করোনার থাবা সারা বিশ্ব জুড়ে ক্রমশই চওড়া হচ্ছে আর আমার মতো অনেকেই পরিবার পরিজনের থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বসে ঘরে ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছি।
আমি ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে কানাডার লন্ডন শহরে আসি, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অন্টারিও-র কম্পিউটার সায়েন্স মাস্টার্স স্টুডেন্ট হিসেবে। এমনিতে লন্ডন একটি খুবই সুন্দর এবং ছোট শহর। জানুয়ারি মাসের শুরুতে চিনে যখন প্রথম করোনার খবর শুনতে পেয়েছিলাম তখন এখানে পরিস্থিতি মোটের উপর স্বাভাবিকই ছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উইন্টার টার্ম’ তখন সবে শুরু হয়েছে। রিসার্চ ল্যাব-এ যদিও দেখতাম কয়েকজন চিনা ছাত্রকে মুখে মাস্ক পরে ল্যাবে আসতে। সত্যি বলতে কেউই আমরা এটাকে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিমারি ঘোষণা করার দু’দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন দেখলাম।
এক সপ্তাহের নোটিশে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কিছু অনলাইন হয়ে গেল। আমাদের রিসার্চ ল্যাবও বন্ধ হয়ে গেল। হঠাৎ করেই জনবহুল মিডলসেক্স কলেজের সামনেটা পুরো খালি হয়ে গেল। আমি এবং আমার বন্ধু দেশে ফেরার জন্য টিকিট কাটলাম ২২ মার্চের এয়ার ইন্ডিয়ার। কিন্তু অদৃষ্ট এমনই যে ওই দিন থেকেই আমার দেশ নিজের নাগরিকের জন্যও সীমানা বন্ধ করে দিল। বাড়ি ফিরব বলে ব্যাগ গুছানো পর্যন্ত সব কিছুই হয়ে গেল, কিন্তু ফেরাটা আর হল না। হঠাৎ করে এতগুলো টাকা এয়ারলাইন্সের কাছে আটকে যাওয়ায় প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্যেও পড়তে হল। এমনকী, এক মাসের ঘরভাড়াও দিতে পারিনি আমরা। প্রবল উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে কেটেছে শুরুর দুই সপ্তাহ। প্রতিদিন ভাবতাম এই হয়তো বিমান পরিষেবা চালু হবে নাগরিকদের জন্য। একদিন তো ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপে জ্বরও এসে গিয়েছিল, ওয়েবসাইটে করোনার লক্ষণও পড়তে শুরু করেছিলাম।