Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Bardhaman Water Tank Collapsed

সম্পাদক সমীপেষু: উপেক্ষিত নিরাপত্তা

এক জন নিত্যযাত্রী হিসাবে বর্ধমান রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষের গাফিলতি দেখছি দিনের পর দিন। ভিড়ের সময় রেল পুলিশ সাধারণ যাত্রীদের না সামলে দূরে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

Bardhaman Water Tank Collapsed

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৩৬
Share: Save:

“‘অমৃত স্টেশন’ বর্ধমানে ভাঙল ট্যাঙ্ক, মৃত ৩” (১৪-১২) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলি, ভাড়া বাড়ছে, টিকিট ক্যানসেল করার মাসুল দ্বিগুণ হচ্ছে, প্রিমিয়াম ট্রেনের বিজ্ঞাপনের বহরের তুলনায় যাত্রী-সুরক্ষা বাড়ছে না। ভারতীয় রেলওয়ে আইনের (১৯৮৯) ৬ নম্বর ধারায় কমিশনারের কথা বলা হয়েছে, যিনি তদারকি করে সেই রিপোর্ট তুলে ধরবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। ১১ নম্বর ধারাতে যাত্রী-সুরক্ষার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। তা সত্ত্বেও রেল নিষ্ক্রিয়। ভাড়া বাড়বে, কিন্তু পরিকাঠামো বাড়বে না।

এক জন নিত্যযাত্রী হিসাবে বর্ধমান রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষের গাফিলতি দেখছি দিনের পর দিন। ভিড়ের সময় রেল পুলিশ সাধারণ যাত্রীদের না সামলে দূরে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অবৈধ ভাবে রেল লাইন পারাপার করার মিথ্যা অভিযোগে প্রতি দিন নিরীহ নিত্যযাত্রীদের জরিমানা দিতে হয়। অথচ, বৃষ্টির জল শেডের নীচ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। সে বিষয়ে দেখাশোনার বালাই নেই। তা ছাড়া চলমান সিঁড়ি বেশির ভাগ দিনই বন্ধ। এ ভাবেই মানুষ প্রতি দিন যাতায়াত করেন। অভিযোগ জানিয়ে লাভ নেই, তাই অসহায় মানুষ দুর্ভোগকে জীবনের অভ্যাস করে নিয়েছেন। রেলও জীবন নিয়ে খেলছে? একটু দেখাশোনা করলে জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে নিরীহ মানুষগুলোর এত বড় ক্ষতি হয়তো আটকানো যেত। কে দায় নেবে?

তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান

চুক্তিকর্মীর দশা

‘চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়ে প্রশ্ন কোর্টের’ (১২-১২) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। বিচারব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে, এবং হাই কোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতির প্রতি সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলিতেও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঠিকা ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা নিযুক্ত আছেন বছরের পর বছর। মাননীয় প্রধান বিচারপতির উল্লিখিত ১২,০০০-১৩,০০০ টাকা নয়, অনেক দফতরে ঠিকা ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা তার থেকেও কম টাকায়, এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজ করছেন। সামাজিক সুরক্ষা (ইপিএফ, ইএসআই, গ্র্যাচুইটি, বোনাস ইত্যাদি) ছাড়াই, স্বল্প বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। খোঁজ নিলে জানা যাবে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও স্থায়ী সরকারি চাকরি না পেয়ে বেকারত্বের জ্বালায় বিএসএনএল, রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের দফতরগুলিতে দু‌’দশকেরও বেশি সময় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন অধিকাংশ ঠিকাকর্মী। এঁদের অনেকে মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ, আজ যদি এই সমস্ত শিক্ষিত ঠিকা ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীর উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে স্থায়ী কর্মচারীর মর্যাদা দেওয়া হত, কিংবা নিদেনপক্ষে সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ন্যায্য বেতনের ব্যবস্থা করা হত, তা হলে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারতেন। এঁদের স্থায়ী কর্মচারীর মর্যাদা দেওয়া যায় কি না, নিদেনপক্ষে ন্যায্য সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থার মাধ্যমে এবং বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি।

ইন্দ্রনীল দে, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা

রাজনীতির পথ

ছাত্র-রাজনীতির আয়না দিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতির ছবি দেখে হতাশ স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রাজনীতি যখন জীবিকা’ (১৫-১১) প্রবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সিস্টেম তাকে গিলে খাবে না তো?’ এই ব্যর্থ সিস্টেম-এর দায় থেকে আমরা মুক্ত নই। তাই আগে আত্ম-সমালোচনা দরকার— রাজনীতি কেন সমাজ, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের উদ্দিষ্ট, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কল্যাণের পথ থেকে ভ্রষ্ট হল? সেখানে জীবিকার ভূমিকা কেন ও কী ভাবে আসা উচিত ছিল?

১৯৪৭-পূর্ব পরাধীন ভারতে ক্ষুদিরাম-কানাইলাল-ভগৎ সিংহ-সূর্য সেন-চারুচন্দ্র প্রমুখের ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির জন্য স্বাধীন ভারতের নাগরিক ধন্য, কৃতজ্ঞ। স্বাধীনতার পরে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নতুন দেশ গড়তে চাইল, শাসনব্যবস্থার মৌলিক রূপান্তর চাইল। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে বিষয় নিয়ে পড়তে এসেছি, সেটি ভাল করে শেখা। এই বিষয়ভিত্তিক ‘শেখা’ তখনই সার্থক হয়, যখন দেশের মৌলিক কাঙ্ক্ষিত শাসনব্যবস্থার সঙ্গে তার সাযুজ্য থাকে। নচেৎ তা স্বার্থপর হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা তো কোনও জাদুকাঠি ছিল না, যার ছোঁয়ায় সোনার ভারত জন্ম নিয়েছিল এক লহমায়। নানা ধর্ম, ভাষা, মত, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, জাত ইত্যাদি নিয়ে সমস্যাগ্রস্ত ছিল ভারত, আহত ছিল রাজনীতির অনৈক্যের জন্য। এই রাজনীতিও ‘ভাল করে শেখা’র দরকার ছিল, যা উপেক্ষিত হয়ে গেল। লেখাপড়া শিখে দেশগড়ার আদর্শে ত্রুটি থেকে গেল।

পরাধীন ভারতে ছাত্র-রাজনীতির প্রধান আদর্শ যদি দেশের মুক্তি হয়, তা হলে সদ্য-স্বাধীন ভারতেও ছাত্র-রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল নতুন দেশ গড়ার পথ খুঁজে বার করা। সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, মতাদর্শ ইত্যাদিকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার ছিল। একটা অন্য রকম স্বাধীনতা সংগ্রামের দরকার ছিল। তবু বিশ্বব্যাপী ঠান্ডা যুদ্ধের বিরুদ্ধে তথাকথিত ছাত্র-রাজনীতি সজাগ ছিল। ক্রমে দেশীয় শিক্ষাপদ্ধতি ও জ্ঞানচর্চা উপেক্ষিত হল, পাশ্চাত্য শিক্ষানীতি প্রাধান্য পেল। বিগত দু’দশকে দেখা যাচ্ছে, রাজনীতি ও শিক্ষানীতির আলোচনা, আত্ম-সমালোচনা এবং গঠনমূলক সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গির বড় অভাব। শুধুই কূটকচালিতে ব্যস্ত রাজনীতি। শিক্ষানুরাগী, বুদ্ধিজীবীরা ভয়ে বা ভক্তিতে নীরব। ইউক্রেন-রাশিয়া, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির প্রতিবাদ সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থা বেশি দিন চলতে পারে না। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি তাদের মতো করে এক দিন পথ তৈরি করে নেবে। জীবিকা ও রাজনীতির চরিত্র বদল করে নেবে।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

বেনোজল বেশি

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, ছাত্র-রাজনীতি সংস্কৃতির আয়না। অন্তত সত্তরের দশকে তাই ছিল। বর্তমানে রাজনীতির উন্নতিসাধন তো দূর স্থান, তার দুরবস্থা এক জন নৈতিকমনস্ক মানুষের অবনমনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খারাপ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার জন্য যে আন্দোলন গড়ে উঠা উচিত, তা তো হয়ই না, বরং মানুষ নিজেই পরিবর্তিত হয়ে খারাপ ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছাত্র-রাজনীতিতে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন। কোনও ছাত্র বৈষম্যের শিকার না হয়, সে দিকে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এখন দেখা যাচ্ছে, ছাত্র ভর্তির সময় উৎকোচ নিয়ে ভর্তি করা রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্ররা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকবে, সে দিকে লক্ষ রাখে। ফলে মেধাবী ছাত্র ক্রমশ রাজনীতিকে ঘৃণার চোখে দেখে। আমরা ভাবি, শিক্ষিত মানুষ রাজনীতিতে আসছেন না কেন? খারাপ ব্যবস্থা তাকে প্রতিহত করছে। রাজনীতিতে দলদাস হলে কুকর্ম ঢাকা দেওয়া যায়। মুক্তচিন্তার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করে মানুষের বিরক্তি উৎপাদন করে কাজের কাজ কিছু হয় না। রাজনীতি আদর্শের স্বার্থে করা এক বিষয়। রাজনীতি জীবিকা হলে বেনোজল ঢুকে মানুষের সর্বস্ব লুট করে। আজকাল ছাত্র-রাজনীতিতে স্বাধীন চিন্তার ক্ষমতা প্রায় নেই। যাঁরা মুক্তচিন্তা করেন, তাঁদের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। স্বচ্ছ ভাবনার ছাত্র-আন্দোলন কবে আবার হবে, জানি না।

দিলীপ কুমার চন্দ্র, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE