Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Woman Empowerment

সম্পাদক সমীপেষু: সম্ভাবনার জন্ম

কোভিড আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আবার পাশাপাশি অনেক সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। নতুন নতুন পথ দেখিয়েছে।

An image of Lady

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:০৬
Share: Save:

অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “‘সাধারণ মেয়ে’র বারোমাস্যা” (৪-১১) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম ও মফস্‌সলের স্বল্পশিক্ষিত মেয়ে এবং বিবাহিতা মহিলাদের, বিশেষত যাঁরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল, তাঁদের উদ্ভাবনী শক্তি এবং তা প্রয়োগের মাধ্যমে উপার্জনশীল হওয়া, এক কথায় অনবদ্য। কোভিড আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। আবার পাশাপাশি অনেক সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। নতুন নতুন পথ দেখিয়েছে। উপার্জন করতে গেলে ঘরের বাইরে বেরোতে হবে, এই ধারণার পরিবর্তন অতিমারির সময় থেকে মানুষের মধ্যে গেঁথে গেছে।

কথায় বলে, প্রয়োজনই সব আবিষ্কারের জননী। অতিমারির কারণে যখন ঘরের পুরুষের উপার্জন প্রায় বন্ধ বা সম্পূর্ণ বন্ধের উপক্রম হয়েছিল, তখন ঘরের মহিলারা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বা মফস্‌সলের নিম্নবিত্ত বিবাহিতা মহিলারা অস্ত্র করলেন হাতের স্মার্টফোনটিকে। আর যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে নিলেন ফেসবুক, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সমাজমাধ্যমকে। তাঁরা বিনোদনের যন্ত্রটিকেই তাঁদের উপার্জনের মূলধন করে এগোতে থাকলেন অতিমারিতে বিপর্যস্ত সংসারটিকে বাঁচানোর জন্য। যে যেমন পারেন, তাঁদের শিক্ষা এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তাঁদের বিষয়গুলি ভিডিয়ো করে উপস্থাপিত করলেন সামজমাধ্যমের সামনে। এই উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।

তাঁদের উপার্জনের পথ ঘরে বসেই তাঁরা খুঁজে নিলেন এবং অনেকে সফলও হলেন। তাঁরা এটুকু বুঝেছেন, বিষয়টি যেমনই হোক, তা সে অতি সাধারণ রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো খুনসুটি বা শালীনতা বজায় রেখে কোনও আবেদন, সেই বিষয়টির উপস্থাপনা ঠিকমতো করতে হবে। যাঁরা এটা সঠিক ভাবে বুঝেছেন এবং সেই অনুযায়ী বিষয়টি উপস্থাপিত করেছেন, তাঁরা শীঘ্রই সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছেন। এমনও দেখা গিয়েছে, তাঁদের এই ভিডিয়ো দেখে লেখাপড়ায় শিক্ষিত শহরের অনেক মহিলা বিভিন্ন রকম রান্নাবান্না শিখেছেন, ঘর পরিষ্কার রাখা, সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি শিখেছেন এবং তাঁদের কমেন্ট বক্সে প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

আবার কিছু মেয়ে নিজেরা যে শিক্ষায় বলীয়ান হয়েছেন, সেই শিক্ষার ঝুলি সাজিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য সমাজমাধ্যমে শিক্ষার আসর বসিয়েছেন। এর ফলে, কোভিড বা তার পরবর্তী সময়ে ঘরে বসে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তাদের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠটুকু পেয়েছে। সাধারণ ছাপোষা মহিলাদের এ এক যুগান্তকারী সাফল্য। সম্পূর্ণ নিজেদের চেষ্টায় বা ঘরের পুরুষের সামান্য সহযোগিতায় তাঁরা তাঁদের স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে সফল হয়েছেন।

সন্তোষ কুমার দে, হাওড়া

সিঁদুরে মেঘ

অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। ঘরে বসেও কী ভাবে অতি সহজে উপার্জন করা যায় বা নিজেকে সমাজমাধ্যমের একাংশের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব, সে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে তাঁর লেখায়। ‘গেরস্তালির পুঁজি’কে মূলধন করে একটি কম দামের স্মার্টফোন দিয়ে মেয়েদের হাতে হাতে যে সকল ভিডিয়ো নির্মিত হচ্ছে, তাকে অনায়াসেই মিডিয়া বা ইন্টারনেট-কেন্দ্রিক ‘কুটির শিল্প’ বলে আখ্যায়িত করা যায় কি না, সেটা ভাবা উচিত। এঁরা নিজের ইচ্ছেমতো বিষয় নিয়ে ভিডিয়ো তুলে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে, উপার্জনের পথ খুঁজে নিচ্ছেন।

বৈচিত্রহীন, একঘেয়ে গেরস্তালি কাজের ব্যস্ততা সরিয়ে রেখে, মেয়েরাই এখন ওই সকল ভিডিয়ো নির্মাণে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে। পুরুষরা হয়তো কোথাও কোথাও মেয়েদের সহযোগী বা উৎসাহদাতার ভূমিকায় থাকেন। মেয়েদের একাংশের সমাজমাধ্যমে নিজেদের মেলে ধরার এই আপাত নিরীহ প্রবণতা, বর্তমান সময়ের একটি খণ্ড অংশের সামাজিক চিত্র হলেও ভবিষ্যতে এর অভিঘাতে কোনও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে কি না, সে কথা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যেন তেন প্রকারেণ ব্যক্তিগত আয়ের রাস্তা প্রশস্ত করাই বেশির ভাগ ভ্লগারের একমাত্র উদ্দেশ্য। মহিলা ভ্লগারদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা প্রমাণ করে, মেয়েরা সুযোগ পেলে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম। এক জনের দেখাদেখি অন্য জনও অনুরূপ প্রচেষ্টা চালিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এবং নিজের যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী ভিডিয়ো নির্মাণের কাজ শুরু করে দিতে দ্বিধা করছেন না। ভিডিয়ো নির্মাণের পর, সেটাকে সমাজমাধ্যমে আপলোড করে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে।

এই কাজে কোনও বিশেষ যোগ্যতা বা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে, এমনটাও কেউ মনে করেন না। অন্য দিকে, কোনও ধরনের সামাজিক বা সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ‘যৌন আবেদনকে পুঁজি করে ভিডিয়ো করা’র প্রবণতা বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভিডিয়োগুলির দর্শক সংখ্যা। গাছপালা, লতাপাতা, ফলমূল ইত্যাদি থেকে শুরু করে বিচিত্র বিষয় নিয়ে এমন সব ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, যার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয় না। কে, কোথা থেকে, কোন তথ্যের ভিত্তিতে ভিডিয়োটি প্রস্তুত করেছেন, তার কোনও প্রমাণ বা সূত্র উল্লেখ করার দায় কারও নেই। অধিকাংশ ভ্লগারেরাই নিজেদের কল্পনাপ্রসূত বিষয় নিয়ে ভিডিয়ো নির্মাণ করছেন। প্রতি দিনই নতুন নতুন বিষয় সমাজমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। সব ভ্লগারেরাই কম বেশি দর্শক পেয়ে যাচ্ছেন। এতেই উৎসাহিত হচ্ছেন সাধারণ ঘরের মেয়েরা। কারও কোনও কাজে লাগুক বা না লাগুক, ক্ষণিকের তৃপ্তিই যেন শেষ কথা। কিছু কিছু ভিডিয়োতে তো লাগামছাড়া অ-ভদ্রতার দৃশ্য প্রদর্শিত হয়। সেগুলি দেখার দর্শকদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বহু বয়স্ক ব্যক্তিও রয়েছেন। অনেকে তো প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে নানা ধরনের বিপত্তির সম্মুখীনও হচ্ছেন। সেই সব সংবাদের দু’-একটি বিবরণ মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। কেউ যদি মূল্যবোধ, নীতিবোধ, রুচি বিকৃতির সম্ভাবনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলেন, তাঁর গায়ে নীতি পুলিশের তকমা সেঁটে দেওয়া হয়। ফলে চোখ বন্ধ করে সব কিছু মেনে নেওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এই সব ভিডিয়ো ঠিক কী ধরনের প্রভাব শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মনে বিস্তার করছে বা কতটা পড়াশোনার ক্ষতি সাধন করছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন চিন্তাশীল মানুষেরা এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।

মানতে এতটুকু দ্বিধা নেই, অনেকেই এখন সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। ছেলেমেয়েরা সহজেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে উন্নত পরিষেবার দ্বারা বিভিন্ন ভাবে সমাজকে সমৃদ্ধও করছে। বর্তমান বিশ্বের অসংখ্য মানুষ এই পরিষেবা নিতে এবং দিতে প্রস্তুত। তথ্যে ভুল না থাকলে, সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক বা শিক্ষা বিষয়ক ভিডিয়ো নির্মাণের পর তা প্রচার করে উপার্জনের সঙ্গেই সমাজের কল্যাণ করা সম্ভব। সমাজমাধ্যম অবশ্যই পারে সৃষ্টিশীল কাজের প্রচার, প্রসার ও উৎসাহদাতার ভূমিকা নিতে। এখানে নারী-পুরুষ প্রভেদ করা উচিত নয়।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, এক দল সুযোগসন্ধানী কোনও রকম যোগ্যতা ও শিক্ষা ছাড়াই সমাজমাধ্যমে ভুলে ভরা তথ্য পরিবেশন করে বা চটুল যৌন আবেদনকে মনোরঞ্জনের উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে উপার্জনের সুযোগ নিচ্ছেন।

রতন রায়চৌধুরী, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

ভুল দিন

গত ১৬ নভেম্বর ‘দিনপঞ্জিকা’ কলমে প্রকাশিত হয়েছে যে, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুদিবস ১৬ নভেম্বর। তথ্যটি ভুল। কবির মৃত্যুদিবস ২৮ অক্টোবর ২০০২, ১৬ নভেম্বর নয়।

রাধিকানাথ মল্লিক, কলকাতা-৭

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Empowerment financial growth Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE