Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: কিসের ‘গুড বুক’?

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, যাঁর নাম জগৎ জুড়ে রয়েছে, যাঁকে আমি ও আমার দাদা ‘হেমন্তজেঠু’ বলেই জানি, তাঁকে আমাদের বাড়িতে দেখেছি একাধিক বার।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০৮

আমার বাবা সুধীন দাশগুপ্ত ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি চিঠি পড়লাম (‘আর হেমন্ত?’ সম্পাদক সমীপেষু, ১৫-১), যেখানে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বাবার ‘গুড বুক’-এ ছিলেন না! তার উত্তর দিতেই হল।

সুধীন দাশগুপ্ত (সঙ্গের ছবিতে) এমনই এক জন মানুষ ছিলেন, যাঁর মধ্যে কোনও আত্মকেন্দ্রিক, ব্যক্তিগত ভাবনা ছিল না। যাঁর মন ছিল সরল, সহজ এবং কূটনৈতিক বুদ্ধি যাঁর মধ্যে বিন্দুবিসর্গ ছিল না। থাকলে হয়তো তিনি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক জীবনের নানা স্তরে আরও ‘সাফল্য’ পেতে পারতেন! তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর শিল্পী, নন-কমার্শিয়াল। কোনও প্রোগ্রামে যেতেন না, সৃষ্টি নিয়েই থাকতেন। কোনও ‘গুড বুক’ বা ‘ব্যাড বুক’-এর ধার ধারতেন না।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, যাঁর নাম জগৎ জুড়ে রয়েছে, যাঁকে আমি ও আমার দাদা ‘হেমন্তজেঠু’ বলেই জানি, তাঁকে আমাদের বাড়িতে দেখেছি একাধিক বার। গানের মহড়ার জন্যই। সেখানে গান তোলার ফাঁকে উনি রসগোল্লা খেতে খেতে ইনসুলিন নিতেন। ‘ছোটদের রামায়ণ’ বাবা যখন করছেন, তখন পুরোটারই তো সূত্রধার হেমন্তজেঠুই ছিলেন!

হেমন্তজেঠু বাবার থেকে কর্মক্ষেত্রে এবং বয়সে, দু’দিক থেকেই সিনিয়র। আমরা সব সময় দেখেছি, বাবা তাঁর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। কিছু জুটি সফল হয়। মান্নাজেঠু, পিসিমণি (আরতি মুখোপাধ্যায়) এবং আশা ভোঁসলে ও বাবা ঠিক সেই জুটি। বাবার তো খুব ইচ্ছে ছিল, বাবার সুরে কিশোরকুমার গাইবেন। কিন্তু একটি গানও হয়ে ওঠেনি। এর কারণ কি তিনি বাবার ‘গুড বুক’-এ ছিলেন না? না কি, অন্য কোনও কারণ? কিশোরকুমারের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক ছিল মধুর, গানের ইচ্ছেও ছিল প্রবল।

সব সময় সংগীত পরিচালকের উপর নির্ভর করত না, গায়ক বা গায়িকা কারা হবেন। নির্ভর করত প্রযোজক, পরিচালক এবং রেকর্ড কোম্পানিরও ওপর। যদি কেউ ভাবেন, এক জনের সুরে অন্য জন গাননি মানেই তা সুরকারের ব্যক্তিগত অপছন্দের প্রকাশ, তা খুবই ভুল।

তা ছাড়া, সুরকার কেন একটা গানের জন্য নির্দিষ্ট শিল্পীকে বাছছেন, সেটা নিশ্চয়ই অনেক শিল্পগত যুক্তির উপর নির্ভর করে, যা আমরা বুঝতে পারব না। সেখানে কোনও রকম আন্দাজ খাটাতে যাওয়াটা ঠিক নয়। বিশেষত সুধীন দাশগুপ্তর মতো বিরাট মাপের সুরকারের ক্ষেত্রে।

সাবেরী দাশগুপ্ত কলকাতা-৩৮

সুইভেল গান

উইলিয়াম ডালরিম্পল-এর লেখায় (‘মৃত্যুর আগে রামায়ণ পড়তে...’, রবিবাসরীয়, ১২-১১) কয়েকটি ভুল তথ্য রয়েছে। তৃতীয় অনুচ্ছেদে তিনি লিখেছেন, ‘নাদির প্রথমেই মুঘল সেনাকে সরাসরি আক্রমণে প্রলুব্ধ করলেন। ...দেখা গেল ঘোড়ার উপর ‘সুইভেল গান’ নিয়ে সব পারসিক সেনা। সুইভেল গান মানে, বন্দুকটা ঘোড়ার পিঠে এক জায়গায় রেখে, গুলি চালাতে চালাতে যে কোনও দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। অষ্টাদশ শতকের এই নূতন আবিষ্কারটি মুঘলদের হাতে ছিল না।’

সুইভেল গান নিয়ে নাদিরের সৈন্যরা অবশ্যই ছিল, কিন্তু ওই বন্দুকগুলি মাটিতে স্থাপন করা হয়েছিল এবং জঙ্গলের মধ্যে পারসিক সৈন্যরা ঘূর্ণায়মান বন্দুক নিয়ে অপেক্ষা করছিল শিকারের জন্য। তারা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকায়, মুঘল সৈন্যরা তাদের সংখ্যা বা শক্তি সম্বন্ধে কিছুই বুঝতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত, অষ্টাদশ শতক কেন, আকবরের রাজত্বকালেই এই ধরনের ঘূর্ণায়মান বন্দুক বা হালকা কামান মুঘল অস্ত্রাগারে ছিল। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে শাহ আলম ও তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা শাহ আজমের মধ্যে সংঘটিত জাজাউ-র যুদ্ধে দুই পক্ষই এই বন্দুক ব্যবহার করেছিল (এই যুদ্ধ হয় ২০ জুন, ১৭০৭)। আবার আজিম-উশ-শান ও তাঁর ভ্রাতা জাহান্দার শাহের মধ্যে যুদ্ধেও (১৭ মার্চ, ১৭১২) সুইভেল গানের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছিল। এর পর হাসানপুরের যুদ্ধে (সইদ আবদুল্লা খান বনাম খান দৌরান, ১৪ নভেম্বর, ১৭২০) সুইভেল গান উভয় পক্ষই ব্যবহার করেছিল। শুধু তা-ই নয়, মুহম্মদ শাহ এবং নাদির শাহের যুদ্ধের প্রায় একশো বছর আগে, মুঘল মসনদের দখলকে কেন্দ্র করে আগরার নিকটবর্তী সমুগড়ে ২৯ মে ১৬৫৮ এক ভয়ংকর যুদ্ধ হয়। বিবদমান দুই পক্ষে ছিলেন শাহজহান পুত্র দারা এবং তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা আওরঙ্গজেব। এই যুদ্ধে দারার সৈন্যবাহিনীতে ৫০০টি উট-বাহিত সুইভেল গান ছিল। এই আগ্নেয়াস্ত্রগুলির বিভিন্ন মান আনুযায়ী নানা রকম নাম ছিল, যেমন গজনল, হাতনল, শুতারনল, যমবুরাক, শাহিন, ধামাকা, রমজানকি, রাখালা, জাজাইর। সুইভেল গান সম্বন্ধে উইলিয়াম আর্ভিন তাঁর ‘দি আর্মি অব দি ইন্ডিয়ান মুঘলস’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তৃতীয়ত, আকবর থেকে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত কোনও সময়েই মুঘল বাহিনীতে দশ লক্ষ সৈন্য ছিল না, মুহম্মদ শাহ বনাম নাদির শাহের যুদ্ধের সময় তো মুঘলদের পতনের যুগ, তখন দশ লক্ষ সৈন্য কোথা থেকে আসবে? সব চেয়ে বেশি সৈন্য ছিল অউধের গভর্নর সাদাত খানের অধীনে, তিরিশ হাজার অশ্বারোহী, তাঁর অধীনস্থ সৈন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিল মাত্র কুড়ি হাজার। আট হাজার অশ্বারোহী নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন খান দৌরান, এ ছাড়া ওয়াজির নিজাম-উল-মুলক ও স্বয়ং বাদশাহ মুহম্মদ শাহের নিয়ন্ত্রণে খুব যে বেশি সৈন্য ছিল, তা নয়। তবে নিঃসন্দেহে নাদির শাহের চেয়ে তাদের সৈন্যসংখ্যা বেশি ছিল। একমাত্র সুইভেল গানের দৌলতে নাদির ওই যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন তা নয়, এর পিছনে ছিল আরও অনেক কারণ।

সুবীরকুমার পাল মধ্যমগ্রাম

স্বাদু পাঠ

‘স্কুল শিক্ষকদের ইনাম তর্জনের প্রস্তবে বিতর্ক’ খবর ও ‘ওঁরা ছাত্রছাত্রীদের কথা ভাবেন’ নিবন্ধ (২-১) আপাত যোগসূত্রহীন মনে হলেও সম্পর্কহীন নয়। অশোকেন্দু সেনগুপ্ত রাজ্যের সমস্ত শিক্ষকের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন, ‘দেখে আসুন, ইচ্ছায় কী না হয়।’ অজ পাড়াগাঁয়ের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা, আন্তরিকতা তাঁকে আনন্দ দিয়েছে। ওঁকে ধন্যবাদ। কিন্তু রাজ্যের শহর-গ্রামে বহু শিক্ষক আছেন, যাঁরা ইনামের প্রত্যাশা না করেই, পাঠ্য বিষয়কে সহজবোধ্য, সরস ও স্বাদু ভঙ্গিতে উপস্থাপিত করার জন্য, নানা আকর্ষণীয় পদ্ধতি অবলম্বন করেন। নাটক, গানের মাধ্যমে বোঝান। অ্যান্টার্কটিকা পড়াতে গিয়ে, স্কুলের পুকুরের পাড় থেকে কাদা তুলে পেঙ্গুইন গড়া, পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বিষয়ে জলাশয় পড়ানোর সময় ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামের জলাশয়গুলির ছবি ও তালিকা প্রস্তুত করা, জলাশয়ে পাড় বাঁধানো থাকলে প্রাণীদের জীবনধারণের অসুবিধা লিপিবদ্ধ করার কাজ আমার বিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে সম্পাদিত হয়েছে।

নীপা বসু মোরাপাই লরেটো গার্লস হাইস্কুল মগরাহাট, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

ব্রিজ কোর্স

‘চিকিৎসকের সংকট’ সম্পাদকীয়টি (৬-১) পড়ে মনে হল, একে ‘চিকিৎসার সংকট’ও বলা চলে। ‘ব্রিজ কোর্স’ করিয়ে আয়ুর্বেদ, হোমিয়োপ্যাথিক চিকিৎসকদের আধুনিক অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার অধিকার দিলে, তা এ দেশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনবে। এর সঙ্গে প্রশিক্ষিত ডাক্তারদের স্বার্থের চেয়ে বেশি জড়িয়ে সাধারণ রোগীর স্বার্থ। ডাক্তার হতে গেলে প্রচুর পুঁথিগত বিদ্যার্জন ও হাতে-কলমে তালিম নিতে হয়। তার পরেও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হয়, চিকিৎসাক্ষেত্রে নিত্যনতুন আবিষ্কারের সঙ্গে। অপ্রশিক্ষিত ‘ব্রিজ কোর্স’ প্রাপ্ত ব্যক্তির হাতে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের প্রেসক্রিপশন লিখবার অধিকার তুলে দিলে তা হবে তাকে রোগীনিধন যজ্ঞের কান্ডারি বানানোর শামিল।

সঞ্জিত ঘটক উত্তর রামচন্দ্রপুর, নরেন্দ্রপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Sudhin Dasgupta Hemanta Mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy