প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ঘোষণা করলেন, ‘‘ভারত নীতিগত ভাবে পরমাণু অস্ত্রের প্রথম ব্যবহারকারী হওয়ার বিপক্ষে। এত দিন তা মেনে আসা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে, তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।’’ (‘আগেভাগে পরমাণু আঘাত!’, ১৭-৮)। অর্থাৎ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার মনে করলে পাকিস্তানের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলতে পিছপা হবে না। আমাদের দেশের বহু হিন্দুত্ববাদী নাগরিক এতে উল্লসিত। তাঁরা মনে করেন, কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদের বিশেষ সুবিধা তুলে নেওয়াতে পাকিস্তানকে আচ্ছা টাইট দেওয়া গিয়েছে; শুধু তা-ই নয়, অমিত শাহ হুঙ্কার ছেড়েছেন, কাশ্মীর মানে শুধু ভারত অধিকৃত কাশ্মীর নয়, পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দখলের কথাও ভাবা হচ্ছে। সেই দিকে এগোনোর জন্যই পারমাণবিক বোমা প্রয়োগের প্রাথমিক তোড়জোর শুরু হল। আর যদি এক বার প্রথমেই পরমাণু বোমা মেরে পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যায়, তা হলে পায় কে!
কিন্তু ওই হিন্দুত্ববাদী নাগরিকরা পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উক্তিকে পাত্তাই দেবেন না। ইমরান ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনা এমন কোনও পদক্ষেপ করলে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়বে পাকিস্তান। তার মানে এই নয় যে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ভয় দেখাচ্ছে। ইমরান মুখে অন্তত বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্ঘটনা আর পরমাণু বোমা ফাটানো একই মুদ্রার দু’পিঠ। পৃথিবীতে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা অনেক ঘটেছে। ২০১১-তে জাপানে ফুকুশিমায় পারমাণবিক চুল্লি বিস্ফোরণে বাতাসে উচ্চ পর্যায়ের তেজস্ক্রিয়তা ও তেজস্ক্রিয়ায় সংক্রমিত খাদ্যদ্রব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ২০০ কিমি দূরের টোকিয়ো শহরে। ১৯৮৬ সালে রাশিয়ায় চের্নোবিল দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমে রাশিয়া সরকার এর কথা ঘোষণা করেনি। কিন্তু চের্নোবিল থেকে আকাশপথে প্রায় ১৫০০ কিমি দূরে সুইডেনের বাতাসে যখন তেজস্ক্রিয়তার খোঁজ পাওয়া যায়, তখন বিশ্বে শোরগোল ওঠে এবং তাতেই রাশিয়া দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৯৬১-তে রাশিয়া পারমাণবিক বোমা ফাটিয়ে পরীক্ষা করেছিল। দেখা গিয়েছিল, তেজস্ক্রিয় মেঘ ১৫০ মাইল দূরে ছড়িয়ে পড়েছিল। কানাডার আকাশেও সেই মেঘ দেখা যায়। ঘণ্টায় ৮০ মাইল বেগে মেঘ ধেয়ে গিয়েছিল। বোমা ফাটানোর দু’সপ্তাহের মধ্যে দেখা গেল কলকাতার বাতাসে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, বাতাসে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ ৫ মাইক্রো-মাইক্রো কুরি। তাঁরা বলেছিলেন, ১৯৫৪ সালের তুলনায় বাতাসে তেজস্ক্রিয় ধূলিকণার পরিমাণ ৭ থেকে ৮ গুণ বেশি।