Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: শিক্ষার কাজ

শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, উদ্ভাসিত করে। তাকে স্বনির্ভর করার, সুস্থ জীবনযাপন করার পথ দেখায়। তাই শিক্ষা কখনও অপ্রয়োজনীয় হতে পারে না।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৪

‘অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা’ (৪-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয় নিবন্ধের পর্যবেক্ষণ সঠিক। আমাদের দেশের গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা দীর্ঘ দিন সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার অবলম্বন হিসাবে লেখাপড়াকেই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছে। শিক্ষার সঙ্গে যদি কর্মসংস্থানের যোগ না থাকে, তবে সেই শিক্ষা অসম্পূর্ণ। কর্মসংস্থান বলতে শুধু সরকারি চাকরি নয়, শিক্ষা এমন হওয়া উচিত, যা এক জনকে স্বনির্ভর করবে। শিক্ষালয়গুলি বর্তমানে বিভিন্ন রকম অনুদানের প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অনেকেই আছে, যারা বর্তমানে অনুদান পাওয়ার জন্য স্কুল-কলেজে ভর্তি হয়। অনুদান পাওয়াটাই মুখ্য, লেখাপড়াটা নয়।

দেশের মানুষকে বলা হয় ‘মানবসম্পদ’। মানবসম্পদের সদ্ব্যবহার করার উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারলে সমাজের কল্যাণ হবে। যে শিক্ষা তার কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের সুযোগ নেই, বছরের পর বছর ধরে স্কুল-কলেজে সেই বিদ্যা আয়ত্ত করার কোনও আবশ্যকতা নেই। তাই পাশ্চাত্য শিক্ষার লেজ ধরা নয়, এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, এই দেশের মানুষের কথা ভেবেই তৈরি করতে হবে। তা হলে শিক্ষাকে আর অপ্রয়োজনীয় মনে হবে না। শিক্ষা মানুষকে আলোকিত করে, উদ্ভাসিত করে। তাকে স্বনির্ভর করার, সুস্থ জীবনযাপন করার পথ দেখায়। তাই শিক্ষা কখনও অপ্রয়োজনীয় হতে পারে না। বরং বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। শিক্ষার নীতি নির্ধারকগণ পথ দেখাতে ব্যর্থ।

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ

বাণীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শুধুই নম্বর

‘অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা’ সম্পাদকীয়টি এক গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আজ উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ হারিয়েছে ছাত্রছাত্রীরা, স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। কিসের আশায় পড়াশোনা করবে, যেখানে পড়াশোনা করেও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নেই, নেই আর্থিক উন্নতির সম্ভাবনা? শুধু জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। যাদের রুটি, রুজির জন্য ভাবতে হয় না, তাদের পক্ষেই তা সম্ভব। পেটে খাবারের জোগাড় না থাকলে বিজ্ঞানের গবেষণাও সম্ভব নয়, কিংবা সাহিত্যের রসাস্বাদন সম্ভব নয়। আর প্রকৃত শিক্ষা সত্যই দুর্লভ। কিছু ‘সাজেস্টিভ’ প্রশ্ন মুখস্থ করা, বিষয়বস্তু সম্পর্কে যথার্থ না জেনেও প্রচুর নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রভূত ক্ষতি করেছে। তাই শুধু ডিগ্রি আর নম্বর পেয়েও সে কিছুই জানছে না। তাই শিক্ষা আজ মূল্যহীন!

সর্বানী গুপ্ত

বড়জোড়া, বাঁকুড়া

পাঠাগার

লকডাউনের পর ১৮ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এখনও রাজ্যের গ্রন্থাগারগুলি বন্ধ হয়ে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে পাঠাগারগুলো বন্ধ থাকার কারণে বইপ্রেমী মানুষের যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমনই অব্যবহারে অজস্র বই যে নষ্ট হয়ে যাবে, এ কথা বলা বাহুল্য। ১ অগস্ট থেকে লকডাউনের যে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে সিনেমা হল খোলার কথা বলা হয়েছিল। তা হলে ৫০ শতাংশ পাঠক নিয়ে পাঠাগার খুলতে অসুবিধা কেন? প্রেক্ষাগৃহে মানুষ আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা বসে থাকে। কিন্তু পাঠাগারে মানুষের দীর্ঘ সময় বসে থাকার প্রয়োজন হয় না। কোভিড বিধি মেনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে গ্রন্থাগার খোলার আবেদন জানাচ্ছি।

অজয় দাস

ফুলেশ্বর, হাওড়া

নির্লজ্জ

‘বিপণনের অঙ্গ এ বার বাপু, বিতর্কও’ (২-১০) শীর্ষক সংবাদ পাঠ করে মনে পড়ল বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব উপলব্ধির কথা— “সংবাদপত্রে দোকানদারেরা যে রূপে বড় বড় অক্ষরে বিজ্ঞাপন দেয়, সংসারের হাটে বিক্রেয় পুতুলের মতো সর্বাঙ্গে রঙচঙ মাখাইয়া দাঁড়াইয়া থাকে, ‘আমি’ বলিয়া দুটো অক্ষরের নামাবলী গায়ে দিয়া রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়াইতে পারে, সেই ব্যক্তি নির্লজ্জ।” এই সূত্রে তিনি আরও বলেন “যে গায়ে কাপড় দেয় না তাহাকে সকলে নির্লজ্জ বলে, কিন্তু যে ব্যক্তি গায়ে অত্যন্ত কাপড় দেয়, তাহাকে কেন সকলে নির্লজ্জ বলে না? যে ব্যক্তি রঙচঙে কাপড় পরিয়া হীরা জহরতের ভার বহন করিয়া বেড়ায়, তাহাকে লোকে অহঙ্কারী বলে। কিন্তু তাহার মতো দীনহীনের আবার অহঙ্কার কিসের? যত লোকের চক্ষে সে পড়িতেছে তত লোকের কাছে সে ভিক্ষুক। সে সকলের কাছে মিনতি করিয়া বলিতেছে, ‘ওগো, এই দিকে! এই দিকে! আমার দিকে একবার চাহিয়া দেখ’।”

আজকের গুগলায়িত বিশ্বে দিবারাত্রি সমাজমাধ্যমে ‘আমাকে দেখুন’ নামের সংক্রমণ যেন অতিমারির চেহারা ধারণ করেছে। বিশ্বকবির ধরা এই আয়নায় ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে ব্যক্তিগত জীবনের রোজনামচা, বাদ যায় না কিছুই। বর্তমানে দেখনদারি মনস্তত্ত্বের চাপে হারিয়ে যায় শোকতাপের নিভৃত পরিসরটুকুও। প্রচারের আলোয় চটজলদি নিজেকে আনতে চাওয়ার প্রতিযোগিতায় নিজেদের দৈন্যাবস্থার প্রকাশ ঘটিয়ে ফেলি আমরা।

সুপ্রতিম প্রামাণিক

আমোদপুর, বীরভূম

সই শিকার

‘শহরে সই সংগ্রাহকদের মধ্যে জওহরলাল নেহরু’ (৩-১০) ছবিটি দেখে এই চিঠি লিখছি। নামকরা মানুষদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে রাখা বিশ্ব জুড়েই মানুষের অন্যতম শখ। বিখ্যাত মানুষদের সই সংগ্রহ করে নিজেই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন, এমন উদাহরণও কম নেই। অনেক বছর আগে আনন্দমেলা একটি আকর্ষক সংখ্যা বার করেছিল, যার প্রচ্ছদকাহিনিটি অটোগ্রাফের উপর ছিল। দেশ-বিদেশের অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তির সই ছাপা হয়েছিল। আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। সেই সংখ্যাটি পড়ে ঘাড়ে অটোগ্রাফ সংগ্রহের ভূত চাপল। একটা ডায়েরিতে বিখ্যাত মানুষের সই নেওয়া শুরু করলাম। ডায়েরির পাতার পর পাতা ভরে উঠল সই, এবং শুভেচ্ছাবাণীতে। তবে ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল যবে থেকে মানুষের হাতে এসেছে, তবে থেকে অটোগ্রাফ সংগ্রহের নেশা কমেছে। এখন অনেকেই বিখ্যাত মানুষের কাছে অনুরোধ করেন তাঁর সঙ্গে একটি সেলফির, অটোগ্রাফের নয়।

তবু আজও আমার মতো সই-শিকারি আছেন, যাঁরা বিখ্যাতদের দেখলে সেলফি তোলেন না। বরং নিজের কাছে কাগজ-কলম না থাকলে, সই সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ অপরিচিতদের কাছে সেগুলোর খোঁজ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না!

সৌরীশ মিশ্র

কলকাতা-৯১

অবলাবান্ধব

তৃষ্ণা বসাকের প্রবন্ধের (‘অঙ্ক করতেন ভালবেসে’, ২-১০) বিষয়বস্তুতে অভিনবত্ব থাকলেও দু’টি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। প্রবন্ধে ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেনকে অবলাবান্ধব বলা হয়েছে। কেশবচন্দ্র বিশেষ ভাবে পরিচিত হয়েছেন ‘ব্রহ্মবান্ধব’ নামে। ‘অবলাবান্ধব’ শিরোপাটি চিহ্নিত আর এক নারীহিতৈষী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য।

বিজ্ঞানের ইতিহাস জানায়, নারী বিজ্ঞানীরা সচরাচর তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পাননি, বেশির ভাগ সময়ে সংশ্লিষ্ট পুরুষ সহকর্মীর মুখে আলো পড়েছে। মেয়েদের পারদর্শিতার ইতিহাস এ ভাবেই মুছে ফেলা হয়। এর নাম ‘ম্যাটিল্ডা এফেক্ট’। স্বভাবতই গণিতজ্ঞ কন্যাদের জন্য সে ঘটনার অন্যথা হয়নি। সখেদে বলতেই হয়, লেখক উল্লিখিত মহিলা বিজ্ঞানীদের জীবনীগ্রন্থ লীলাবতীজ় ডটার্স-এ স্বচ্ছন্দে বাদ পড়ে যান বিশিষ্ট বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী বিভা চৌধুরী। সে নিয়ে তেমন কোনও প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। মানতেই হয়, এই বিস্মরণ ইচ্ছাকৃত হলেও হতে পারে।

কৃষ্ণা রায়

অধ্যক্ষ, বেথুন কলেজ

Education Job
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy