষ, এক দিনের ম্যাচের জন্য ৬ লক্ষ এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ৩ লক্ষ টাকা করে পাবেন। বিসিসিআই-এর এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটারদের মধ্যে যেমন উৎসাহ সৃষ্টি করবে, ঠিক তেমন ভাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাঁদের পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিতে আকৃষ্ট করবে। তবে শুধুমাত্র বেতনের পরিমাণ সমান করলেই চলবে না। তার সঙ্গে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের আন্তর্জাতিক খেলার সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি পায়, সেই দিকেও বিসিসিআই-কে নজর দিতে হবে।

দুর্ভাগ্যবশত, ভারতের লিঙ্গবৈষম্য শুধুমাত্র ক্রিকেটের মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এ দেশে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেতনের পরিমাণ কমই শুধু নয়, নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের শতকরা পরিমাণও যথেষ্ট কম। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২২ সালের লিঙ্গবৈষম্য সূচকে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩৫। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও লিঙ্গবৈষম্যের এমন করুণ চিত্র সত্যিই চিন্তার কারণ। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের দ্বারা সমাজে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে চলেছে। তা সত্ত্বেও আজও অনেকে নারীদের পুরুষের সমান ক্ষমতাসম্পন্ন বলে মর্যাদা দিতে দ্বিধাবোধ করেন। তাই সবার আগে আমাদের নিজেদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। একমাত্র তা হলেই সমকাজে সমবেতন-এর প্রচেষ্টা সাফল্য পাবে। বাইশ গজের ভিতরে, বাইশ গজের বাইরেও।

দীপেন্দু দাস, রানাঘাট, নদিয়া

অবাস্তব

‘স্বীকৃতি’ (২-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি সমতার জয়ধ্বনি করলেও বাস্তবতার বিচারে কৃত্রিম ও খানিক অবাস্তবও বটে। ক্রীড়া জগৎ সরকারি দফতরের চাকরি নয়, বা পেশার দিক থেকে শ্রমিক, করণিক ও ক্রীড়াবিদ— এক পর্যায়ভুক্ত নন, যেখানে সমকাজে সমবেতনের ন্যায্যতা থাকে। আমেরিকার লন টেনিস তারকা জিমি কোনর্স ঘোষণা করেছিলেন, তিনি তাঁর ফর্মের সব চাইতে খারাপ দিনেও সমসাময়িক মহিলা খেলোয়াড়দের তাঁদের সেরা দিনের ফর্মে হেলায় হারাতে পারেন। এই ঘোষণা ভঙ্গির দিক থেকে উদ্ধত হলেও, বক্তব্যে সত্যের মিশেল ছিল। একই খেলা নারী-পুরুষ উভয়ে খেললেও, তাঁদের খেলার প্রতি দর্শকের আকর্ষণ পৃথক হয়। এবং সেই অনুযায়ী প্রচার, ব্যবসাও ভিন্ন হয়, যা থেকে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয়। মুষ্টিযোদ্ধা টাইসন, ফোরম্যান, ফ্রেজ়িয়ার প্রমুখ ম্যাচ ফি বেশি পেয়েছেন, কারণ তাঁদের দর্শক বা বিজ্ঞাপন আকর্ষণের ক্ষমতা সমসাময়িক মহিলা খেলোয়াড়দের তুলনায় বেশি ছিল।

সমান বেতনের ধারণা দিয়ে বিচারই হয়তো নিরর্থক। নাদিয়া কোমানচি যে সমসাময়িক জিমন্যাস্টদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মান পেয়ে থাকেন, তাতে পুরুষ জিমন্যাস্টদের খাটো করা হয় না। আবার ববি ফিশার দাবায়, বা বুবকা পোল ভল্টে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেলে মহিলা খেলোয়াড়দের সম্মানহানি হয় না। কারণ এই মূল্য লিঙ্গ পরিচয় দিয়ে ঠিক হয় না। এর মাপকাঠি ক্রীড়া নৈপুণ্য ও বাণিজ্য।

বিরাট কোহলি যে বিপুল টাকা পারিশ্রমিক হিসাবে পান, তা ‘সমখেলায় সমপারিশ্রমিক’— এই গাণিতিক নিয়মে দেশে প্রথম শ্রেণির কোনও মহিলা ক্রিকেটারের প্রাপ্য বলে গণ্য করা কঠিন, যদি না মহিলা ক্রিকেটের বাণিজ্যিক দিকটি পুরুষদের ক্রিকেটের সমান হয়। সেই বিবেচনায় মহিলারা সফল কি না, তার পরখ হোক মহিলা ক্রিকেট বোর্ড গঠন ও তার আয়ের ক্ষমতা বিচার করে। তা এখনও অনেক দূরে, কিন্তু অলীক তো নয়।

মানস দেব, কলকাতা-৩৬

অলোকসামান্য

‘আলোর পথযাত্রী’ (৩০-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয় সম্পর্কে এই পত্র। নিবেদিতার অন্তরাত্মা সম্পৃক্ত হয়েছিল ভারতবর্ষের আবহমান সংস্কৃতিতে। কত ত্যাগ ও সাধনা করলে এক দেশে জন্মগ্রহণ করে অন্য দেশের সমাজ, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, সঙ্গীত, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের মর্ম অনুধাবন করা যায়, তার উদাহরণ তিনি। সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে— “কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা আক্ষরিক অর্থেই অলোকসামান্য, অনেক উৎসব পালন সত্ত্বেও যাঁর যথার্থ বিভা হয়তো সামান্য মানুষের কাছে শেষ পর্যন্ত পৌঁছতেও পারে না। আইরিশ কন্যা মার্গারেট নোবল ছিলেন তেমনই এক জন।”

নিবেদিতা ভারতে আসার পরে দরিদ্র মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা দেখেছেন, সংস্পর্শে এসেছেন জগদীশচন্দ্র, অরবিন্দ, অবনীন্দ্রনাথের, রবীন্দ্রনাথের দীপ্তি তাঁকে আশ্চর্য করেছে। সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন শ্রীমা সারদাদেবীর। ভারতাত্মার গভীরতাকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন গুরু বিবেকানন্দের শিক্ষায়। ১৮৯৯ সালে এক চিঠিতে নিবেদিতা লিখেছেন, “ভারতমাতা আমাকে তাঁর আপন সন্তানের মতো গ্রহণ করে আমার কাছে তাঁর অবগুণ্ঠনমুক্ত রূপটি মেলে ধরেছেন। সাধারণ মানুষের জীবনের অংশভাগী হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কত যে দয়া করেছেন আমায়!”

ধর্মীয় মৌলবাদের বীজকে মহীরুহ তৈরি করে ক্ষমতা দখল করার ধারাবাহিক চক্রান্তের এই জটিল সময়ে প্রাত্যহিক কর্ম হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দের পাশে নিবেদিতাকে স্মরণ করা জরুরি। নিবেদিতা বলেছেন, পাশ্চাত্য সমাজের উন্নতির মাপকাঠি উদ্যম, পুঁথিগত শিক্ষা ও আর্থিক সচ্ছলতা। কিন্তু সভ্যতার তাৎপর্য অনুধাবন করলে বোঝা যায় যে, আত্মসংযম অভ্যাসই সভ্যতার ভিত্তি, যা মানুষকে পশুত্বের স্তর থেকে উন্নীত করে। সে দিক থেকে দেখলে ভারতের দরিদ্র, বস্তিবাসী মানুষও পাশ্চাত্যের দরিদ্র মানুষের থেকে অনেক এগিয়ে আছে। আত্মসংযম নষ্ট হচ্ছে বলেই ধর্মীয় হানাহানি ক্রমাগত বাড়ছে, এ কথাও বলেছেন নিবেদিতা। আমাদের দেশের একাগ্রতা ও পবিত্রতার মূল্য সম্পর্কে নিবেদিতা লিখেছিলেন যে, ভারতের ধ্যান বা একাগ্রতার কথা উঠলে বলতে হয়— এ দেশে মানুষ শিখতে আসে যে, পবিত্রতার অন্তর্নিহিত শক্তি এখানেই রয়েছে, আর সে কথা জানার পর শ্রদ্ধা নিবেদনের একটাই উপায়— মৌন থাকা। যখন সব স্বার্থ, ক্ষুদ্রতা, লোভ, নিঃশেষ হয়ে যায়, একমাত্র তখনই মানুষ নিজ জীবনাদর্শের বাণীমূর্তি হয়ে ওঠে, তখন শেখা যায় ত্যাগ কাকে বলে, ভক্তিই বা কী, এবং এই ব্যাপারেও ভারতবর্ষের স্থান সকলের উপরে।

এখন যাঁরা দেশের মাথা, তাঁরা অনেকেই মৌন থাকার বদলে প্রায়শই বিষবাক্য ছুড়ছেন। যা দেখেশুনে সাধারণ মানুষ অস্থির হয়ে উঠছেন। কেবল জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নয়, নিরন্তর নিবেদিতার জীবন ও বাণীর চর্চা এবং অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আমরা আলোর পথের অভিযাত্রী হয়ে উঠতে পারি।

পঙ্কজ পাঠক, শ্রীপল্লি, পূর্ব বর্ধমান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India BCCI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE