Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: গল্প, কিন্তু আষাঢ়ে নয়

অচিরেই এই সুপারমার্কেটের মালিকেরা কয়েকশো একর জমি কিনে চাষ-আবাদ শুরু করবেন। অভিজ্ঞ কৃষকদের চাকরি দেওয়া হবে। ন’ঘন্টা প্রতি দিন। রবিবার ফিক্সড ছুটি। সঙ্গে প্রভিডেন্ট ফান্ড।

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০০

ছোট ব্যবসায়ীদের দিন ঘনিয়ে এসেছে। সবাই হাঁটছে শপিং মলের দিকে। শপিং মল মানেই হাত-পোড়া দাম যত দিন ছিল, তত দিন শুধু ঠান্ডা হাওয়া খেয়ে বেরিয়ে, পাড়ার পিন্টুদার দোকান থেকেই কুর্তি কিনতেন টুম্পা বৌদি। এখন শপিং মলেরও শ্রেণিবিন্যাস হয়েছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী খুলে বসেছেন মধ্যবিত্তের শপিং মল। সেখানে জিনিসপত্রের দাম পিন্টুদার দোকানের থেকেও কম কখনও কখনও। মধ্যবিত্তের মল কাম সুপারমার্কেট, মফস্সলের বড় রাস্তার ধারে প্রতি কিলোমিটার অন্তর। এখন টুম্পা বৌদিও কথায় কথায় সুপারমার্কেট ছোটেন। ছোট দোকানদারেরা দাম কমিয়ে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু কত দিন?

অচিরেই এই সুপারমার্কেটের মালিকেরা কয়েকশো একর জমি কিনে চাষ-আবাদ শুরু করবেন। অভিজ্ঞ কৃষকদের চাকরি দেওয়া হবে। ন’ঘন্টা প্রতি দিন। রবিবার ফিক্সড ছুটি। সঙ্গে প্রভিডেন্ট ফান্ড।

মন্দার বাজার, ফড়েদের দালালি, কৃষিঋণের সমস্যা, এ সব কথা ভেবে, অভিজ্ঞ চাষি চাকরিতে যোগ দেবেন। পরের সিজনে পাড়ার মোড়ের সব্জি বাজারের থেকে কম দামে সব্জি বিক্রি করবে সুপারমার্কেট। লাইন দিয়ে কম্পিউটারাইজড বিল নিয়ে সুপারমার্কেট থেকে সব্জি কিনবে সবাই। বিজ্ঞাপন বেরোবে: ‘‘অভিজ্ঞ দোকানদার চাই, সব্জি বিক্রির কাউন্টারের জন্য। মাইনে ১০ হাজার, সপ্তাহে এক দিন ছুটি রোটেশনের ভিত্তিতে।’’ পাড়ার মোড়ের সব্জিওয়ালা স্যুট-বুট পরে কাজ করবেন শপিং মলে।

পিন্টুদার দোকানও উঠে যাবে একই নিয়মে। তিনিও কাজ পাবেন সুপারমার্কেটে। তবে কাপড়-জামার কাউন্টারে নয়। গ্রসারি আইটেমের কাউন্টারে। কারণ কাপড়ের কাউন্টারে বসতে গেলে জানতে হবে ইংরেজি আর হিন্দিও। সেই চাকরি পাবে ভূগোলে এম এ করা অরুণ। বিবেকানন্দ কলোনির সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। সরকারি চাকরির চেষ্টা করছিল। তবে তার আসল আশার আলো ছিল টিউশন ব্যাচটি। আর্টস গ্রুপ পড়ানো শুরু করার পর ভাল রোজগার করছিল। বাড়ির বাইরে সকাল-সন্ধ্যা কয়েক ডজন জুতো দেখা যেত। কিন্তু আস্তে আস্তে জুতোর সংখ্যা কমে এল। সেখানেও যে বড় কোম্পানির হাত পড়েছে।

হাজার টাকায় সব সাবজেক্টের কম্বো অফার। সঙ্গে ল্যাবরেটরি। ঝাঁ চকচকে ক্লাসরুম। এসি। এত সুবিধা এক ছাদের নিচে পেলে আর কী চাই। অরুণের রোজগারের দায় ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মা’রা নেবেন কেন? অরুণ বাধ্য হল তার টিউশন বন্ধ করতে। তার চেয়ে মাস গেলে ১২ হাজার, ন’ঘন্টা ডিউটি। তা ছাড়া বান্ধবী সুবর্ণার সঙ্গে তার প্রেম ছোটবেলার। হবু জামাই শপিং মলের সেলসের কাজ করলে, বিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সুবর্ণা চেয়েছিল বিউটিশিয়ান হতে। লাখখানেক টাকা খরচ করে বিউটশিয়ান কোর্স করেছিল। ওই কোম্পানিই তাকে ট্রেনারের চাকরি অফার করেছিল। কিন্তু সুবর্ণা স্বপ্ন দেখেছিল বড় কিছু করার। তাই খুব কষ্ট করে নিজের বাড়ির সামনের দিকের ঘরটাতেই বিউটি পার্লার খুলেছিল। মেয়েটির হাতে জাদু ছিল। খুব তাড়াতাড়ি পাড়ার মেয়েদের প্রিয় হয়ে উঠেছিল সুবর্ণা। কিন্তু সে পার্লারেও নজর দিল আগ্রাসী থাবা। ওই এলাকায় এল ইউনিসেক্স সালোঁ।

সস্তার প্যাকেজে ফেশিয়াল, স্পা। এমনকি থ্রেডিংও ফ্রিতে দিল। ওদের কাছে হার মানল তার পার্লার।

সে ফিরিয়ে দেওয়া ট্রেনারের চাকরিটিতেই জয়েন করেছে।

শামিমা এহেসানা

মুড়াগাছা, উত্তর চব্বিশ পরগনা

যদুনাথ

আচার্য যদুনাথ সরকার, ১৯১৫ সালে, বর্ধমানে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে ইতিহাস শাখার সভাপতির অভিভাষণে, বৈজ্ঞানিক ইতিহাসচর্চা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সত্যের দৃঢ় প্রস্তরময় ভিত্তির উপর ইতিহাস দাঁড়াইয়া থাকে। যদি সেই সত্য নির্ধারিত না হইল, যদি অতীতের একটা মনগড়া ছবি খাড়া করি অথবা আংশিক ছবি আঁকিয়াই ক্ষান্ত হই ,তবে তো কল্পনার জগতেই থাকিলাম। তারপর যে বিষয়ে যাহাই লিখি বা বিশ্বাস করি তাহা বালুকার ভিত্তির উপর তেতলা বাড়ি নির্মাণের চেষ্টা মাত্র।’’ এর পর যদুনাথ সেই সত্য নির্ধারণে এক জন ইতিহাসবিদ কী অবস্থান নেবেন, সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সত্য প্রিয়ই হউক আর অপ্রিয়ই হউক, সাধারণের গৃহীত হউক আর প্রচলিত মতের বিরোধী হউক, তাহা ভাবিব না। আমার স্বদেশ-গৌরবকে আঘাত করুক আর না করুক, তাহাতে ভ্রুক্ষেপ করিব না। সত্য প্রচার করিবার জন্য সমাজে বা বন্ধুবর্গের মধ্যে উপহাসও সহিতে হয় সহিব, কিন্তু তবু সত্যকে খুঁজিব, বুঝিব, গ্রহণ করিব। ইহাই ঐতিহাসিকের প্রতিজ্ঞা। প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে যে প্রমাণ না পাইলে কিছুই বিশ্বাস করিব না।’’

একই অভিভাষণে যদুনাথ বলেছিলেন, ‘‘ইতিহাসের জ্ঞান জাতীয় উন্নতির প্রধান সোপান।’’ আজ তাঁর কথাগুলোর তাৎপর্য নতুন ভাবে উপলব্ধি করছি ।

দেবরাজ রায় চৌধুরী

রাজমহল রোড, মালদা

শিক্ষায় ক্ষতি

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পঠনপাঠনে ক্ষতি বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখিত (‘বাহিনী থাকবে...’, ১৫-৩) অসুবিধার দিকগুলি অস্বস্তির উদ্রেক করে। বেশ কিছু স্কুলকে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর সাময়িক আস্তানা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

একটি কারখানা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে উৎপাদন বা পরিষেবায় ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সহজ। কিন্তু মানুষ গড়ার কারখানায় ক্ষতির পরিমাণ অপরিমেয়। গণতন্ত্রের মহান উৎসবে কেউ ক্ষমতাবান হয়ে উঠবেন, কেউ ক্ষমতা হারাবেন। লাভ-ক্ষতির হিসেব প্রকট। কিন্তু স্কুল দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকলে ক্ষতিটা খালিচোখে চটজলদি বোঝা যায় না। তাই বোধহয় শিক্ষাক্ষেত্রের প্রয়োজন তত গুরুত্ব পায় না। বছর পাঁচেক পর পর ২/১ দিনের জন্য স্কুল অধিগৃহীত হলে তেমন গায়ে লাগে না। কিন্তু আসলে প্রয়োজন অনেক বেশি দিনের জন্য। শুধু লোকসভা কেন, এগিয়ে আসছে বিধানসভা নির্বাচন। পঞ্চায়েত এবং পুরসভা নির্বাচনও সময়মতোই হবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

শুধু বাহিনীর অবস্থানের গোনাগুনতি দিনগুলিই নয়, তারা চলে গেলেও স্কুল সাফসুতরো করে ঠিকমত পঠনপাঠন শুরু হতে আরও ২/১ দিন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, অধিগ্রহণের হাত থেকে স্কুল রেহাই পেলেও, রেহাই নেই মাস্টারমশাইদের। বেশির ভাগ শিক্ষককে ভোট পরিচালনার কাজে সংযুক্ত করা হয়। অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণের জন্য কাঁহা কাঁহা ছুটতে হবে তাঁদের। ভোটপর্ব পুরোপুরি না মেটা পর্যন্ত কিছুতেই ছন্দে ফিরবে না স্কুলগুলি।

বাহিনীর আস্তানা করার ক্ষেত্রে বিকল্প জায়গার কথা ভাবা হোক। শিক্ষকদের ভোটকর্মীর দায়িত্ব থেকে রেহাই দেওয়া হোক। আপাতত কিছু অসুবিধা হয়তো হবে, কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের নিশ্চিত বিপুল ক্ষতির তুলনায় তা অতি নগণ্য।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি

শ্রীরামপুর-৩, হুগলি

দোষের নয়?

‘আন্টি-ন্যাশনাল মানেই দোষের নয়: অমর্ত্য সেন’ (২৮-২) শিরোনামে সংবাদের প্রেক্ষিতে দু’চারটি কথা বলি। ‘‘মাঝে মাঝে আন্টি-ন্যাশনাল হওয়া ঠিক আছে’’, কথাটির অর্থ কী? মাঝে মাঝে গুন্ডামি করলে দোষ নেই? প্রতিবাদ করবার নামে কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে তা দোষের নয়? যে কোনও কাজ, যা রাষ্ট্রের শান্তি, সুরক্ষা, প্রগতি এবং অখণ্ডতা বিঘ্নিত করে, তা আন্টি-ন্যাশনাল। এবং তা ঠিক না বেঠিক, তা রাষ্ট্রের সংবিধান এবং আইন ঠিক করবে, কোনও ব্যক্তি নন। এর পরেই অমর্ত্য বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রই আমাদের একমাত্র পরিচিতি নয়। আমাদের নানা রকম পরিচিতি থাকে। জীবনযাত্রার জন্য সেগুলো ভীষণ ভাবে জরুরি।’’ অবশ্যই আমাদের আরও অনেক পরিচিতি আছে, কিন্তু সেগুলো মুখ্য নয়। আজকের দিনে, যখন মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তুলে শরণার্থী আটকানোর প্রচেষ্টা চলছে, গোটা বিশ্ব যখন নাগরিকপঞ্জি তৈরি করে বহিরাগতদের চিহ্নিত করছে, তখন আমাদের প্রধান পরিচিতি মানুষ এবং রাষ্ট্র।

নারায়ণ সেন

কলকাতা-৫৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Small Business Super Market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy