Advertisement
১১ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: কাশ্মীর সমস্যা

যে কোনও দেশের সীমানা সংলগ্ন অঞ্চলে থাকা মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনযাপন উপলব্ধি করাটা সহজ নয়। বিশেষ করে অশান্তিপ্রবণ এলাকায়। আবার যদি তাঁরা সংখ্যালঘু ও এক অর্থে প্রান্তিক মানুষ হন।

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

ঠিক তিন মাস আগে দ্বিতীয় বার কাশ্মীর ভ্রমণে নানা ক্ষেত্রে কাশ্মীরি মানুষের থেকে যে সহযোগিতা, সম্মান, সুপরামর্শ, নিরাপত্তা পেয়েছি তা এক কথায় আদরণীয়। পর্যটক বলে নয়, মানুষের কাছে মানুষ পৌঁছলে, আন্তরিক ও মুখোশহীন সহমর্মিতায় তাঁদের কথা শুনলে, পাশে দাঁড়াতে চাইলে যে মানবিক আদান প্রদান তৈরি হয়, তা বড় দামি ও গভীর। স্বার্থহীন।

যে কোনও দেশের সীমানা সংলগ্ন অঞ্চলে থাকা মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনযাপন উপলব্ধি করাটা সহজ নয়। বিশেষ করে অশান্তিপ্রবণ এলাকায়। আবার যদি তাঁরা সংখ্যালঘু ও এক অর্থে প্রান্তিক মানুষ হন।

কাশ্মীরের সমস্যাটা অনেকটা বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মতো। হিন্দুপ্রধান জম্মু বা যথেষ্ট প্রগতিশীল লে-লাদাখের যাপনচিত্রের থেকে বহুলাংশে আলাদা।

তাঁদের বাস্তবিক প্রাত্যহিক অসহায়তা, বেকারত্ব, স্বাভাবিক-স্বচ্ছন্দ ঘোরাফেরা বা পড়াশোনায় নিরন্তর বাধা, সন্দেহ, ধরপাকড়, প্রতি দিন চার পাশে সশস্ত্র সুরক্ষা-বাহিনীর ভ্রুকুটি, তুচ্ছ কারণে বচসা-বিবাদ-লুটপাট— এই আতঙ্কের প্রহর যাঁরা গোনেন তাঁরাই এর মর্ম বোঝেন।

আর এত সব সমস্যার কারণে পর্যটকের আকাল। অথচ চাষবাস কলকারখানাহীন কিছু অঞ্চলে পর্যটনই একমাত্র ভরসা কয়েকটা মাস খেটে খাওয়ার জন্য। বাকি ৬/৭মাস আবার তাঁরা বরফের তলায়।

তবু তাঁরা সহনশীল, কিন্তু কত দিন! এখন আবার তাঁদেরই চার পাশে যুদ্ধের দামামা। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কা। বছরভর সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিরীহ গ্রামবাসী মরেই চলেছেন। আমরা কতটুকু বুঝি তাঁদের!

আমরা অতি-দেশপ্রেমী কিছু মানুষ, সমতলে সুখে থাকা বিজ্ঞ নীতিবাগীশ, গুটিকয় কাশ্মীরি ছাত্রকে ঘরে জায়গা দিই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্থা করি। সামান্য শাল-ব্যবসায়ী, এমনকি চিকিৎসক ও তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করি। আর যুদ্ধ করে বীরত্বের প্রত্যাঘাত দেখাতে চাই।

যুদ্ধ হলে তার আঘাত হয়তো এই সীমান্তবর্তীদের ওপরই সবচেয়ে বেশি পড়বে। আমরাই এই বঞ্চিত ভারতীয় কাশ্মীরিদের কিছু অংশকে জেহাদি হতে, বিদ্বেষী হতে বাধ্য করছি না তো! তাঁদের পাশে না দাঁড়িয়ে অকারণ সন্দেহ ও বঞ্চনা করে আমাদেরই একটা অঙ্গকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়ে বালিতে মুখ লুকোচ্ছি না কি? কাশ্মীরিদের প্রতি আমরা কি আরও একটু মানবিক হব না? অনেক কিছু ভাবা প্রয়োজন এ সমস্যা সমাধানে।

মহুয়া ভট্টাচার্য

কলকাতা-১০৬

জিগির

পুলওয়ামার ঘটনার পর দেশের নানা প্রান্তে কাশ্মীরিদের উপর, কিংবা এ নিয়ে যাঁরা নিজস্ব মত প্রকাশ করছেন বা সরকারি ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁদের উপর, একদল স্বঘোষিত দেশপ্রেমী নানা জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে যে এই হামলাকারীরা দেশ সম্পর্কে কোনও স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ থেকে এই হামলা চালাচ্ছে। এর পিছনে একটি পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে এই হামলাগুলি এমন সংঘটিত ভাবে ঘটত কি? খুব বেশি হলে চায়ের দোকানে কিংবা পাড়ার রকে এ নিয়ে বিতর্ক থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়তো গড়াত।

এই হামলাকারীরা দেশপ্রেমের ভেকধারী না হয়ে যথার্থ দেশপ্রেমী হলে প্রথমেই তাদের মনে প্রশ্ন উঠত, বাস্তবে রাষ্ট্রপতি শাসন ও সামরিক শাসনের আওতায় থাকা কাশ্মীরে, বিশেষত চরম নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা পুলওয়ামায় এমন ঘটনা ঘটতে পারল কী করে? গোয়েন্দা সতর্কতা সত্ত্বেও কোনও অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছাড়াই সেনা কনভয়কে স্থানান্তরণের সিদ্ধান্ত কোন স্তর থেকে নেওয়া হল? ভবিষ্যতে যাতে এ ভাবে আবার জওয়ানদের প্রাণ দিতে না হয়, তার জন্য দ্রুত তদন্ত করে এ সবের জন্য দায়ী এবং দোষীদের চিহ্নিত করার দাবিই তারা সবার আগে তুলত। এ সব প্রশ্ন না তুলে প্রশ্নকারীদের উপরই হামলা চালানো কখনও স্বতঃস্ফূর্ত কোনও আবেগের প্রকাশ হতে পারে বলে মনে হয় না। স্বাভাবিক ভাবেই এই আক্রমণগুলি পরিকল্পনামাফিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যার উদ্দেশ্য উগ্র দেশপ্রেমের জিগির তোলা এবং দেশপ্রেমের ঠিকাদারিটা পরিকল্পনাকারীদের নিজেদের হাতে রাখা। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের যে কোনও সমালোচককেই দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে সম্ভব সমালোচনার কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া।

কিন্তু পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও শাসক শিবিরের এমন জিগিরের প্রয়োজন হচ্ছে কেন? গত পাঁচ বছরে এই সরকার কৃষি, শিল্প, কর্মসংস্থান, কিংবা প্রতিরক্ষা বা বৈদেশিক সম্পর্ক প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। এই জিগিরের দ্বারা কি সরকারের এই সর্বাত্মক ব্যর্থতাকেই ধামাচাপা দিতে চাওয়া হচ্ছে? রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে জিগির সে ভাবে তোলা যায়নি। সিবিআই নামক হাতিয়ারটিও তেমন কাজ দেয়নি। সামনে লোকসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় দেশপ্রেমের জিগিরটাই কাজ দেবে বলে বোধ হয় শাসক দলের কর্তারা মনে করেছেন। গুজরাতের এক বিজেপি নেতা তো বলেই ফেলেছেন, জাতীয়তাবাদকে ভোটে বদল করতে হবে। সঙঘ পরিবারও তাদের কর্মসূচিতে বদল ঘটিয়ে রামমন্দিরের পরিবর্তে জাতীয়তাবাদের নামে মেরুকরণের প্রচারকেই গুরুত্ব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে সরকারের ছোট বড় সব নেতা-মন্ত্রীই বক্তৃতাই বলছেন, জওয়ানদের এই মৃত্যু বিফলে যাবে না। অর্থাৎ দেশপ্রেমকে তাঁরা ভোটে বদলের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। এর পর আর জিগিরের প্রয়োজন বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বোধ হয়।

সমর মিত্র

কলকাতা-১৩

এম জে এন

কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ (এমজেএন) হাসপাতালে চালু হয়েছে। প্রশ্ন: হাসপাতালটি মেডিক্যাল কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে, না মেডিক্যাল কলেজের প্রয়োজনে ভেনু হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে?

হাসপাতালের ঐতিহাসিক মূল বিল্ডিংয়ে, নীল বর্ণের বিশাল সাইনবোর্ডে স্পষ্ট করে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘কোচবিহার গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, এম জে এন হসপিটাল, কোচবিহার’। বিল্ডিংটির উপরের দিকে গম্বুজের নীচের কার্নিসে ‘মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর হাসপাতাল’ খোদাই করা লেখাটি রয়েছে, সেই সৃষ্টিলগ্ন থেকে। দীর্ঘ দিন ধরে গোটা হাসপাতাল চুনকাম/সাদা রং মেরে দেওয়ালের সঙ্গে খোদাই করা এই ফলকটি একীভূত করা হয়ে থাকে। তাতে মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণের নামটি আবছা হয়ে গিয়েছে, বা বলা যায়, মুছে গিয়েছে, বোঝাই যায় না। সাইনবোর্ড যোগে হাসপাতালের পরিচিতি ঘটেছে এমজেএন বলে।

কে এই ‘এমজেএন?’ তিনি কি কোনও বিদেশি? বিস্তীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা ক’জন প্রজাবৎসল মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুরের নাম জানেন? কলকাতা বা অন্য কোথাও সংক্ষিপ্ত নামের পাশাপাশি পুরো নামের সাইনবোর্ড হাসপাতালগুলিতে রয়েছে, কোচবিহারে নেই কেন?

কোচবিহার গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হসপিটালের ঘর বাড়ি পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে কোচবিহারের ঐতিহ্যপূর্ণ ঐতিহাসিক কৃষি ফার্মে, বিবেকানন্দ স্ট্রিটে। অদূর ভবিষ্যতে কোচবিহার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নতুন পরিকাঠামোয় স্থানান্তরিত হবে। এমজেএন হাসপাতাল জেলা হাসপাতাল হিসাবেই থেকে যাবে বলে জানা গিয়েছে। ইংল্যান্ডের ‘রয়াল অ্যাকাডেমি অব এগ্রিকালচার’ থেকে ডিপ্লোমাধারী কুমার গজেন্দ্র নারায়ণ অধ্যক্ষ হিসাবে কৃষিফার্মটিতে বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। পরে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের তৃতীয় পুত্র কুমার নিত্যেন্দ্র নারায়ণ আমেরিকা থেকে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে কোচবিহারের কৃষি উন্নতিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। কোচবিহার মহারাজা প্রতিষ্ঠিত কৃষি ফার্মের জমিতে কৃষির বদলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠা কতটা যৌক্তিক?

জ্যোতির্ময় সিংহ সরকার

সভাপতি, কুচবিহার কৃষক পরিষদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir India-Pakistan Conflict Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE