Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: অভিজ্ঞ, না কি ‘বুড়ো’?

দলে চার নম্বর জায়গাটার জন্য নির্বাচকেরা তরুণ বিজয় শঙ্করকে ভাবতে পারলেন, তা হলে রিজ়ার্ভ উইকেটকিপার হিসেবে তরুণ পন্থ কেন ব্রাত্য?

ঋষভ পন্থ। ফাইল চিত্র।

ঋষভ পন্থ। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৪
Share: Save:

বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ঋষভ পন্থ নয়, দীনেশ কার্তিক! দেখে চোখ কপালে উঠল। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ে যেখানে কার্তিককে বাদ দিয়ে ঋষভ পন্থকেই বেছে নিয়েছিলেন নির্বাচকেরা, সেখানে বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে হঠাৎ আবার ‘পিছনে ফিরে দেখা’র কারণ কী? অনেকে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া এবং দীনেশ কার্তিকের ‘অভিজ্ঞতা’র কথা তুলছেন। এমনকি বলছেন— কার্তিকের উইকেটকিপিং দক্ষতাও পন্থের চেয়ে ভাল। এই সব আলোচনাই দ্বিতীয় উইকেটকিপারের প্রসঙ্গে, বিশ্বকাপে ধোনিই যে মূলত খেলবেন তা সবারই জানা। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো আসরে প্রয়োজনে ধোনির বিকল্প হিসেবে ‘বুড়ো’ কার্তিককে না খেলিয়ে ঋষভ পন্থকেই নেওয়া বাঞ্ছনীয়। আইপিএল চলছে, ঋষভ পন্থের ব্যাটিং বা উইকেটকিপি‌ং, কোনওটাই তো অন্তত কার্তিকের চেয়ে খারাপ মনে হচ্ছে না। বরং পন্থের হাতে যে অজস্র ‘শট’ আছে, তা তাঁর পারফরম্যান্সেই পরিষ্কার, ইংল্যান্ডে প্রয়োজনে খুবই কাজে লাগতে পারত। দলে চার নম্বর জায়গাটার জন্য নির্বাচকেরা তরুণ বিজয় শঙ্করকে ভাবতে পারলেন, তা হলে রিজ়ার্ভ উইকেটকিপার হিসেবে তরুণ পন্থ কেন ব্রাত্য? বোদ্ধারা বলছেন, বাকি ভারতীয় দল ‘অভিজ্ঞ’। ‘অভিজ্ঞ’ শব্দটাকে ‘বুড়ো’ বললেও খুব অত্যুক্তি হবে না। তা হলে আর আইপিএল-এ এত তরুণ তুর্কিকে খেলিয়ে লাভ কী?

ভাস্কর চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-৮৪

জোর করে

‘কর্মী তোলায় সঙ্কটে এক্স-রে, রক্তপরীক্ষা’ (৫-৪) সংবাদের প্রেক্ষিতে লিখছি। ভোটের ডিউটি ফেলায় রাজ্যের হাসপাতালগুলি সত্যিই চরম সঙ্কটে। রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা, স্টেট জেনারেল, গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র— নির্বাচন কমিশন সব জায়গা থেকেই বিপুল সংখ্যক কর্মীদের তুলে নিয়েছে। ফলে নির্বাচনের দিনগুলিতে হাসপাতালের অত্যাবশ্যক পরিষেবা প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতিটা প্রায় একই। প্রচুর ভোটকর্মীর প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন তামাম সরকারি ক্ষেত্রে হানা দেওয়ার ফলে শুধু এ রাজ্যেরই নয়, সমগ্র দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থা ভোটের সময়ে নিতান্ত দুর্বল হয়ে পড়বে। এত বড় দেশের ভোটগ্রহণের মতো কাজে সহায়তা শুধু সরকারি কর্মীদের পক্ষে সম্ভবপর নয়। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কেন নামী বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের ভোটের কাজে ডাকে না, জানি না। অথবা কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রগুলি থেকে ইচ্ছুক শিক্ষিত বেকার তরুণদের ভোটের কাজ করাতে সম্মতিদানের প্রমাণ হিসাবে সরকারি বন্ডে সই করিয়েও তো ভোটের ডিউটিতে পাঠানো যায়। তাতে এক দিকে ভোটকর্মী সমস্যার সমাধান করা যায়, অন্য দিকে ভোটের কাজ করতে অনিচ্ছুক বা অপারগ সরকারি কর্মচারীদের রেহাই দেওয়া যায়। কেবল সরকারি সংস্থা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্র থেকেও যেখানে কর্মী নিয়ে ভোটকর্মীর অভাব পূরণ করা যায়, সেখানে ভোটগ্রহণের দায় সরকারি ক্ষেত্রের অনিচ্ছুক কর্মীদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক? পরবর্তী নির্বাচনে ভোটকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আবেদন জানাচ্ছি।

তাপস সাহা

শেওড়াফুলি, হুগলি

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বুথে হাতি

আমার বয়স এখন ৮২-র ওপর। কোনও একটি বিধানসভা আসনের এক বুথের ঘটনার কথা মনে পড়ছে। মনে হয় সেটা ছিল ১৯৫১ সাল। সেই আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিধানসভার প্রার্থী হিসাবে কংগ্রেস ও কয়েকটি স্বীকৃত বিরোধী পার্টি ছাড়াও ছিলেন এক নির্দল প্রার্থী। দোহারা চেহারার মধ্যবয়সি এক ব্যক্তি, যাঁর প্রতীক ছিল ‘হাতি’। ওঁর নামটা আজ আর মনে নেই।
ভোট দেওয়ার সময়সীমা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার সামনেই একটা ঘটনা ঘটল। বুথে জমা হওয়া জনা দশেক কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট কর্মী-দাদারা এক জনের পিছনে আর এক জন দাঁড়িয়ে, পিঠ টানটান রেখে সামনের দিকে ৯০ ডিগ্রি ঝুঁকে পড়ে হাতি সেজে লাইন বানিয়ে ফেললেন। তাঁরা ডান হাতের আঙুলে একটি করে রুমাল ঝুলিয়ে আর ওই হাতের কনুই থেকে হাত দিয়ে নিজেদের নাকের সামনে শুঁড় বানালেন এবং দুলে দুলে তা ওঠাতে ও নামাতে লাগলেন। ওঁরা থপথপ করে হাঁটছিলেন। আর বাঁ হাতের তালুটা নিতম্বে রেখে ডাইনে-বাঁয়ে অনবরত নাড়াচ্ছিলেন এবং মুখে বলছিলেন, ‘‘হাতি মার্কা বাক্সে ভোট দিন, ভোট দিন।’’
নির্দল প্রার্থী ভদ্রলোক ওই সময় ওই বুথেই উপস্থিত ছিলেন। হয়তো তাঁকে দেখেই ওই মজাটা করা হচ্ছিল। অনুরোধ করায় তিনি আবার ওই লাইনের সামনে নেতৃত্ব দিয়ে হাসিমুখে অল্প সময়ের জন্য হাঁটলেনও। বুথের সকলকে মজাটা উপভোগ করতে দিলেন। পরিবেশটা ছিল ঠিক যেন বিজয়া দশমীর পর প্যান্ডেলে কোলাকুলি করার মতো।
না, কোনও লাশ পড়েনি সে দিন। দু’এক জন বরং হাসতে হাসতে ফুটপাতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। পতন বলতে ওটুকুই। আজও মনে মনে সে দিনের কথা ভাবি।

অমিতাভ ভট্টাচার্য

কলকাতা-৬৪

গণতন্ত্রের রক্ষক

এক বার ভোটে গিয়েছিলাম প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে, সবংয়ে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মানস ভুঁইয়া এবং মাখনলাল বাঙাল। ভোটের আগে সেখানে চরম উত্তেজনা। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাও চরম। আমার
বুথের পরিস্থিতিও ছিল যথেষ্ট উত্তেজক। আমার সঙ্গে ছিল দু’জন আর্ম গার্ড। টিম নিয়ে পৌঁছলাম প্রায় সন্ধেবেলা। সারা রাত জেগে সব কাগজ গুছিয়ে রাখলাম।
সকাল ৭টায় ভোট আরম্ভ হয়ে গেল। বেলা চারটে পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোটও হয়নি। বেলা পড়তেই, বিকেল ৫টার আগে দলে দলে লোক লাইন দিতে শুরু করল। আমি লাইনের পিছন থেকে স্লিপ দিতে শুরু করলাম। ভোট নিতে দেরি হচ্ছে। এতে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। এমনকি উত্তেজনায় টিনের চালে দু’চারটে ঢিলও পড়ল। স্লোগান উঠল, প্রিসাইডিং অফিসারের টাক ফাটিয়ে দে। ভোট নিতে নিতে রাত দশটা বেজে গেল। এমন সময় রিটার্নিং অফিসার এলেন। তিনি সবাইকে ছেড়ে আমাকেই ধরলেন। বললেন, ‘‘রাস্তায় কিন্তু ভোটবাক্স লুট হতে পারে। আপনি সাবধান থাকবেন। আর এ রকম পরিস্থিতি হলে চিৎকার করে বলবেন ‘ফায়ার!’ আপনার সঙ্গে তো দু’জন আর্ম গার্ড আছেই। ভোটবাক্স রক্ষা তথা গণতন্ত্র রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার হাতেই।’’ আমি তো ভয়ে থতমত। চক-ডাস্টার, ব্ল্যাকবোর্ড, ছাত্র— এই নিয়েই আমার প্রতি দিনের কারবার। দুর্গা দুর্গা করে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি ছাড়ল। বসে চুপচাপ ভাবছি কী করব। কোনও দুর্যোগ হয়নি। দেখতে
দেখতে বালিচক পৌঁছে গেলাম। ভোটবাক্স জমা দিয়ে ছুটি। ঘরে ফিরলাম ভোর পাঁচটায়।

সঞ্জয় চৌধুরী

খড়্গপুর

হল না

গত ২২ মার্চ গিয়েছিলাম মহীশূরে। মহীশূর প্যালেসের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ গেলাম। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের খোঁজ নিলাম— কখন টিকিট দেবে, ক’টায় শো শুরু ইত্যাদি। সময়মতো এসে দেখি, চার দিক শুনশান, গেট বন্ধ। জানা গেল আগের দিন স্থানীয় এমএলএ মারা গিয়েছেন। আমরা যাওয়ার পর অর্ডার এসেছে, তাঁর প্রতি শোক প্রদর্শনের জন্য মহীশূর প্যালেস এবং সব প্রদর্শন তিন দিন বন্ধ থাকবে। এ কী ধরনের শোক প্রকাশ! দোকানপাট খোলা, গাড়িঘোড়া সচল, শুধু দর্শনীয় স্থানগুলি বন্ধ! যারা বহু দূর থেকে, টাকা খরচ করে দেখতে এসেছে, এটা তাদের প্রতি অবিচার নয় কি? আমার এখন ৭৪ বছর বয়স, আর হয়তো যাওয়া হবে না। এত কাছে গিয়েও মনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হল না।

বিদ্যুৎ বরণ দে

চাকদহ, নদিয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

World Cup 2019 Rishabh Pant Democracy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE