—ফাইল চিত্র।
“‘বড়’ করে ভাবা বন্ধ” (১২-১২) শীর্ষক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধে প্রসঙ্গে দু’-একটি কথা, যা আবার আগুন উস্কে দিল মাথার মধ্যে। ‘বাঙালি’ প্রসঙ্গের আগে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গান শুরু হচ্ছে ‘বাংলা’ শব্দটির প্রয়োগে। দু’টি ভিন্ন ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ দু’ভাবে ব্যবহার করেছেন শব্দটি। প্রথম কয়েকটি ছত্রে শুরুই হচ্ছে বাংলার পরিবেশ ও প্রকৃতি বর্ণনায়। ‘মাটি’, ‘জল’, ‘বায়ু’ এবং ফল— যা প্রকৃতিপ্রদত্ত। হয়তো সে জন্যই ‘পুণ্য হউক’— ভগবানের (বাংলা ভাষায়) কাছে সেই ‘অমৃত পরশ’-এর প্রার্থনা। দ্বিতীয় পর্বে এসে লিখেছেন বাংলার ‘ঘর’, ‘হাট’, ‘বন’, ‘মাঠ’— যেখানে তাঁর পৃথক প্রার্থনা ‘পূর্ণ হউক— হে, ভগবান’। ফলে ‘বাংলা’ শব্দটির প্রয়োগে এখানে তাঁর প্রার্থনা মানুষের শক্তি, বুদ্ধি, পরিশ্রম ও কর্ম-প্রেরণার কাছে, একমাত্র যা পূর্ণতা এনে দিতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দই সুচিন্তিত অর্থবহ এবং অব্যর্থ।
পরের ছত্রগুলিতে, ‘বাঙালি’ শব্দটির প্রয়োগ প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, বিশ্বমানবতা বোধের আলোয় যাঁর বিশ্বাস ও বিস্তার, তিনি নিশ্চয় আলটপকা একটা শব্দ বসিয়ে ফেলেননি। ঘরকুনো, অনুকরণপ্রিয়, ঈর্ষাকাতর, এবং আচার-সর্বস্ব বাঙালির পাশাপাশি আরও এক দল ‘বাঙালি’কে নিজের চার পাশে এবং পূর্বজদের মধ্যেও দেখেছিলেন, যাঁরা একটা গোটা জাতির জীবনে ‘পণ’, ‘আশা’, ‘কাজ’ এবং ‘ভাষা’র নিরিখে ছিলেন নেতৃত্বস্বরূপ। এই চারটি চরিত্র-স্বরূপকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রার্থনা ও মন্ত্রের মতোই তাই তিন বার উচ্চারণ করে লিখেছেন— ‘সত্য হউক’...। আর পরের স্তবকেই আবার ‘বাঙালি’ প্রসঙ্গে উল্লেখে এনেছেন ‘মন’ ‘প্রাণ’ এবং যত ‘ভাই বোন’-এর সংযোগ। অর্থাৎ, যূথবদ্ধতার প্রার্থনায়— ‘এক হউক’! এ যেন জনগণের মনের অধিনায়কের খোঁজে বার হয়ে, পথে নেমে জয়ধ্বনি দিতে দিতে আহ্বান।
দুঃখ এই যে, গানটির মর্মে প্রবেশ না করে, এর প্রেক্ষাপট বিচার না করে ‘বাঙালি’ শব্দটিকে লোপাট করে দেওয়া হল। নির্বাচিত সরকারের অনুপ্রবেশকারীর মতো এই আচরণ এবং সাংস্কৃতিক দুর্বৃত্তায়নকে মেনে নিয়ে উদ্বোধনী সঙ্গীতও গেয়ে গেলেন এক দল শিল্পী। তা শুনেও রা কাড়লেন না অযুত দর্শক। মনে পড়ছিল সুচিত্রা মিত্রের কথা। একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ভিন্ন সুরে ‘জনগণমন’ গানটি গাওয়া শুরু হতেই দর্শকাসন থেকে ছুটে এসে একাই রুখে দিয়েছিলেন সে গান। আজ অবধি আর কখনও কারও সাহস হয়নি ওই গান ভিন্ন কোনও সুরে গাইবার। অসামাজিকতার দায়ে লেখক এবং তাঁর বইকে সরকারি ভাবে ‘নিষিদ্ধ’ করা যায়; টেনে আনা যায় আদালত চত্বরে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের এই অনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন রুখতে কোন আইনে কোথায় সুবিচার দাবি করা যায়! কারণ, গানটি আমাদের ঠাকুমা-ঠাকুরদাদাদের আমল থেকেই চর্চিত এবং আশ্রয়স্বরূপও। ফলে, গানটির প্রেক্ষাপট এবং আবেদন ঐতিহাসিক দলিলের মতো, যাকে ছোঁয়া যায় না। তার অন্যথা হলে, সংস্কৃতির ‘সার্চ রেকর্ড’-এও গোলমাল দেখা দেবে।
শুধুমাত্র লেখালিখির মাধ্যমে প্রতিবাদ না সেরে, পথে নেমে এ গান গাইতে গাইতে, সম্মিলিত শক্তিতে রুখে দেওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথ জীবিত থাকলেও তাই করতেন।
মন্দার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৪৫
অ-বিকৃত
‘রবীন্দ্রনাথের দোহাই’ (১১-১২) সম্পাদকীয়টির পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। গত ৫ ডিসেম্বর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কয়েক বার নাচের ছন্দে পা মেলান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— এই খবরটি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হলেও, চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনায় যে রবীন্দ্রসঙ্গীতের শব্দ বদল করে গাওয়া হয়েছিল, সেটা তেমন ভাবে প্রচারিত হয়নি। মাসকয়েক পূর্বে যখন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ ২০ জুনের পরিবর্তে পয়লা বৈশাখ দিনটিতে করার প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক বসেছিল, তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি রাজ্যের গান হিসাবে ব্যবহৃত হবে এবং ‘বাঙালির প্রাণ বাঙালির মন’ বললে বাংলার সব মানুষকে বোঝায় না, তাই ‘বাংলার প্রাণ বাংলার মন’ গাওয়া শ্রেয়। এই প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গেই পারিষদবর্গের কেউ কেউ সায় দিয়েছিলেন, কিন্তু অনেক লেখক এবং বুদ্ধিজীবীই এতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ভেবে দেখেননি, এই গানের প্রথম দুই স্তবকের ‘বাংলা’ থেকে কবিগুরু কেন পরের দু’টিতে ‘বাঙালি’ লিখলেন। সম্প্রতি এ আর রহমানের কম্পোজ়িশনে কবি নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি নিয়ে সমাজমাধ্যম এবং সংবাদপত্রে ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। সেই সময়ে নজরুলের সৃষ্টির প্রতি মানুষের ভালবাসা দেখে মন উদ্বেল হয়েছিল।
কিন্তু এ বার! এ বার যেন সে ভাবে প্রকাশ্য প্রতিবাদ চোখে পড়ল না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাখিবন্ধনের জন্য রবীন্দ্রনাথ যখন গানটি লিখেছিলেন, তখন তিনি সব সমাজকে নিয়ে কথা বলেছিলেন, যাঁরা বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু এখন বাংলায় বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়, ধর্মের মানুষ বাস করেন। তাই রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে লিখতেন “বাংলার প্রাণ বাংলার মন।” এই কি রাজনীতি, যার জন্য বাঙালি তার সাহিত্য-সংস্কৃতি জলাঞ্জলি দেবে! রবীন্দ্রনাথের গান বিকৃত করা যায় না। নেতারা আসবেন-যাবেন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থাকবেন। তাঁরা শাশ্বত, অমর।
সুপ্রিয় দেবরায়, বরোদা, গুজরাত
বৃথা কালক্ষেপ
‘ব্রাত্য-বৈঠক শেষে আশ্বাস ও আশা, দিশা এখনও অধরা’ (১২-১২) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বলতেই হয়, কেন এত বিলম্ব? পশ্চিমবঙ্গ সরকার, শিক্ষা দফতর বা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এত দিন কেন অপেক্ষা করছিলেন? তাঁরা কি ভাবছিলেন, যদি যোগ্য প্রার্থীরা এই ভাবেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পথে বসে থাকে, থাক না। ধর্মতলায় কোনও কার্নিভাল, বা বিশেষ কোনও সরকারি অনুষ্ঠানের সময়ে তাদের পুলিশ দিয়ে তুলে দিলেই হল। কিংবা তাদের আড়াল করে সারা দেশ, তথা বিশ্বকে জানান দেওয়া হয়, রাজ্যের মানুষের কোনও অভাব-অভিযোগ নেই। কিন্তু, সত্যিই কি তাই? না কি, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এই পন্থা অবলম্বন করা?
কোথাও ভুলের জন্যই এই জটিলতা, দাবি করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কিন্তু সেই ভুলের দায় কার? কুণালবাবু কি জানেন না, কার দোষে আজ হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থীকে পথে বসে থাকতে হচ্ছে? ‘তিনি’ই অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাঁচানোর তাগিদে তড়িঘড়ি সুপার নিউমারারি পোস্ট সৃষ্টি করেন, এবং ক্যাবিনেটে পাশ করান। জোর গলায় বলেন, তিনি কারও চাকরি যেতে দেবেন না। অর্থাৎ, অযোগ্য যারা, তাদেরও চাকরি সুনিশ্চিত করা হবে। এর ফলে যে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে, তার জেরে মামলার ফলে অনেক সময় নষ্ট হবে। এই ধরনের আইনি জটিলতা রাজ্য সরকার নানা ক্ষেত্রে তৈরি করে, যার আর একটা উদাহরণ সরকারি কর্মচারীদের ডিএ। আশঙ্কা হয়, এই ভাবে কালক্ষেপ করাটাই সরকারের উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে।
তপন কুমার ঘোষ, শ্রীরামপুর, হুগলি
কৃপা নয়
তারক সাহার ‘বার্ধক্যের অভিশাপ’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২-১১ ) চিঠির উত্তরে তপন পাল লিখেছেন তাঁর ‘বৃদ্ধের সম্মান’ চিঠিটি (সম্পাদক সমীপেষু, ২৪-১১)। প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতিকে তপনবাবু ‘কৃপা করা’ হিসাবে নিয়েছেন দেখে আশ্চর্য হলাম। মানুষ মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, এটাই তো কাম্য। ট্রেনে বা বাসে এক জন বয়স্ক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কমবয়সি ছেলেটি যদি নিজে দাঁড়িয়ে তাঁকে বসতে দেয়, সেটাই মানবিকতা, সেটাই জীবন। তপনবাবু প্রবীণদের ট্রেনে ভাড়া ছাড়ের বিরোধিতা করেছেন। মনে করিয়ে দিই, প্রবীণ নাগরিকদের সসম্মানে এবং সহানুভূতি-সহকারে ভাড়া ছাড় দেওয়া হয়। ‘দুঃস্থ’ ভেবে নয়। আর ভর্তুকি তো রান্নার গ্যাস, পেট্রল-সহ অনেক কিছুতেই আছে। তা হলে সবই কি কৃপা?
তপনবাবু বলেছেন, এক জন অলিম্পিক পদকজয়ী বা নোবেল প্রাপকের রেল ভাড়া ছাড় দেখে আরও অনেকে পদক জয় বা নোবেল পাওয়ার চেষ্টা করবে। এই চিন্তা হাস্যকর। রেলে বৃদ্ধদের ভাড়ায় ছাড় একটি বিশেষ পরিষেবা, যা কাউকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয় না, তাই বাবুয়ানির প্রশ্নও অবান্তর।
সুকুমার অধিকারী, কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy