Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Semiconductor Industry

সম্পাদক সমীপেষু: শিল্পের জমি

ভারতে কবে ফ্যাব তৈরির কারখানা হবে, নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। শোনা যাচ্ছে, ফক্সকন নাকি ফ্যাব তৈরির নতুন একটি প্রস্তাব ভারত সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।

Semiconductor industry

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:২৬
Share: Save:

‘রাজ্যে সেমিকনডাক্টর নীতি, লগ্নির ডাক মন্ত্রীর’ (৯-১) প্রতিবেদনটি পড়লাম। এত দিন পরে পশ্চিমবঙ্গ যে এ নিয়ে ভাবছে, সেটা ভাল। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি আছে। লেখা হয়েছে, তিনি সেমিকনডাক্টর শিল্প সংস্থাগুলিকে পশ্চিমবঙ্গে কারখানা খুলতে ডাক দিয়েছেন, এবং এই প্রসঙ্গে রাজ্যে অবস্থিত ২২টি তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের কথা উল্লেখ করেছেন। যত দূর জানি, এই পার্কগুলি আদতে বহুসংখ্যক ছোট-বড় আইটি অফিস তৈরির পরিকাঠামো-সমৃদ্ধ (মডিউল) এক-একটি বহুতল। এগুলি কারখানা তৈরির জন্য নয়। আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গে আইটি দফতরের যা নিজস্ব পরিকাঠামো রয়েছে, তার মধ্যে নৈহাটির ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার সেমিকনডাক্টর শিল্প তৈরির সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। কারণ, এখানে গঙ্গা থেকে জল পরিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা সহজ হবে, যার চাহিদা এই শিল্পে খুব বেশি। তা ছাড়া, নৈহাটি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৩৪ কিলোমিটার।

ভারতে কবে ফ্যাব তৈরির কারখানা হবে, নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না। শোনা যাচ্ছে, ফক্সকন নাকি ফ্যাব তৈরির নতুন একটি প্রস্তাব ভারত সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। টাটাও ফ্যাব করবে, ঘোষণা করেছে। তবে আগামী পাঁচ-সাত বছরে যে একাধিক ‘সেমিকনডাক্টর অ্যাসেম্বলি, টেস্টিং, মার্কিং এবং প্যাকেজিং’ (এটিএমপি) কারখানা এ দেশে তৈরি হবে, তার সম্ভাবনা যথেষ্ট। গুজরাতের ধোলেরাতে বহুজাতিক সংস্থা মাইক্রন ছ’হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যে কারখানা তৈরি করছে, সেটিও আদতে এটিএমপি কারখানা। অর্থাৎ, এখানে সেমিকনডাক্টর ওয়েফার তৈরি হবে না, ওয়েফার থেকে চিপ তৈরির বাকি প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হবে। ওড়িশা ইতিমধ্যেই এক আমেরিকান সংস্থার কাছ থেকে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিমি সিলিকন কার্বাইড তৈরির প্রস্তাব পেয়েছে। এই সিলিকন কার্বাইড চিপ তৈরির একটি উপাদান। কেনস টেকনোলজি, এইচসিএল এবং মুরুগাপ্পা গ্রুপের পক্ষ থেকে এটিএমপি কারখানা তৈরিতে বিনিয়োগ করা হবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এদের কারও বিনিয়োগ ১০০০ কোটির কম হবে না। অর্থাৎ, ছোট বা মাঝারি কোনও সংস্থার পক্ষে সেমিকনডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভব নয়। যদিও মন্ত্রিমশাই এদের বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ভারতে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী উৎপাদনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার পিএলআই স্কিমে বহু হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এই স্কিমে কোনও কারখানা কি পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে? তামিলনাড়ু এবং তেলঙ্গানা বিরোধী শাসিত রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও বিপুল বিনিয়োগ পাচ্ছে। আজ তামিলনাড়ু ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর সবচেয়ে বড় রফতানিকারক রাজ্য। সাফল্য পেতে হলে, পশ্চিমবঙ্গকেও বড় করে ভাবতে হবে।

সুশান্ত মজুমদার, কলকাতা-৩২

নানা অসাম্য

আর্শিয়া শেঠির ‘সাম্যময় কর্মক্ষেত্রের সন্ধানে’ (৮-১) প্রবন্ধের শিরোনাম এবং বিষয় কিন্তু এক নয়। সাম্যময় কর্মক্ষেত্র লিঙ্গ নির্বিশেষে হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং কাম্য, তবে আরও নানা অসাম্যও থাকে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যৌন হয়রানির শিকার কোনও মহিলা সহকর্মীর সহায়তায় কোনও পুরুষ যদি এগিয়ে আসেন, তাঁকেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমে চেষ্টা করা হয় অভিযোগকারিণীর সঙ্গে তাঁর মেলামেশা আছে কি না, তা খোঁজা। থাকলে তার ব্যাখ্যা অন্য ভাবে করা হয়। দ্বিতীয়ত দেখা হয়, যাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে ওই পুরুষ সহকর্মীর কোনও পেশাগত দ্বন্দ্ব আছে কি না।

তাই অনেকে প্রকাশ্যে না এসে নির্যাতিতার পাশে থাকেন। যদি কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের সংগঠন থাকে, মহিলা যদি সংগঠনের সদস্যাও হন, সে ক্ষেত্রেও বিষয়টিকে মিটমাট করিয়ে দেওয়া ছাড়া সাধারণত আর কিছু করতে চাওয়া হয় না। অবশ্য ব্যতিক্রমও ঘটে। একটি অভিজ্ঞতা— ভারতের এক নামজাদা কর্পোরেট সংস্থার দিল্লির দফতরের এক আধিকারিক তাঁর অধীনে কর্মরত এক মহিলাকে নিপীড়ন করছিলেন। মহিলা সামাজিক কারণে গোড়ায় নীরব থাকলেও, এক দিন কর্মী সংগঠনের সভাপতির কাছে জানান। সভাপতি সেই মহিলাকে কলকাতায় কর্মরত এক সহকর্মীর ফোন নম্বর দিয়ে কথা বলতে বলেন। এ বিষয়ে সভাপতি সরাসরি দায়িত্ব নিতে চাননি, এবং কারণ হিসাবে জানিয়েছিলেন যে, এ বিষয়ে তাঁর নাম সামনে এলে ‘পারিবারিক অশান্তি’ হতে পারে। মহিলা অবশ্য কলকাতা থেকেই উপযুক্ত পরামর্শ পেয়েছিলেন। তবে ওই মহিলা-কর্মীর অভিযোগ যে ঠিক, তা মেনে নিয়েও নিগ্রহকারীর বিরুদ্ধে এটুকুই ব্যবস্থা করা হয়েছিল যে, তাঁকে ওই মহিলার সঙ্গে কর্মসূত্রে যুক্ত রাখা হয়নি। নিগ্রহকারীকে একেবারে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল বেশ কিছু দিন। আর কিছুই হয়নি। অবশ্য আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি এবং এখন সেই মহিলা সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। আর একটি ঘটনায় যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর অভিযুক্ত ইস্তফা দেন। তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ থাকে যে, তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করেছেন। একে কি শাস্তি বলা চলে? এ সব ক্ষেত্রে আইনে আরও কঠিন ব্যবস্থা রাখা উচিত, যাতে অভিযুক্তকে কেন বরখাস্ত করা হয়েছে, তার উল্লেখ থাকে।

তবে কর্মক্ষেত্রে সর্বাধিক দেখা যাচ্ছে আর্থিক অসাম্য। একই পদে একই কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ভিন্ন ভিন্ন পারিশ্রমিক ও সুবিধা পায়। ‘সম কাজে সম বেতন’ বললেই চলে আসে আইনের কথা, তাতে বলা আছে যে পুরুষ ও মহিলা-কর্মীর মধ্যে মজুরির পার্থক্য রাখা যাবে না। কিন্তু পুরুষ ও পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য রাখা যাবে, সেটাই বা কোথায় লেখা আছে? ইদানীং বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হিসাব শতাংশের হিসাবে দেওয়া হয়। সাধারণত ৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির হার ঠিক করা হয় মালিকপক্ষের তৈরি মাপকাঠি অনুযায়ী, এবং ওই হারে বেতনবৃদ্ধি পাওয়ার নানা শর্তপূরণ সাপেক্ষে। অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠন এ সব মেনেও নেয়। কিন্তু এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যে কী ভয়ানক অসাম্যের বীজ বপন হয়ে গেল, বেশ কয়েক বছর পর তা বোঝা যায়। ‘গ্রেড’ ও ‘স্কেল’ না থাকলে বেতনে অসাম্য এক সময় মানসিক অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সবেতন ছুটির পাওয়ার বিষয়েও অসাম্য দেখা যায়। সম্প্রতি বম্বে হাই কোর্টের সামনে এমন একটা বিষয় আসে। এক বৃহৎ সংস্থা এক কর্মীকে প্রতিটি কাজের দিনে কর্মস্থলে এসে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যা সেই সংস্থার নিজের তৈরি নিয়ম বলে দাবি করা হয়। বম্বে হাই কোর্ট তার রায়ে বলে, আইনের (ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৪৬) ধারা-উপধারার সঙ্গে সংস্থার নিয়মে কোনও অসামঞ্জস্য থাকলে সংস্থার নিয়ম বেআইনি। বর্তমানে বহু সংস্থা এমন বেআইনি নানা নিয়ম করে কর্মচারীদের বৈধ ছুটি খারিজ করছে। এ ভাবে কত ছুটি নষ্ট, অর্থাৎ অব্যবহৃত হয়ে থেকে যায়! কর্মক্ষেত্রে অসাম্যের আলোচনায় এ সবের উল্লেখ থাকলে ভাল লাগত।

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯

ট্যাক্সি অমিল

হাওড়া স্টেশনে আগে যে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ ছিল, তার মাধ্যমে ট্যাক্সি পাওয়া সুবিধাজনক ছিল। বুথে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে বিল নিয়ে ট্যাক্সি পাওয়া যেত। বুথ যাত্রী অনুপাতে খুব কম থাকলেও সবাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেন। হঠাৎ গত কয়েক মাস আগে প্রিপেড বুথ উঠিয়ে ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপ চালু করে সরকার। কিন্তু এতে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি। অনেকেই অ্যাপ ব্যবহারে সড়গড় নন, অনেক সময় অ্যাপটি ঠিকমতো কাজ করে না। এর সুযোগে কিছু ট্যাক্সিচালক অনেক বেশি ভাড়ায় যাত্রী তুলছেন। এর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।

মালা মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE