ক’দিন আগে দেখা গেল, কয়েক জন মহিলা ফুলপাতা নিয়ে কলকাতার ময়দানে বসে করোনা দেবতা বা দেবীর পুজো করছেন। প্রথম ধাক্কায় বিস্ময় জাগালেও, তাঁদের এই কাণ্ড খুব অস্বাভাবিক নয়। অনেক দেবতার সৃষ্টির মূলে ভক্তি নয়, আছে ভয়। এ ভাবেই এক দিন সৃষ্টি হয়েছিল অগ্নি, বরুণ, ইন্দ্রের। প্রাকৃতিক শক্তির রহস্যের সমাধান না পেয়ে, তাদের অলৌকিক মনে করে, বিভিন্ন শক্তির প্রতীক হিসেবে দেবতার কল্পনা করে, মানুষ পুজো শুরু করেছিল।
শিবরাম চক্রবর্তীর ‘দেবতার জন্ম’ গল্পটি মনে পড়তে পারে। লেখক পথ চলতে গিয়ে মাটিতে বসে যাওয়া একটা পাথরে হোঁচট খেতেন প্রায় প্রতি দিনই, এক দিন বিরক্ত হয়ে পাথরটাকে উপড়ে ফেলে দিলেন রাস্তার ধারে। তার পর এক দিন দেখলেন, সেই পাথরটাই অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় ফুল-বেলপাতায় পুজো পাচ্ছে। শহরে তখন বসন্তের মহামারি। পাথর পুজোর ঘটনাটা প্রথমে অগ্রাহ্য করলেও, বসন্তের টিকা নেওয়া সত্ত্বেও ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া চরম নাস্তিক লেখকও শেষ পর্যন্ত বসন্তের ভয়ে সেই পাথরের সামনে মাথা ঠুকলেন।
বসন্তের মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল শীতলা দেবীর। বসন্ত নির্মূল হয়েছে, কিন্তু শীতলা আজও স্বমহিমায় বিরাজমান। একই ঘটনা কলেরার ক্ষেত্রেও। ম্যাকনামারা ১৮১৭-পূর্ব কলকাতার কলেরার ইতিহাস খুঁজে পেয়েছিলেন। তাঁর বিবরণ অনুযায়ী, আঠারো শতকের প্রথম দিকে বাংলার মানুষ কলেরাকে ‘ওলাওঠা’ নামেই জানত। বিশ্বাস করত ওলাওঠার দেবী ‘ওলাবিবি’কে। ইংরেজরাও তখন কলেরা সম্পর্কে অন্ধকারে, এ রোগের ওষুধ, চিকিৎসা ছিল না। তাই ওলাবিবির মন্দির গড়ে উঠল নানা স্থানে। ইংরেজরাও এই দেবতার উপর ভরসা করত, ১৭২০ সাল নাগাদ ডানকান নামে জনৈক ইংরেজ সওদাগর ওলাবিবির মন্দিরের জন্য চার হাজার টাকা দান করেছিলেন। শুধু এ দেশে নয়, ইউরোপের পোল্যান্ডের মানুষও কলেরা থেকে রক্ষা পেতে রাস্তার ধারে ওলাবিবির থান প্রতিষ্ঠা করে প্রার্থনায় জড়ো হত।
নিখিল সুর, কলকাতা-৩৪
অভিজ্ঞতা
সে দিন পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম নিজের কাজে। এক ভদ্রলোক আমাকে তাঁর টাকা তোলার ফর্মটা ভরে দিতে বললেন। ফর্ম ফিল আপ করতে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে যাই। তিনি ৫০ টাকা তুলতে এসেছেন। রানাঘাট রেড জ়োন। এই অবস্থায় মাত্র ৫০ টাকা তুলতে এসেছেন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, তাঁর অ্যাকাউন্টে আর মাত্র ৫০ টাকাই আছে। তিন মাস কাপড়ের মিল বন্ধ। মাইনে পাননি। তাঁর স্ত্রীর শরীরও খুব খারাপ। ভদ্রলোকের হাতে ১০০ টাকা দিয়ে ছিঁড়ে ফেললাম ফর্মটা। মনে হল, এই ভদ্রলোক একা নন। আমাদের চারিদিকে এমন অনেক মানুষ আজকাল ঘুরে বেড়াচ্ছেন, না পারছেন ভিক্ষা করতে, না পারছেন কাজে যোগ দিতে।
সুদীপ্ত বিশ্বাস, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, নোকাড়ি উত্তরপাড়া, নদিয়া
বিদেশি পণ্য
‘বিদেশি বর্জন’ (৮-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি সম্পর্কে এই চিঠি। বর্তমানে মুক্ত অর্থনীতির বাজারে বিদেশি বর্জন কথাটি বেমানান লাগলেও, দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ দিতে এবং বেকার সমস্যা সমাধান করতে বিদেশি বর্জন কথাটির যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। বিদেশি পণ্য হয়তো দামে সস্তা। ক্রেতারা কম দামে পণ্য কিনতে পারছেন। কিন্তু সেটাই অর্থনীতির শেষ কথা নয়।
আমি নিজে প্লাইউড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে বুঝেছি, চিনা পণ্য কী ভাবে দেশীয় শিল্পকে গলা টিপে মেরে ফেলছে। আগে দেশে তৈরি বিভিন্ন নকশার কাঠের বিট আমরা বিক্রি করতাম। এটি কাঠের আসবাব তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। দাম একটু বেশি হলেও, বেশ টেকসই, মজবুত। কিন্তু বর্তমানে কাঠের বিটের বাজার একচেটিয়া দখল করে নিয়েছে ‘চায়না বিট’। প্লাইউডের তৈরি এই বিট মজবুত না হলেও, দামে অনেকটাই কম বলে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা বেশি। দেশীয় বিট তৈরির কারখানা প্রায় বন্ধের মুখে। হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচ্যুত। প্লাইউডের ক্ষেত্রেও, সস্তা বলে ‘চায়না প্লাই’ থাবা বসিয়েছে বাজারে। নিজের ছোট্ট অভিজ্ঞতা থেকে দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে বিদেশি পণ্য বর্জনের উপযোগিতা বুঝতে পেরেছি।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
উদ্ভট সিদ্ধান্ত
দিল্লি রাজ্যের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই রাজ্যের সব সরকারি এবং প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতালে দিল্লির স্থায়ী বাসিন্দাদেরই চিকিৎসার সুযোগ মিলবে। অন্য রাজ্যের মানুষের সুযোগ শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ নাও মিলতে পারে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত রাজ্য সরকার নিতে পারে? দেশের ভিতরে দেশ! এই সিদ্ধান্ত ‘স্বাস্থ্য রক্ষার অধিকার’ আর ‘জীবনের অধিকার’ (আর্টিকল ২১)-এর সংবিধানের ধারাকে লঙ্ঘন করার শামিল। মানবাধিকার বিরোধীও বটে। চরম সঙ্কটকালে, মানুষের প্রাণ রক্ষার দায় ফেলে, রোগী দিল্লি রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কি না, তার প্রমাণ যাচাই করা হবে!
দিল্লির মন্ত্রিসভা প্রেরিত এই বিশেষ বিলটিতে সায় দেননি দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর, হাওড়া
ডাকের হাল
নদিয়ার কল্যাণীর প্রধান ডাকঘর থেকে গত ২১ এপ্রিল এবং ৫ মে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি স্পিডপোস্ট মারফত কলকাতার গল্ফগ্রিনের ঠিকানায় পাঠাই। প্রতিটি চিঠি বাবদ ৪১ টাকা করে নেওয়া হয়। ভেবেছিলাম লকডাউনের মধ্যে হয়তো একটু দেরিতে হলেও চিঠি দুটি প্রাপকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। কিন্তু, দুটো চিঠির একটিও অন্তত ৯ জুন পর্যন্ত পৌঁছয়নি। ট্র্যাকিং করেও চিঠি দুটির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। স্পিডপোস্টেরও যদি এই হাল হয় তবে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে কেন এই সময় চিঠি নিচ্ছেন?
সুরজিৎ বিশ্বাস, কল্যাণী, নদিয়া
রেল প্রকল্প
উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গকে রেলপথে সংযুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৯ সালে তিনি দ্বিতীয় বার রেলমন্ত্রী হয়ে বোঁয়াইচণ্ডী থেকে খানা জংশন পর্যন্ত রেল লাইনের প্রস্তাব রেখেছিলেন। ২০১০ সালে ওই রেল প্রকল্প বাজেটে পাস হয়েছিল। কিছুটা কাজ শুরু হয়েছিল, তার পর থমকে গিয়েছে। এই রেল পরিষেবা চালু হলে দক্ষিণ দামোদর, হুগলি, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরের মানুষদের অনেক সুবিধা হবে। এই রেলপথে খুব সহজেই দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর-শান্তিনিকেতন ও উত্তরবঙ্গ যাওয়া যাবে।
সুকমল দালাল, মেটেডাঙ্গা, পূর্ব বর্ধমান
রিজ়ার্ভ ফান্ড
টানা লকডাউনে শ্রমিকের সঞ্চয় শেষ। কোম্পানিগুলো ঠারেঠোরে বলছে, শ্রমিক ছাঁটাই করবে, কাজের সময় বাড়াবে, বেতন কমাবে, কারণ লকডাউনে তাদেরও অবস্থা খারাপ। কোম্পানি আইন অনুযায়ী লভ্যাংশের একটি সুনির্দিষ্ট অংশ অভূতপূর্ব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রিজ়ার্ভ ফান্ড নামক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখতে হয়। সেই টাকাগুলো গেল কোথায়? করোনা তাণ্ডব এবং আমপান নিশ্চয় অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। তাতেই যদি না কাজে এল, তা হলে আইন করে রাখার ব্যবস্থা কিসের জন্য?
কাঞ্চন কুমার মাইতি, চড়কডাঙ্গা, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy