Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Society

সম্পাদক সমীপেষু: জাগ্রত হৃদয়

প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই, ইলাহাবাদ-সহ কিছু শহর ছিল অতি প্রতিভাবান মানুষের কর্মস্থল এবং সেই শহরগুলিতে গড়ে উঠেছিল উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার প্রতিষ্ঠান।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ ০৫:৪৭
Share: Save:

কৌশিক বসু তাঁর “‘নরম শক্তি’র সাধনা” (২৮-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন যে, এই নরম শক্তির কথা তুলনায় অনেক কম আলোচিত হয়, কিন্তু গুরুত্ব তার তিলমাত্র কম নয়। এ কথা খুব সত্যি। সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্পকলা মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার পরিসর প্রসারিত করে, সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্তির রসদ জোগায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, শিল্প-সংস্কৃতি সচ্ছল মানুষের বিলাস। কিন্তু প্রবন্ধকার নানা তথ্য ও দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়েছেন, এই নরম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে অনেক দেশ তার চেয়ে বেশি সামরিক শক্তিধর, অর্থশালী রাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে।

নরম শক্তি কী ভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক হয়ে ওঠে, সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার দরকার। বিজ্ঞানের শিক্ষা কী করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে সত্যের দিকে নিয়ে যায়, সাহিত্য কী করে মনকে প্রস্তুত করে, সঙ্গীত, চিত্রকলা কী করে মনকে প্রসারিত করে, তার আলোচনা হওয়া খুব প্রয়োজন। নানাবিধ সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে মানুষে-মানুষে সম্পর্কের স্বাভাবিক ছন্দকে তছনছ করে, তার পর জাতীয়তাবাদের গান গাইলে কী হবে? এক লাফে হিংসা উধাও হয়ে যাবে, দেশভক্তি গজিয়ে ওঠবে, এমনটা হওয়ার কথা নয়। ভক্তি, ভালবাসা হৃদয়ের ব্যাপার। সেই হৃদয় গড়তে নরম শক্তির সাধনা ছাড়া কোনও উপায় নেই। মানুষকে বিশ্বমানব হয়ে উঠতে গেলেও এটাই উপায়। যে অস্ত্র মানুষ বানিয়েছে, তার পরিণাম প্রতিনিয়ত মানুষই টের পাচ্ছে। মানুষের জাগ্রত হৃদয়ই হিংসা ভোলার মোক্ষম অস্ত্র।

এই নরম শক্তি জনগণকে মুক্ত চিন্তা করার যে জায়গা করে দেয়, তা উন্নত সমাজ গঠনের সহায়ক। উন্নত সমাজের কাছে রাষ্ট্রের ঔদ্ধত্য টেকে না। জনগণের কণ্ঠ রোধ করা, মানুষকে ভুল তথ্য দেওয়া কিংবা সঠিক তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করার আগে রাষ্ট্রকে দু’বার ভাবতে হবে। উপযুক্ত সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও এই নরম শক্তির আহরণ জনগণের খুব প্রয়োজন।

প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই, ইলাহাবাদ-সহ কিছু শহর ছিল অতি প্রতিভাবান মানুষের কর্মস্থল এবং সেই শহরগুলিতে গড়ে উঠেছিল উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার প্রতিষ্ঠান। দেড় শতকের এই ঐতিহ্যকে দিব্যি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত স্বাধীনতার পরে। কিন্তু তাকে আর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ভারতে যে সহনশীল শক্তি আজও অবশিষ্ট আছে, তাকে যে কোনও মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

দুর্গেশ কুমার পান্ডা, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

শৃঙ্খলার শিক্ষা

রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি মজবুত হলে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী বলা যায়। তবে যে শক্তির উপর একটি দেশ এগিয়ে যায়, তা হল তার ‘সফট পাওয়ার’ বা ‘নরম শক্তি’। তা অর্জিত হয় শিক্ষা, বিজ্ঞান, সঙ্গীত ও সংস্কৃতির দ্বারা। ‘নরম শক্তি’র চর্চায় প্রভূত বিনিয়োগ করে উন্নত দেশগুলো। উন্নয়নশীল দেশগুলো ওখানেই ভুল করে। স্বাধীনতার পরে ভারতে উচ্চশিক্ষার যে অনুকূল পরিবেশ ছিল, যে সব চিন্তক বা বিজ্ঞানীরা দেশনেতার দ্বারা সরাসরি দেশগঠনের কাজে নিযুক্ত হতেন, তেমন কোনও নিযুক্তির ছবি গত দশকে এ রাজ্য বা রাষ্ট্র দেখেনি। সবটাই রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধির অঙ্ক। স্কুল-কলেজে শিক্ষায় নজর কমেছে। হাজার হাজার সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এ রাজ্যে। কৌশিক বসু হতাশা ব্যক্ত করেছেন, অতীতের কলকাতার গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্যচর্চার পরিবেশ আজ দেখা যায় না। নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায় থেকে শুরু করে কত গুণী শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, প্রতিভাবানদের পীঠস্থান ছিল এই রাজ্য। আজ সে গরিমা কোথায়!

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে আদর্শ নিয়মবিধি পালনে। সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, ঐক্যবদ্ধ বা দলগত ভাবে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা, দেশ গড়ার শিক্ষা পেতে শিক্ষার্থীরা আসে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক থেকে অশিক্ষক কর্মচারী, কেউ যদি শৃঙ্খলা বা সময়ানুবর্তিতাকে গুরুত্ব না দেন, তা হলে শিক্ষার্থীরাও সাহস পায় স্কুলের শৃঙ্খলা ভাঙতে। দৃষ্টিভঙ্গির সংশোধন দরকার। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বা সরকারি প্রকল্পের কাজে লাগানোও বন্ধ করতে হবে। অথচ, প্রাইভেট পরিচালন সমিতির হাতে স্কুলগুলো কী ভাবে সুষ্ঠু শৃঙ্খলার মধ্যে চলে?

সত্তরের দশকে দেখা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ‘ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম’-এর অধীনে প্রোগ্রাম করে স্কুল-কলেজের সীমার বাইরে সামাজিক প্রকল্পের কাজে ছাত্রছাত্রীদের সাময়িক নিয়োজিত করা হত। এলাকার লোকজনদের নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে গিয়ে সমস্যার খুঁটিনাটি জানা, দলবদ্ধ ভাবে রাস্তাঘাট সাফ, জল অপচয় বন্ধ করলে জনসচেতনতার পাঠ লাভ হয়। নইলে অন্ধ রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে তরুণ-তরুণীরা মিছিলে হাঁটে। প্রতিবাদী সত্তার বিকাশ প্রয়োজন সর্বস্তরে। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন, ‘নরম শক্তি’র পাঠ দিলে এবং কণ্ঠরোধ না করলে, উত্তম বিকল্প মানুষই বেছে নেবেন।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

ন্যায়ের পথ

কৌশিক বসুর প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। সদ্য-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আমাদের দেশে রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। তার উপরে ছিল দেশভাগের দগদগে ক্ষত, শরণার্থী সমস্যা। সেই সময়ে জওহরলাল নেহরুর বিকল্প কে হতে পারতেন?

নেহরুর কাছে এক বার জানতে চাওয়া হয়েছিল— স্বাধীনতা লাভের পর কোন জিনিসটা তাঁকে সবচেয়ে বেশি বেগ দিয়েছে? নেহরু উত্তরে বলেছিলেন, “একটি ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রকে ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা। এবং বোধ হয় একটি ধৰ্মপ্রাণ দেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ে তোলা।” দেশের পরিচালক নেতাদের প্রায় সবাইকেই দেখা যায় এখন কোনও না কোনও ‘ধর্মতলায়’। বর্তমান ধর্মগুরুর সংখ্যা আর তাঁদের নিজস্ব সৌধ সকল দেখে মিলিয়ে দেখতে হবে, কেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ে তোলা সে দিন ছিল ভয়ানক কঠিন ব্যাপার! নেহরু ছিলেন দূরদর্শী। স্বাধীন ভারতে গোড়াতেই নরম শক্তির সাধনার সুরটি তিনিই সর্বাগ্রে বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই জন্য নানা ছোটবড় দাঙ্গা সত্ত্বেও দেশের মানুষের একতার বোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। আজকের মেধা আর সংস্কৃতির যে বহুমাত্রিক বিকাশ, তার প্রশস্ত পথ নেহরুরই রচনা, যাকে তাঁরই ভাষায় বলা যায় ‘ন্যায়পরায়ণতার পথ’। কৌশিক বসু এই পথে আমাদের দেশের মেধাশক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে তার মহান কৃষ্টি আর সংস্কৃতিকে যুক্ত করে যথার্থ নামকরণ করে বলেছেন যে, এ হল ‘নরম শক্তির সাধনা’। এই শক্তির সাধনার পথই ভবিষ্যৎ ভারতবর্ষ নির্মাণের পথ।

নির্মাণের কথা এল যখন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কথা উল্লেখ করতেই হয়। তিনি ন্যায়ের বহুত্বকে এই রাজপথে আগেভাগেই যুক্ত করে দিয়েছেন ন্যায়-বিচার— সম-সুযোগ, সম-মর্যাদা, সম-বিচার আর সম-উন্নয়নের সঙ্গে; অসামান্য ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, এ হল আলোকিত ন্যায়ের পথ!

বিমল জানা, বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর

শিয়রে সঙ্কট

‘উত্তাপের সীমা’ (২৫-৫) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে প্রকাশ, ২০২৩ সালে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১৭৪ বছরের রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তুলনায় ২.০৭ সেলসিয়াস বেশি। অর্থাৎ বিপদসীমা অতিক্রান্ত। বাঁচার একটাই উপায়— ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ২৮-৪২ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে, ও অরণ্য সৃষ্টি করতে হবে। দেশের নতুন সরকারের উচিত ২০৪৭ সাল নয়, ২০৩০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা রেখে গ্রিন এনার্জিকে গুরুত্ব দেওয়া।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Society India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE