Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আপসহীন ছিলেন

তথ্যের আলোকে সত্য আবিষ্কারের পথ থেকে কখনও সরে আসেননি দৃঢ়চেতা মানুষটি। 

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০০:২৪
ইতিহাসবিদ হরিশঙ্কর বাসুদেবন। —ফাইল চিত্র।

ইতিহাসবিদ হরিশঙ্কর বাসুদেবন। —ফাইল চিত্র।

মস্তিষ্ক ও মননের জগতে ইতিহাসবিদ হরিশঙ্কর বাসুদেবনের যুদ্ধ ছিল আপসহীন। করোনা মহামারির এই সঙ্কটকালে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃখ যন্ত্রণা উপলব্ধি করেছিলেন মর্মে মর্মে। তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রের গুদামে খাদ্যশস্য মজুত থাকবে অথচ গরিব মানুষ তা পাবেন না কেন?

মৃত্যুর মাত্র ১৭ দিন আগে, গত ২২ এপ্রিল একটি ওয়েবসাইটে তিনি এই অতিমারির পরস্থিতিতে মানুষের খেতে না-পাওয়ার মূল সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। স্পষ্ট লিখেছিলেন, “... কে পাবেন, কেন পাবেন-এর মতো তুচ্ছ কিছু প্রশ্ন অনেক সময় প্রাপ্তির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সেই সব দূরে সরিয়ে আগামী দিনে মানুষকে বাঁচাতে হবে। ডাল-ভাতের মর্ম রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে।’’

এনসিইআরটি-র সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে অধ্যাপক বাসুদেবনের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের বিরোধ অজানা নয় অনেকেরই। তথ্যের আলোকে সত্য আবিষ্কারের পথ থেকে কখনও সরে আসেননি দৃঢ়চেতা মানুষটি। আর নিজের মত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে কখনওই পিছপা হতেন না।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

রণবীর সমাদ্দারের সাক্ষাৎকারের (‘রাষ্ট্রের পাশে মানুষকে চাই’, ১২-৫) প্রেক্ষিতে এই চিঠি। উনি করোনা-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে অত্যন্ত জরুরি একটা বিষয়ের অবতারণা করেছেন। এখন স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে কাজ করছেন। অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন সাধারণ মানুষ, যাঁরা প্রচারের আড়ালে আছেন কিন্তু অসাধারণ কাজ করে চলেছেন। এঁদের অধিকাংশের সরকারি শংসাপত্র থাকলেও, কোনও সরকারি সহায়তা নেই। রাজনৈতিক পরিচয় না থাকার ফলে, কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত এঁদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তবু এঁরা পোলিয়ো টিকাকরণ থেকে শুরু করে, সুদূর গ্রামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতার কাজ করেন। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সম্পর্কে আমাদের কিছু বস্তাপচা ধারণা আছে। তৃণমূল স্তরে ছোট ছোট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিন্তু মানুষের কাছে সরাসরি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিন্তু দুর্ভাগা দেশে, ভোটের অঙ্ক এঁদের অঞ্চলভিত্তিক কাজকে কিছু দিনের মধ্যেই রাজনৈতিক ভাবে গ্রাস করে ফেলে। ব্যক্তিগত দুই-এক জনের প্রাণপাত করে গড়ে তোলা জনকল্যাণ প্রকল্পগুলির অকালে স্বর্গবাস হয়। সংবাদমাধ্যমে এঁদের কোনও প্রচার হয় না। আমি নিজে পৃথিবীবিখ্যাত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জড়িত থেকে ও বিশাল কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

কলকাতা বা শহরতলির পাড়ার ক্লাবগুলির সামাজিক কাজ এখন অনেকটাই সরকারি অনুদান নির্ভর। অথচ করোনা-পরবর্তী সময়ে, রণবীরবাবুর সুচিন্তিত মতামত অনুযায়ী, ছোট ছোট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সমিতি, বঙ্গীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির উর্ধ্বে উঠে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ন্যূনতম পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারে। সরকারি পরিকাঠামোর সঙ্গে বা পৃথক ভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতার আলো ছড়াতে পারে। আমরা গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা বলি। এঁরা বলেন গোষ্ঠী উত্তরণের কথা। সেই সম্মানটুকু এঁদের প্রাপ্য।

বিখ্যাত ইজ়রায়েলি ইতিহাসবিদ ইউভাল হারিরির বক্তব্য তর্জমা করে বলি, স্ব-উদ্বুদ্ধ ও সচেতন জনজাতি, একটি তথাকথিত শিক্ষিত ও অজ্ঞ নাগরিক সমাজের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী ও ক্ষমতাশালী হতে পারে।

পার্থ সরকার, কলকাতা-৩৩

সচেতনতার দায়

2 দেবাশিস ভট্টাচার্য ‘আমাদেরও কিছু করার আছে’ (৭-৫) শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, “পুলিশ দিয়ে কত দূর মানানো সম্ভব, সেটিও এক বড় সামাজিক প্রশ্ন। লকডাউনে কোথাও বজ্রআঁটুনি, কোথাও ফস্কা গেরোর উদাহরণ বিস্তর। তাই সবচেয়ে বড় হল আমাদের সচেতনতা। সেই বোধ আচ্ছন্ন থাকলে কোনও প্রশাসন, কোনও পুলিশ কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না।” সত্যি কি তা-ই?

সচেতনতার দায়ভার শুধু সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে হচ্ছে কেন? প্রশাসন সচেতন থাকলে সঠিক সময়ে আন্তর্জাতিক পথ রুদ্ধ করেই তো এই অতিমারি অনেকটা ঠেকানো যেত। প্রশাসন দীর্ঘ দিন লকডাউনে মানুষকে ঘরবন্দি থাকতে বললেও, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, রেশন ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছে কি? যদি প্রশাসন এই দায়িত্ব পালন করত, তা হলে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নেমে সবচেয়ে বড় সচেতনতার পরীক্ষা দিতে হত না। উল্টে, যে প্রশাসন রাস্তায় খড়ির গণ্ডি এঁকে জনসাধারণকে সচেতনতা শেখায়, সেই প্রশাসনই মদের দোকান খোলায় ছাড় দেয়, তার পর জনসাধারণের উপচে পড়া ভিড় দেখে নিষ্ক্রিয় থাকে!

দেবব্রত সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

রেশন পাবেন না?

যাঁদের ডিজিটাল কার্ড বা ফুড কুপন নেই, তাঁদের জন্যে খাদ্যসামগ্রীর স্পেশাল কুপনের ব্যবস্থা করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (‘খাদ্যসামগ্রীর স্পেশাল কুপন’, ১৩-৫)। খবরটা যখন পড়ছিলাম, ঠিক তখনই এক জন ভদ্রলোক এলেন সাহায্য চাইতে। সরকারি রেশন পাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বললেন, এখনও পর্যন্ত কিছুই পাননি।

আমার বাড়িতে যিনি ঠিকে কাজ করেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি পেয়েছেন? তিনি জানালেন, বিনামূল্যের রেশন তো পানইনি, উপরন্তু গত দু’বছর ধরে কোনও রেশন পাচ্ছেন না। বার বার রেশন ডিলারের কাছে দরবার করেও সুরাহা হয়নি। অথচ তাঁর কাছে কাগজের পুরনো রেশন কার্ড রয়েছে। মাস ছয়েক আগে ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্যে আবেদনও করেছেন, কিন্তু সেই কার্ড এখনও পাননি। তাঁর আধার কার্ড এবং প্যান কার্ডও রয়েছে। শুধু ভোটার কার্ড নেই। ওঁর আদি বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয়। বছর পঁচিশেক ধরে বারাসতে আছেন, ভোটার লিস্টে নাম তোলার জন্যে একাধিক বার আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত নাম ওঠেনি, তাই ভোটার কার্ডও পাননি।

খাদ্যসামগ্রীর স্পেশাল কুপনের জন্যে পুরনো রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড এবং আধার নম্বর সহ আবেদন করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। ওই মহিলার মতো লেখাপড়া না জানা হতদরিদ্র মানুষ, যাঁরা ভোটার কিংবা আধার কার্ড করাতে পারেননি, তাঁরা কি এই স্পেশাল কুপন এবং বিনামূল্যের খাদ্যসামগ্রী পাবেন না? তা হলে পুরনো রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছিল কিসের ভিত্তিতে?

তূর্য বাইন, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা

সম্মান দিন

কয়েক জন ডাক্তারবাবু করোনা-রোগীদের চিকিৎসা করতে ভয় পাচ্ছেন বলে সমালোচনা হচ্ছে। যাঁদের যথেষ্ট সুরক্ষা-সরঞ্জাম নেই, আবার রাজ্যের ‘প্রহার সংস্কৃতি’ বিষয়েও যাঁরা বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল, তাঁরা ভয় পাবেন না-ই বা কেন? নিজের জীবন বিপন্ন করে সেবাকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য একটা মানসিক অবস্থার প্রয়োজন, যা তিল তিল করে গড়ে তুলতে হয়। এর জন্য সেবা-ভোগী সমাজেরও একটা দায়বদ্ধতা থাকা উচিত নয় কি? সেনাবাহিনীর কাছে আমরা একটা বিশেষ সেবা দাবি করি বলেই তাঁদের প্রশিক্ষণ আলাদা, জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য আলাদা, ইত্যাদি। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা তো আর পাঁচটা পেশার মানুষের মতোই, জীবনের দৌড়ে ক্ষতবিক্ষত, তাঁদের অনেকেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ভোগেন। ওঁদের সমাজের এক বিকল্পহীন সত্তা হিসাবে স্বীকৃতি ও সম্মান দিন, সৈনিকদের মতো, তখন ওঁরাও সকলেই মানুষ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।

কাঞ্চন কুমার মাইতি, চড়কডাঙা, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Hari Vasudevan Letters To The Editor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy