—প্রতীকী ছবি।
‘স্বচ্ছতার মৃত্যুসংবাদ’ (২২-৩) সম্পাদকীয় খানিকটা একপেশে হলেও সারবত্তা নিয়ে দ্বিমত নেই। নির্বাচনী বন্ডের ‘নাটের গুরু’ বিজেপি, তাতেও সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু বিজেপি ব্যতীত সুবিধাভোগী অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে কি কর্পোরেট সংস্থা ভালবেসে অর্থ সাহায্য করেছে? একাধিক রাজ্য-সহ কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে বিজেপি, এবং বিভিন্ন রাজ্যে এই দলের যথেষ্ট প্রভাব বর্তমান। অঙ্কের নিয়মে স্বাভাবিক ভাবেই নির্বাচনী বন্ডের আনুপাতিক অনুদানের হার বিজেপির ঝুলিতে বেশি গিয়েছে। যার জন্য ঘুরপথে খেসারত দিতে হচ্ছে আমজনতাকে। কিন্তু বিজেপিকে নিশানা করে রাহুল গান্ধীর ‘গাজর আর লাঠি’র তত্ত্ব কংগ্ৰেস-সহ অন্য দলগুলির ক্ষেত্রে কি প্রযোজ্য নয়? তাদের কেউ কেউ তো বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, বা অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারে। লাঠির পরিবর্তে গাজর ঝুলিয়ে যদি অর্থ আদায় করা হয়, সেটাও অনৈতিক এবং গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়। আমজনতার পকেট কাটার তাতে বিন্দুমাত্র হেরফের হয় না।
একই মুদ্রার উল্টো পিঠে এসবিআই। যে তথ্য সমাজমাধ্যমে আগেই ভাইরাল, সেই তথ্য দিতে এসবিআই-এর গড়িমসি বিস্ময়কর। আদালতের কড়া অবস্থানে এসবিআই-এর ভোলবদলে ওই ব্যাঙ্কের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। সকল ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধায়ক আরবিআই-এর গায়ে কি তাতে কালির ছিটে লাগল না? সাধুবাদ প্রাপ্য সেই সমস্ত সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক দলের, যাঁরা শাসকের স্বচ্ছতার মুখোশ খুলতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
বিজেপির দান
‘স্বচ্ছতার মৃত্যুসংবাদ’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছে, এবং এই প্রকল্পটি স্বাধীন ভারতে এ-যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি বলে অভিহিত হচ্ছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দাবি করে তাদের প্রশাসন নিষ্কলঙ্ক, স্বচ্ছ। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’। অথচ, বাস্তবে এসবিআই-এর প্রকাশিত পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দিচ্ছে তাঁদের দাবির অসারতা। কর্পোরেট সংস্থা ও শিল্পপতিদের সঙ্গে শাসক দলের গোপন বোঝাপড়া দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। বিজেপিই নির্বাচনী বন্ড থেকে আর্থিক ভাবে সবচেয়ে বেশি লাভবান। তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেকেরও বেশি (৫৭ শতাংশ) বিজেপি একাই পেয়েছে। কংগ্রেসের হাতে গিয়েছে ১০ শতাংশ। বাকি অংশ তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্যান্যদের ঝুলিতে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা কাদের, তারা কেনই বা দিচ্ছে?
নির্বাচনী বন্ডের সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, কেন বিজেপি মুখে জনস্বার্থের কথা বললেও একটার পর একটা জনস্বার্থ-বিরোধী নীতি নিচ্ছে। মানুষের উপর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে চাপিয়ে দিচ্ছে সে সব নীতি। রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, বিদ্যুৎ, তেলের খনি, কয়লা খনি, ইস্পাত, টেলিকম— সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদকে জলের দরে ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল। বেসরকারিকরণ, বিলগ্নিকরণ করছে। আয়কর দফতর, ইডি, সিবিআই-কে বিজেপি নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার কাজে লাগাচ্ছে। বন্ড কেনার দৌড়ে শীর্ষে থাকা ৩০টি সংস্থার মধ্যে ১৪টির কার্যালয়ে ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরের মতো সংস্থাকে দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সংস্থার হয়রানি হেনস্থা থেকে রক্ষা পেতে এরা বিপুল অঙ্কের বন্ড কিনেছে। আবার, বন্ড কেনার পরেই কয়েকটি সংস্থা বিপুল অঙ্কের সরকারি বরাত পেয়েছে।
সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলতে হবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যর্থতা নিয়ে। বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরি কোথায়? চাষিদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে কি? নারীর নিরাপত্তা কোথায়? দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, জুমলা— এই কি দেশবাসীকে বিজেপির দান?
স্বপন মুনশি, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
বামের অস্ত্র
আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের “অসাংবিধানিক ‘বন্ড’” (২০-৩) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, সাম্প্রতিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পটিকে নাগরিকের বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য জানার অধিকার লঙ্ঘনকারী এবং অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষত কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে কোনও কোনও শিল্পপতির গোপন বোঝাপড়া দেশবাসীর সামনে উন্মুক্ত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আয়কর দফতরকে দেওয়া তথ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বার্ষিক লাভের যে অঙ্ক, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা তারা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা হিসাবে দিয়েছে।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হিসাব-বহির্ভূত কালো টাকা। অথচ, ২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পটি চালু করার সময় সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, এতে নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহারের রমরমা বন্ধ হবে। অথচ, বাস্তব সম্পূর্ণ বিপরীত সাক্ষ্য দিচ্ছে। আবার স্টেট ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে ইডি বা সিবিআই যে সকল সংস্থায় অভিযান করেছে, সেই সংস্থাগুলি অভিযানের কিছু দিন পরেই রাজনৈতিক দলকে বিপুল অঙ্কের চাঁদা দিয়েছে। অর্থাৎ ভক্তি নয়, ভয় থেকেই ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদা দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টতই, দলীয় স্বার্থে ইডি ও সিবিআইয়ের অপব্যবহার হয়েছে।
প্রথম থেকে সিপিএম-সহ বাম দলগুলি নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতা করে এসেছে। তারা দলীয় তহবিলে ওই বন্ড থেকে কোনও অর্থও নেয়নি। এখন দেখার, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ‘নির্বাচনী বন্ড’ বিষয়টি থেকে বাম দলগুলি কতটা লাভ আদায় করতে পারে।
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
লিঙ্গপরিচয়
পড়া ও লেখার ইতিহাস আমাদের জানাচ্ছে, মানবসমাজ প্রথম লিপিবদ্ধ কবিতাটি পেয়েছিল সুমের-এর উর শহরের বাসিন্দা এক নারীর কাছ থেকে, ৪২০০ বছর আগে। তাঁর নাম ছিল এনহেদুয়ান্না। অথচ, আমাদের এই বঙ্গভূমে অনেকে এখনও মেয়েদের কবি হিসাবে মানা দূর, কল্পনাও করতে পারেন না। উদাহরণ— সুবোধ সরকারের লেখা প্রবন্ধ, ‘কবিকে কেন এত ভয়’ (২৪-৩)। তিনি লিখছেন, “কবিতা লিখে কি কবি পারেন তাঁর বান্ধবীকে ফিরিয়ে আনতে?” কোনও নারীর ‘বান্ধবী’ থাকতেই পারে। কিন্তু, প্রাবন্ধিক কি লিঙ্গ পরিচিতি-নিরপেক্ষ ভাবে ‘কবি’ কথাটা ব্যবহার করছেন?
তা-ও মেনে নেওয়া যেত, যদি লেখার পরের অংশে নিপীড়নের মুখে পড়া কবিদের যে-সব নাম তিনি উল্লেখ করেছেন, তাতে কোনও নারীর নাম থাকত। কবিতা লেখার জন্য জেলে গিয়েছেন, নিপীড়িত হয়েছেন, খুন হয়েছেন, এমন নারীদের সম্পর্কে জানার জন্য গবেষক হওয়ার দরকার নেই। দশম শতাব্দীতে পারসিক কবি রাবি’য়া বালখির কবিতা লেখার জন্য জেলে যাওয়া থেকে শুরু করে আধুনিক কালে কুর্দিশ কবি বেজান মাতুর, মরম আল মাসরির অত্যাচার সহ্য করার মতো বৈশ্বিক উদাহরণগুলোর পাশাপাশি দেখা যায়, এই দু’বছর আগে তথাকথিত ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ কবিতা লেখার জন্য অসমের বর্ষশ্রী বরগোহাঁইকে কারাগারে নিক্ষেপ। রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে গ্রেফতার কণিকা দেবনাথের পুরুলিয়ার জেলে বসে লেখা কবিতা ‘পুরুলিয়া উইমেন্স জেল থেকে’ এবং ‘পথপ্রদর্শক কাকুর উদ্দেশে’ রাজবন্দিদের রচনা সঙ্কলন, দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পেয়েছে। জানতে চাইলে জানা যায়, সেই চাওয়াটাও একটা শিক্ষাগত অর্জন।
কুমার রানা, কলকাতা-১৬৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy