Advertisement
০৮ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: অলীক মানুষেরা

হুগলি জেলার কোনও একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে, একটি নির্মীয়মাণ স্কুলবাড়ির কাজ দেখতে গিয়ে আমরা অবাক।

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

কুমার রাণা ‘প্রকৃত প্রতিরোধের পথ’ (৩-৬) শীর্ষক নিবন্ধে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধে স্থানীয় মানুষদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর পক্ষে যে সওয়াল করেছেন, তার সঙ্গে পুরোপুরি সহমত। লেখক এই প্রসঙ্গে ১৯৭৮ সালের দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বিপর্যয়কারী বন্যা ও তৎপরবর্তী সময়ে সদ্য নির্বাচিত পঞ্চায়েত ব্যবস্থার নেতৃত্বে বিপর্যস্ত গ্রামীণ পরিকাঠামো পুনর্গঠনে স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন। এই প্রেক্ষিতে আমার নিজের অভিজ্ঞতা জানাই।

রাজ্য সরকার, ১৯৭৮ সালের বন্যায় মালদহ সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে যাওয়া ও ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির নেতৃত্বে, প্রত্যেক স্কুলের জন্য আলাদা আলাদা ‘বেনিফিশিয়ারি কমিটি’ গঠন করে, তাদের হাতে এই নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজ্যস্তরে নির্মাণকাণ্ডের সমন্বয়, প্রয়োজনে প্রযুক্তিগত সহায়তা, গুণমান তদারকি, যে সব সংস্থা এই নির্মাণকাজে আর্থিক সাহায্য করেছিল তাদের সঙ্গে সমন্বয়— এই সবের জন্য পাঁচ জন প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে তৈরি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেলের দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়েছিল। স্কুলবাড়ি নতুন তৈরি করার কাজে গ্রামের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমার ও আমার সহকর্মীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। এ ধরনের বহু ঘটনার মধ্যে দুটি উল্লেখ করব।

হুগলি জেলার কোনও একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে, একটি নির্মীয়মাণ স্কুলবাড়ির কাজ দেখতে গিয়ে আমরা অবাক। সরকারি নকশার তুলনায় বাড়িটি অনেক শক্তপোক্ত করে, একটি বাড়তি শ্রেণিকক্ষ সহ তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণের গুণমানও যথেষ্ট ভাল এবং নির্মাণব্যয়ও সরকারি অনুদানের চেয়ে অনেকটাই বেশি। হঠাৎ প্রায় ১০-১২ জন তরুণ আমাদের ঘিরে দাঁড়ালেন। আমি একটু শঙ্কিত বোধ করে সভাপতি মশাইয়ের দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে জানালেন, এঁদের স্বেচ্ছাশ্রমে স্কুলটি তৈরি হচ্ছে ও এঁরা এটিকে বড় করার জন্য বাড়তি অর্থের ব্যবস্থা করছেন। তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, তাঁরাই রাজমিস্ত্রি, জোগাড়ে ও মজদুরের কাজ করছেন বিনা পারিশ্রমিকে; যাত্রাপালা করে বাড়তি অর্থের সংস্থান করেছেন, ভবিষ্যতে স্কুলে ছাত্রছাত্রী বাড়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে। বিদায় নেওয়ার সময় তরুণদের কথা, “স্কুলটা তো আমাদেরই; আমরা পড়েছি। তাই আমাদের মতো মমতা দিয়ে কারাই বা স্কুলটাকে গড়ে দেবে?”

পূর্ব মেদিনীপুর ময়না ব্লকের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। বন্যায় রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। আমাদের জিপ পাকা রাস্তা ছেড়ে কোনও মতে ৬ কিমি কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে হাত তুলে দিল। আলপথে প্রায় ৪ কিমি হাঁটা শুরু করলাম। দেখলাম, আমাদের পাশ দিয়ে পর পর কিছু মানুষ সাইকেলের রডে বস্তায় মালপত্র বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন। ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকগুলিতে, কিছু স্কুলবাড়িকে বন্যার সময় ত্রাণশিবির হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে। মাটি থেকে ৩.৫ মিটার উঁচুতে কংক্রিটের পিলারের উপর শ্রেণিকক্ষগুলি নির্মাণের নকশা তৈরি হয়েছিল। নির্মীয়মাণ স্কুলবাড়ির কাছে গিয়ে দেখা গেল, চারটির বদলে ছ’টি শ্রেণিকক্ষ তৈরি হচ্ছে, বন্যার সময়ে শুকনো খাবার, ওষুধ, জল, ত্রিপল মজুত করার জন্য। বেনিফিশিয়ারি কমিটির সদস্য জানালেন, ছেলের দল ১০ কিমি দূরে পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক থেকে ইট, সিমেন্ট, বালি, রড ইত্যাদি সাইকেলে করেই বয়ে নিয়ে আসছেন। জানালেন, সরকারি অনুদানের প্রায় সমপরিমাণ বাড়তি অর্থ জুগিয়েছেন গ্রামবাসীরাই। পঞ্চায়েতের নেতৃত্বে গ্রামবাসীদের এই উদ্যোগ আমাদের আপ্লুত করেছিল।

আজ, পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ‘কাটমানি’ নেওয়ার আবহে, ঘটনাগুলি অলীক মনে হয়।

পীযূষ বসু, কলকাতা-১০৬

স্বামীজি

আবাহন দত্তর ‘প্লেগ এল, পুনর্জন্ম হল ইংরেজির’ (রবিবাসরীয়, ৩১-৫) নিবন্ধের প্রেক্ষিতে ‘শ্রীকান্ত’ (৭-৬) চিঠিতে লেখক লিখেছেন, ১৯১৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্বেই কোয়রান্টিনের বিষয়টি বাঙালি জেনেছিল।

তবে বাংলা সাহিত্যে তারও বেশ কিছু আগেই quarantine শব্দটির প্রয়োগ হয়ে গেছে, স্বামী বিবেকানন্দের লেখনীতে। ১৮৯৯ সালের ২০ জুন স্বামী বিবেকানন্দ দ্বিতীয় বারের জন্য পাশ্চাত্যে গমন করেন। স্বামী তুরীয়ানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতাকে সঙ্গে নিয়ে এই ভ্রমণকালে, ‘উদ্বোধন’ পত্রিকার সম্পাদক স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দের অনুরোধে, বিবেকানন্দ এই সময়ের ভ্রমণকথা লিখে পাঠাতেন। পত্রাকারে লেখা সে সব বৃত্তান্ত, উদ্বোধন-এ ‘বিলাত যাত্রীর পত্র’ শিরোনামে প্রকাশিত হতে থাকে। পত্রগুলি পরবর্তী কালে ‘পরিব্রাজক’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। স্বামী সারদানন্দ ১৯০৬ সালে এই গ্রন্থ প্রকাশ করেন।

১৮৯৯-এর ১৪ জুলাই সুয়েজ় খালে পৌঁছনোর পর স্বামীজিদের জাহাজ আটকে দেওয়া হয়। কারণ এর পর জাহাজ ইউরোপে প্রবেশ করবে। এখানেও সেই প্লেগের আতঙ্ক। স্বামীজি লিখেছিলেন, ‘‘প্লেগ-বিষ— প্রবেশ থেকে দশ দিনের মধ্যে ফুটে বেরোন; তাই দশদিনের আটক। ...রাত্রিতে জাহাজ অনায়াসেই খাল পার হতে পারে, যদি সামনে বিজলি-আলো পায়; কিন্তু সে আলো পরাতে গেলে, সুয়েজের লোককে জাহাজ ছুঁতে হবে, ব্যাস— দশ দিন কারাঁটিন্ (quarantine) । কাজেই রাতেও যাওয়া হবে না, চব্বিশ ঘন্টা এইখানে পড়ে থাকো— সুয়েজ বন্দরে।’’

সব্যসাচী ধর, সিউড়ি, বীরভূম

জেনেছিল আগেই

‘কোয়রান্টিন’ শব্দটি বাংলা সাহিত্যে আসার আগেই, ওই শব্দের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় হয়েছিল। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগ রোগের সূচনা। প্রেমাঙ্কুর আতর্থী তাঁর ‘মহাস্থবির জাতক’ উপন্যাসে সেই সময়ের বঙ্গের, বিশেষ করে কলকাতার, আতঙ্কিত বাঙালির বিবরণ দিয়েছেন। সেই সময় প্লেগ রোগ নিয়ে বাঙালির গুজব, আক্রান্তদের কোয়রান্টিনে না যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ছল, এমনকি প্লেগের টিকা না নেওয়ার পক্ষে নানা কুযুক্তির কথা উল্লিখিত হয়েছে।

উপন্যাসটি ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হলেও, লেখক ১৮৯৮-এর কলকাতায় ছড়িয়ে পড়া প্লেগ মহামারির সূত্রে যা বর্ণনা দিয়েছেন, বোঝা যায়, বাঙালি এই ইংরেজি শব্দের সঙ্গে সেই সময় ভাল ভাবে পরিচিত হয়েছিল।

উপন্যাসটিতে প্রেমাঙ্কুর আতর্থী লিখেছেন: ‘‘তখন শহরের স্বাস্থ্যরক্ষকদের মাথা ছিলেন একজন ইংরেজ আধা ডাক্তার, তাঁর নাম ছিল কুক। —একদিন বিকেলবেলায় কুক সাহেব আমাদের হাত ফুঁড়ে প্লেগের বীজ দেহের মধ্যে পুরে দিলেন। — টিকে নেওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে এল জ্বর। — মাস দুয়েক বাদে কর্পোরেশন থেকে আমাদের নামে একখানা ক’রে কার্ড এল। সেগুলো হ'ল সার্টিফিকেট। অর্থাৎ প্লেগ হ’লে সেগুলো দেখালে আর ‘কোয়ারেণ্টাইনে’ ধরে নিয়ে যাবে না।’’

বোঝা যাচ্ছে বাঙালির কাছে সেই সময় শব্দটি শুধু পরিচিত ছিল না, ভয়ানকও ছিল।

আশিস ঘোষ, কলকাতা-৮৪

কৃষ্ণভাবিনী

কৃষ্ণভাবিনী দাসের জন্ম বহরমপুরে, ১৮৬৪ সালে। তাঁর ‘ইংলন্ডে বঙ্গমহিলা’ প্রকাশিত হয় ১৮৮৫ সালে। সেখানে তিনি জানাচ্ছেন, ব্রিন্দিসিতে তিনি জাহাজ থেকে নামতে পারেননি, ‘‘পাছে মিসরদেশ হইতে ওলাওঠা আসিয়া ইউরোপে বিশেষত ইটালিতে প্রবেশ করে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘এই বন্দোবস্তকে ‘কোয়ারান্টিন’ বলে, এবং এই নিয়মটি বড় কড়া।’’

তপন পাল, বাটানগর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To The Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE