বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেন মোদী। আশা করি, তিনি এ বার কিছু কাজ করবেন। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’— পুরনো হয়ে যাওয়া স্লোগানটি এ বার বাস্তবায়িত করবেন। নিয়ম করে সংসদে উপস্থিত থাকবেন, সাংবাদিক সম্মেলন করবেন, ২০১৪-য় ক্ষমতায় আসার আগে যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলি পূরণ করবেন। গত পাঁচ বছরে ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ, সেলফি তোলা, ২৫-৩০ বছর আগে গত হওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নামে গালিগালাজ, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য অনেক তো হল! এ বার একটু কাজে মন দিন।
প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-১২৬
কৃতিত্ব
সম্পাদকীয় ‘জয়’ (২৪-৫) পড়তে পড়তে আশা করেছিলাম, আজ অন্তত সারা বছরের অভাব অভিযোগ এড়িয়ে, বিজেপির জয়ের পিছনে কোন অভাবনীয় রহস্য কাজ করেছে তা বিশ্লেষণ হবে। কিন্তু পাঠককে হতাশ করে, সেই বিজেপির পাঁচ বছরের ‘অপশাসন’কে আরও এক বার ফ্ল্যাশব্যাকে তুলে ধরলেন। বালাকোটকে গগনচুম্বী সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি বলে এই জয়কে ঈষৎ বাঁকা চোখেও দেখালেন। কিন্তু মানুষ শুধু জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় উদ্গ্রীব হয়ে বিপুল ভোটে বিজেপিকে জয়ী করেছেন, এই ব্যাখ্যা অতিসরলীকরণ দোষে দুষ্ট। জনধন যোজনা, স্বচ্ছ ভারত, উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ, বেটি বচাও বেটি পড়াও— এগুলির মতো জনহিতকর প্রকল্পের কথা পত্রিকায় লেখা না থাকলেও মানুষের মনে গেঁথে আছে। শুধুমাত্র উগ্র জাতীয়তাবাদ ও অন্ধ পাকিস্তান-বিরোধিতাকে পুঁজি করে সমাজজীবনে ঝড় তোলা যায় না, একক ভাবে ৩০০-র বেশি আসন পাওয়া যায় না। ভারতের অগণিত মানুষ যখন মোদীর প্রতি তীব্র আস্থা রেখেছেন, তখন সম্পাদকীয় অভিমুখ সেই একই অনাস্থা দেখিয়েই চলবে? এক দিনের জন্যও কি কৃতিত্ব মেনে নেওয়া যেত না?
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
পাইয়ে দেওয়া
তৃণমূল টার্গেট করেছিল মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণিকে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী প্রভৃতি দিয়ে যাদের মন পাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। একটি শ্রেণিকে যথার্থ উন্নয়নের সারিতে নিয়ে আসার জন্য যা যা প্রয়োজন, সে দিকে নজর না দিয়ে, শুধু পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করা হয়েছে। উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তই যে সুশিক্ষা, সুসংস্কৃতি, যুক্তিবোধ— যা মানবসম্পদ গড়ে তোলে, সে দিকে নজর দেওয়া হয়নি। পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করলে, মানুষের সচেতনতা তৈরি করা যায় না। ফলে, সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের মতো ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধিগুলি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতাই তৈরি হতে পারেনি। যার পরিণামে বাংলা এখন ‘জয় শ্রীরাম’ উচ্চারণে উন্মুখ। যে দল ক্ষমতায় আসছে, তার রাজনৈতিক, সামাজিক দর্শনগুলি আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য, তা বিশ্লেষণ করে, ভেবে দেখার অভ্যাস এই রাজ্যে আজ প্রায় অবলুপ্ত। এই লুপ্তির সূত্রপাত পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে।
অনুরূপা সিনহা
ইমেল মারফত
বাঁচতে গেলে
ভোটের ফল প্রকাশ হতেই গেল-গেল রব চারিদিকে। আরে, এ কী মারাত্মক ভুল করে ফেলল জনগণ! বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে! কেউ জনগণকে অশিক্ষিত বলে গাল দিচ্ছে। কেউ আত্মঘাতী বলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আসলে, সাধারণ মানুষ বাস্তবটা একটু বেশিই বোঝেন। আর তাঁদের বাস্তবজ্ঞানই তাঁদের যে কোনও পটপরিবর্তনে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। ডুবন্ত মানুষ হাতের কাছে শক্ত ডাল পেলে আঁকড়ে ধরতে চাইবেই। সে তখন বিচার করে না, কারা প্রকৃত শিক্ষিত কিংবা কারা শিক্ষিতই নয়।
তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল জমি আন্দোলনের হাত ধরে। তাদের সঙ্গে আন্দোলনে বামপন্থী-অবামপন্থী অনেক দলই ছিল, যাদের আজ আর দেখা যায় না। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা গেল, পুরনো শাসকের সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। তা মারাত্মক রূপ পেল গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে। বিরোধী দলগুলি সব জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারল না, সাধারণ মানুষও তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলেন না। আর এ বিষয়ে একেবারেই নীরব হয়ে রইলেন দলের সর্বময় কর্ত্রী।
পাশাপাশি তৃণমূলের তৃণমূল স্তরের নেতাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার বিষয়টিও হয়ে উঠেছিল দৃষ্টিকটু। বলা বাহুল্য, সেই নেতাদেরও মৃদু ভর্ৎসনা ছাড়া সর্বময় কর্ত্রী কিছুই করেননি।
এই নির্বাচনের ক’দিন আগেই আমরা দেখেছি, যিনি কবি শঙ্খ ঘোষকে ব্যঙ্গ করেন, নির্বাচনে নকুলদানার সস্তা রাজনীতির আমদানি করে মানুষের বিরক্তির কারণ হন, তাঁকে কর্ত্রী অতিরিক্ত আরও দায়িত্ব দিয়ে অলিখিত ভাবে দলের সম্পদ বলেই ঘোষণা করলেন।
বিক্ষুব্ধ, প্রতারিত মানুষ সোজা হিসেবই বোঝেন। ছোট ক্ষমতাকে উচিত শিক্ষা দিতে হলে, বড় ক্ষমতার ছাতার তলায় না থাকলে, আত্মরক্ষা করা যাবে না। আমাকে আজ এক জন মেরে যাবে আর আমি সমাজবাদের থিয়োরি নিয়ে দু’শো বছর অপেক্ষা করব পাল্টা মার দেওয়ার জন্য, এমনটা হয় না।
অধিকার হরণের বদলা এখনই নিতে হলে, বেছে নিতে হবে বেশি ক্ষমতার একটি দল। বেছে নিতে হবে সাম্প্রতিক সুযোগ।
পিন্টু পোহান
কলকাতা-৮
রামধাক্কা
‘৪২-এ ৪২’ অসম্ভব জেনেও তৃণমূল নেত্রী যে ভাবে সেই হুঙ্কার ছেড়েছেন, সেই ঔদ্ধত্য আত্মঘাতী হল না তো? সঙ্গে ছিল দিবাস্বপ্ন। সর্বাধিক আসন পেয়ে কেন্দ্রে বিরোধী জোটের নেত্রী ও সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক বিরাট উচ্চাশা তৈরি হয়েছিল। তার অন্যতম উৎস ছিল গত প্রায় ১০ বছর ক্ষমতা ভোগ করে, রাজ্যের রাজনীতিকে বিরোধীহীন করে দেওয়ার স্বেচ্ছাচারিতা। এই পথে হঠাৎ রামধাক্কা মেনে নেওয়া শক্ত। দলীয় কোনও আদর্শ ছিল না, যা থেকে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা, সহনশীলতা ইত্যাদি জন্ম নিতে পারত। শুধুই ক্ষমতার লোভ, সাময়িক পরাজয়কে মেনে নিতে পারে না। এই রাজনৈতিক পরাজয়কে বিশ্লেষণ করার জন্য চাই দলীয় সংহতি। কিন্তু যে দলে নেত্রীই সুপ্রিমো, সেখানে বড্ড অভাব গণতান্ত্রিক পরামর্শ মেনে চলার। আশঙ্কা, এখন থেকেই বিজেপি থেকে ডাক আসবে। ৪০ জন তৃণমূল বিধায়ক তৈরি, এও শোনা গিয়েছে। এই সূত্রে নারদা-সারদা ইত্যাদি মামলা প্রাণ ফিরে পেলে, রাজ্য-রাজনীতি আরও অশান্ত হতে পারে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, হুগলি
জনগণের হয়ে
এখন আমরা জানি কে বা কারা গণতান্ত্রিক থাপ্পড় পেল। না, মোদী নয়, ওই মার দিয়েছেন জনতা জনার্দন। অরণ্যদেবের গল্পে দেখেছিলাম, একনায়ক বলছে, ‘‘আমিই আইন’’! তাকে খাঁচায় পুরেছিলেন অরণ্যদেব। আজ জনতা তাঁকে জবাব দিয়েছে, যিনি মনে করেছেন, তিনি নিজেই জনগণের হয়ে কথা বলে দিতে পারেন!
জয়ন্ত ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৪
স্বধর্ম
ভোটের রেজ়াল্ট দেখে জটায়ু যে বইটা লিখতেন, তার নাম, ‘বামেদের বেইমানি, গেরুয়ার গর্জন’। বামেরা ভুলে গেল, ‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়, পরধর্ম ভয়াবহ’।
দুর্গাশ্রী বসু রায়
হাওড়া-৩
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy