Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: রাষ্ট্রের দায়িত্ব

পাকিস্তানের কথা ছেড়েই দিলাম। ‘কাসভ’-এর মতো পাকিস্তানিদের থেকে এই ধরনের কাজ খুব একটা নতুন নয়। কিন্তু ‘আদিল’-এর মতো ‘ভারতীয়’?

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

‘জেহাদ’, ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে’, ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’...যত দিন যাচ্ছে মোটামুটি ভাবে এই কথাগুলো আমাদের কাছে ভীষণ পরিচিত হয়ে উঠছে। কাশ্মীর-সমস্যা ভারতের অন্যতম পুরনো একটি সমস্যা। যত দিন ভারত, পাকিস্তান থাকবে; তত দিন কাশ্মীর নিয়ে সমস্যাও থাকবে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল। আর তার পর ২০০৮ সালে ২৬/১১ হয়েছে। ২০১৬ সালে সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছে। আর তার পর ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামা-তে... এর পরেও ফেসবুকে ‘সাতে পাঁচে না থাকা সাধারণ মানুষ’ ক্রমাগত যুদ্ধের দাবি জানাবে। যুদ্ধে একটা ‘আদিল’ মরবে, সঙ্গে সঙ্গে আরও একশোটা বা হাজারটা ‘আদিল’ তৈরি হয়ে যাবে। তা হলে সত্যি কি যুদ্ধ করে কোনও স্থায়ী সমাধান সম্ভব?

পাকিস্তানের কথা ছেড়েই দিলাম। ‘কাসভ’-এর মতো পাকিস্তানিদের থেকে এই ধরনের কাজ খুব একটা নতুন নয়। কিন্তু ‘আদিল’-এর মতো ‘ভারতীয়’? যাদের আমরা ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ বলছি, তারা কেন ‘বিভীষণ’ হয়ে উঠছে? রাষ্ট্রের প্রতি তার এই বিদ্বেষ এল কেন? এটা কেউ জানার চেষ্টা করছে কি? যত দিন না পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে তত দিন পর্যন্ত এই সমস্যা থেকেই যাবে।

কাশ্মীরের মানুষ, বা আরও সরাসরি বললে, বর্ডার অঞ্চলের কাছে থাকা মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনযাপনটা ঠিক কী রকম? সেই ব্যাপারে আমাদের কারও আদৌ কোনও ধারণা নেই। আমরা স্টারবাক্‌স-এ কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বা আর্সালান-এ মাটন বিরিয়ানি খেতে খেতে যুদ্ধের দাবি জানাতেই পারি। যতই হোক, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ।

একটা নিউজ় পোর্টালে পড়লাম, ‘আদিল’ হল এক জন স্কুলছুট। ছোটবেলায় এক বার স্কুল থেকে ফেরার পথে সে আর তার কিছু বন্ধু পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল মেরেছিল। নিউজ় পোর্টালের কমেন্ট সেকশনে দেখলাম অনেকেই লিখেছে, তখনই ছেলেটাকে মেরে ফেলা উচিত ছিল। তার পর মেরে না ফেললেও, খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ তাকে আটক করে এবং পুলিশের যা-যা করার পুলিশ তাই করে। পুলিশ ভুল কিছু করেনি। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল, হাফপ্যান্ট পরা একটা স্কুলপড়ুয়া (যে কিনা সাবালকও নয়) হঠাৎ পুলিশকে ঢিল মারল কেন? আমরা স্কুল থেকে ফেরার পথে তো এমনটা করতাম না। তা হলে আমাদের ছাত্রজীবন আর ওদের ছাত্রজীবনের মধ্যে কি বিস্তর কোনও ফারাক আছে?

রোজ সকালে আমাদের ঘুম ভাঙে মায়ের ডাকে। আর কাশ্মীরে এমন অজস্র মানুষ আছেন, যাঁদের বছরে ৩৬৫ দিন ঘুম ভাঙে গুলির আওয়াজে। ২০০৯ সালে বলিউডে একটা সিনেমা তৈরি হয়েছিল, নাম ‘নিউ ইয়র্ক’। ৯/১১-এর পরবর্তী সময়ে আমেরিকার নিরীহ মুসলিমরা কী রকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, মূলত সেই নিয়েই সিনেমা। সিনেমাটিতে জন আব্রাহাম ছিলেন আমেরিকায় বসবাসকারী এক জন নিরীহ মুসলিম। কিন্তু তৎকালীন পরিস্থিতি তাঁকে ‘নিরীহ মুসলিম’ থেকে ‘জঙ্গি’ বানিয়ে দেয়।

রাষ্ট্রবিরোধী হওয়া অন্যায়। রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করলে রাষ্ট্র তাকে সাজা দেবে, এটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এক জন মানুষ কেন রাষ্ট্রবিরোধী হচ্ছে, সেটা জানাটাও রাষ্ট্রের কর্তব্য। আর তাকে রাষ্ট্রবিরোধী হওয়া থেকে আটকানোটাও রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। ফেসবুকে যে কোনও ইসুতে আলটপকা মন্তব্য করে দেওয়াটা যতটা সহজ, বাস্তবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা ততোধিক কঠিন।

কৌস্তভ মিত্র

কলকাতা-৫৬

যুক্তিনিষ্ঠ প্রশ্ন

দেশনেতাদের বাক্যবাণে উজ্জীবিত জনগণ বদলার প্রতীক্ষায় উত্তেজনায় থরথর। মোমবাতি মিছিলের শোকাহত আবহাওয়ায় দেশপ্রেমের জোয়ার। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে দেশপ্রেমের বার্তায় তিলমাত্র ঘাটতি থাকলেই রে রে করে নেমে পড়ছেন একদল স্বঘোষিত দেশপ্রমিক। সত্যিই কি দেশপ্রেম বস্তুটি এতই ঠুনকো জিনিস! যা কেবল দেশের জওয়ানদের মৃত্যুর শোকজ্ঞাপনেই এসে থমকে দাঁড়ায়! তার সঙ্গেই আমাদের কি মনে পড়বে না সেনা নিরাপত্তার ফাঁকফোকরগুলি? দেশের কোনায় কোনায় সঞ্চিত হতে থাকা বিপুল বিস্ফোরকের অস্তিত্বও গাফিলতির বীজ বুনে দিয়ে যায়। এটাই আদর্শ সময় যখন শত আবেগ ব্যতিরেকে যথার্থ দেশপ্রমিক হয়ে চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন ছুড়ে দিতে হবে আমাদের দেশনায়কদের উদ্দেশে। একের পর এক যুক্তিনিষ্ঠ প্রশ্নের সামনে দেশনেতাদের বিব্রত করাই এই সময়ের প্রকৃত দেশপ্রেম। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অস্ত্রের আড়ালে বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারি। দেশীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা। সেনা স্থানান্তরের প্রশ্নে চূড়ান্ত গাফিলতি। দেশের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ব্যস্ত রাখা। দেশের জনতার মাঝে উত্থিত এমন সব প্রশ্নই আমাদের দেশপ্রেমকে উন্নীত করতে পারবে।

সঞ্জয় রায়

দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

যুদ্ধ নয়

জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনও দেশ হয় না; হয় না কোনও জাত। আমরা সবাই জঙ্গিদের নাশকতামূলক কাজকর্মের নিন্দা করি যে যার অবস্থানে থেকে। কিন্তু এই সুযোগে দেশের শত্রুরা নিজ স্বার্থসিদ্ধির অঙ্ক সাজিয়ে নেয়। কাশ্মীরের সমস্যা অনেক দিনের। সীমান্তবর্তী এলাকা সব সময়ই খুব স্পর্শকাতর হয়। ভৌগোলিক অঞ্চল মেনে দেশের সীমানা তৈরি করা যায়, কিন্তু সীমানা টেনে মানুষের সম্পর্ককে আলাদা করা যায় না। কাশ্মীর সমস্যাকে থামাতে বা কমাতে গেলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মতাদর্শের নিরিখে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন। এই ভাবনার অবহেলায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে; এটাই তো ভবিতব্য ছিল।

পুলিশ ও সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান-সহ বহু সাধারণ কাশ্মীরিরা মরে চলেছেন এই নিস্তব্ধ ভূস্বর্গে। পাশাপাশি দেশ জুড়ে এক প্ররোচনা তৈরি হচ্ছে, বদলা চাই। তবে কি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে কোনও দেশের চিত্রটা মুছে দিলে সব সমাধান হয়ে যাবে! যুদ্ধোন্মাদনায় সাধারণ মানুষ মেতে উঠেছে। সামরিক বাহিনীর সংবিধান যেমন সাধারণ নাগরিকের চিন্তাভাবনার মতো নয়, তেমনই প্রতিরক্ষার নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন একটি সাংবিধানিক অপরাধ। কাশ্মীরে বসবাসকরী সবাই জঙ্গি নন। প্রয়োজন নীতিনিষ্ঠ সমাধান। ‘আমাদের মেরেছে; আমরাও মারব’— এই নীতিতে ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী যুদ্ধ মানবসভ্যতাকে শান্তির পথ দেখাতে পারে না।

সুব্রত দেবনাথ

কলকাতা-১১৮

মৃত্যুর মিছিল

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেই কি এই নৃশংসতার অবসান হবে? বোধ হয় না। কেননা পৃথিবীর কোনও দেশে কোনও যুদ্ধই বিনা রক্তপাতে, কোনও প্রাণহানি না ঘটিয়ে হয়নি। বরং মৃত্যুর মিছিল বহু গুণ বেড়েছে। ভয়াবহ যুদ্ধ লাঞ্ছিত করেছে যাবতীয় বিবেক ও মনুষ্যত্ববোধকে। হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বদলা নিতে গেলে দু’টি দেশের আরও অনেক জওয়ান পরিবারে কান্নার রোল উঠবে। ভারী হয়ে উঠবে দেশের আকাশ বাতাস।

আজকের এই মারণাস্ত্রে সজ্জিত পৃথিবীতে যুদ্ধে কেউই জয়ী হয় না। বরং যুদ্ধ রেখে যায় এক ভয়াবহ ক্ষত, যা শুকোতে বহু দিন লেগে যায়। বর্তমান সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের রণংদেহি মূর্তি সমস্যা সমাধানের কোনও লক্ষ্যেই পৌঁছতে পারেনি। বরং তাঁর বাক্‌সর্বস্বতা ও অহংবোধ বাতাবরণকে আরও বিষিয়েছে। যুদ্ধ নয়, বরং সমাধানের বিকল্প পথের সন্ধান করা হোক।

নইলে আরও অনেক অসহায় মা সন্তানহারা হবেন, অনেক হতভাগ্য স্ত্রীর বিনিদ্র চোখের জলে ভিজবে বালিশ। যা কখনওই কাম্য হতে পারে না।

সমীর কুমার ঘোষ

কলকাতা-৬৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Pulwama Terror Attack India Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE