Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: আদিবাসী আবেগ

‘বাঘের অপমৃত্যু’র মতোই আদিবাসীদের ভাবাবেগে আঘাত করা যন্ত্রণাদায়ক— এ কথা তথাকথিত সভ্য মানুষেরা কবে বুঝবেন?

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:০৭
Share: Save:

‘এই হত্যায় দায়ী কে?’ (১৯-৪) চিঠির প্রেক্ষিতে বলি, বাঘটির মৃত্যু খুবই দুঃখজনক, কিন্তু ‘‘আদিবাসীরা সব সময়ই বাঘটিকে মারার সুযোগ খুঁজছিল। এত বছরের পর এত বড় সাফল্যের ভাগী হওয়া কি চাট্টিখানি কথা।’’— পত্রলেখকের এই মন্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর। এই তথ্যের ভিত্তি কী? ওঁর কি জঙ্গলের হিংস্র জন্তুর সান্নিধ্যে দীর্ঘ দিন বসবাস করার অভিজ্ঞতা রয়েছে? কলকাতা মহানগরীতে বসে আদিবাসীদের প্রতি এমন আঘাত হানার অধিকার উনি পেলেন কী ভাবে? তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘... অনভিপ্রেত মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করব? অপদার্থ বনকর্মীদের, না কি এই নারকীয় খুনে উল্লসিত আদিবাসীদের?’’ প্রশ্ন, এই নারকীয় খুনে আদিবাসীরা উল্লসিত— এর প্রমাণ কী? জঙ্গলাকীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা বাঘকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করেন। বাঘটিকে আনন্দের জন্য হত্যা করা হয়েছে, না কি আত্মরক্ষার্থে এ কাজ করতে বাধ্য হতে হয়েছে— সেই প্রশ্ন তথাকথিত সভ্য মানুষের মাথায় কেন আসছে না? জঙ্গল-লাগোয়া অধিবাসীরা (শুধু আদিবাসী নয়) প্রায় দেড় মাস ধরে কী ভাবে আতঙ্কে দিন কাটিয়েছেন, তা মহানগরীর ঠান্ডা ঘরে বসে অনুধাবন করা শক্ত। ‘বাঘের অপমৃত্যু’র মতোই আদিবাসীদের ভাবাবেগে আঘাত করা যন্ত্রণাদায়ক— এ কথা তথাকথিত সভ্য মানুষেরা কবে বুঝবেন?

সুবীর সাহু ফুলসুন্দরী, চন্দ্রী, ঝাড়গ্রাম

কুকথা

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে যে বিবৃতি দেন, সেগুলি আর একটু মার্জিত ও সংবেদনশীল হলে ভাল হয়। কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই আক্রান্ত হলে পার্থবাবুর বিবৃতি ছিল: ‘‘মনোজ তো মাঝে মাঝেই রাস্তায় পড়ে যায়।’’ মুকুল রায় এখন দল বদল করে বিজেপিতে। সাংবাদিক সম্মেলনে মুকুলবাবুর প্রসঙ্গ উঠলেই পার্থবাবু তাঁকে ‘চাটনিবাবু’ বলেই কটাক্ষ করেন। রুচি ও সৌজন্যটুকু এ ভাবে হারিয়ে যাবে কেন? পার্থবাবু তো শুধু তৃণমূলের মহাসচিব নন, তিনি বাংলার শিক্ষামন্ত্রীও।

সুভাষ ঘোষ হাজরা পাঁচথুপী, মুর্শিদাবাদ

তফাত নেই তো

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সিপিএম দলের মধ্যে একমাত্র বামপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। এ কথা তিনি এমন এক সময়ে বললেন, যখন রাজ্যের মানুষ বুদ্ধবাবুর সঙ্গে তাঁর কোনও পার্থক্যই আর খুঁজে পাচ্ছেন না। বর্তমান পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই মিলের যেন পূর্ণ রূপ ধরা পড়েছে। সেই একই রকম বিরোধীদের নির্বাচনে দাঁড়াতে না দেওয়া, কোনও রকম বিরোধিতাকে ‘উন্নয়ন বিরোধিতা’ বলে দেগে দেওয়া, মারধর করা, জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো, গায়ের জোরে দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিলে হাঁটতে বাধ্য করা। আজ মুখ্যমন্ত্রী যেমন করে বিরোধীদের অস্তিত্ব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন, সেই একই আচরণ রাজ্যের মানুষ দেখেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়— আমরা ২৩৫, ওরা ৩০। পার্থক্য শুধু, বুদ্ধবাবুর দল ছিল অনেক সংগঠিত, তাদের সন্ত্রাস ছিল অনেক গোপন, মমতার দল অসংগঠিত, দলে সূক্ষ্মতার কোনও কারবার নেই, সবই স্থূল। বুদ্ধবাবুর দল নির্বাচনে জালিয়াতিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল, মমতাদেবীর দল জালিয়াতিকে নগ্ন সন্ত্রাসে পরিণত করেছে, তাকে প্রকাশ্য রাস্তায় নামিয়ে এনেছে। প্রাক্তন মুখোশ ব্যবহার করতেন, বর্তমানের মুখোশের প্রয়োজন হয় না। পার্থক্য শুধু সময়ের আর পতাকার রঙে।

ইন্দ্রজিৎ মিত্র কলকাতা-৪

খবরদারি

ম্যাচ হারলে কি সব দোষই কোচের? কর্তাদের কোনও দায় নেই? ব্যালান্স-বিহীন টিম তৈরি করে, প্রতি ব্যাপারে খবরদারি করে টিমের ভরাডুবি ত্বরান্বিত করে, কোচকে বলির পাঁঠা বানানো— এ জিনিস কলকাতা ময়দানে নতুন নয়। এই কুনাট্য অভিনীত হল আরও এক বার। প্রশ্ন ওঠা উচিত প্রাক্তন ফুটবলারদের মনোভাব নিয়ে। বর্তমানকে খাটো করতেই যেন ব্যস্ত এঁরা। সুভাষ ভৌমিকের কথাই ধরা যাক। খালিদ জামিলই ছিলেন টিমের কোচ, সুভাষ সেখানে টিডি। কোচের কথাতেই দৈনন্দিন অনুশীলন হয়, গেমপ্ল্যান ঠিক হয়। টিডি বড়জোর গাইড করতে পারেন (তা-ও কোচ চাইলে)। সেখানে সুভাষের মন্তব্যগুলো ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার যোগ্য। ‘‘খালিদ ভিআইপি নাকি, অনুমতি নিয়ে তবেই মাঠে ঢুকবে’’, ‘‘সাপের সঙ্গে থাকা যায় কিন্তু খালিদের সঙ্গে নয়’’, ‘‘খালিদ কোনও কোচই না, আমার তিনটি জাতীয় লিগ আছে।’’

কোচ হিসেবে সুভাষ কি কোনও মরসুমে ব্যর্থ হননি? কয়েক বছর আগে পুরীতে শিবির করে এবং নিজের দায়িত্বে বিদেশিদের বাছাই করেও ইস্টবেঙ্গলকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি। খালিদ নাকি ট্যাকটিক্সে পারদর্শী নন, কলকাতা ময়দানের চাপ সামলাতে অপারগ। অথচ এর আগের মরসুমের আই লিগ জয়ী কোচ তো খালিদই। দুর্বল পরিকাঠামোর এবং তরুণ রক্তে গড়া আইজল এফসি-র মতো দলকে নিয়ে মোহনবাগানের মতো দলের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে খেতাব জয় যার-তার কম্ম নয়, কোচিং কিংবদন্তি সুভাষ তা জানতেন না?

দলের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে খালিদকে প্রকাশ্যে অপমান করতেও বাধেনি সুভাষের। খালিদ কিন্তু একটিও অপমানজনক কথা বলেননি সুভাষের উদ্দেশে।

আসলে, প্রতি কোচের আলাদা সিস্টেম থাকে। কখনও তা সফল হয়, কখনও ব্যর্থ। কিন্তু বিশ্বের কোথাও কোচ ব্যর্থ হলে মাথার উপর টিডি বসানো হয় না। প্রথম মরসুমে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে ব্যর্থ পেপ গুয়ার্দিওলা আজ সোনা ফলাচ্ছেন ইপিএল-এ। তাঁর মাথার উপর কোনও হেডস্যর বসানোর প্রয়োজন হয়নি। খালিদের প্রতি ইস্টবেঙ্গল তথা সুভাষের এমন ব্যবহার কলকাতা ফুটবলের সংস্কৃতি নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। এর পর বিদগ্ধ কোচেরা কলকাতা থেকে মুখ ফেরালে, বলার কিছু থাকবে না।

প্রোজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় রিষড়া, হুগলি

একটা অসুখ

সাংবাদিক, বিশ্লেষক, রাজ্যের সাধারণ মানুষ-সহ শাসক দলেরই বহু ছোটখাটো নেতা সদস্য সমর্থক বুঝে উঠতে পারছেন না, যে দল খুব সহজেই ভাল ব্যবধানে নির্বাচনে জয় পেতে পারে, কেন তাদের এমন হিংসার আশ্রয় নিতে হয়?

প্রথম কথা, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গত দু’বছরে বেশ কয়েকটি সমবায় ও স্কুল কমিটি-সহ স্থানীয় স্তরে ছোটখাটো নির্বাচন হয়েছে। যেগুলিতে রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ছাপ দেওয়া বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গোষ্ঠী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে শাসক দলের প্রার্থীরা খুব বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। বলা বাহুল্য ওই নির্বাচনগুলি ছিল মারামারি-শূন্য। সংবাদপত্রের আনাচকানাচে খবরগুলি গুরুত্বহীন ভাবে হলেও প্রকাশিত হয়েছে। মুখে বিরোধীদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ভঙ্গি করলেও, শাসক দলের উপরমহল যে এগুলো জানে না, তা নয়। তাই নির্বাচনে জয় পেলেও সেই জয় কতটা মসৃণ ও কলার তুলে বলার মতো হবে, এ নিয়ে তাঁরা ধন্দেই থাকেন।

আবার জয় পেলেও হবে না, সব চাই; খোলাখুলিই বলেন— একশো শতাংশ আসন চাই। পঞ্চায়েত, পুরসভা বিরোধী-শূন্য করা চাই। এটা আসলে এক ধরনের মানসিক অসুখ। আমি সবার কাছে প্রিয় হব, আমায় একশো শতাংশ মানুষই পছন্দ করবেন। এ অসুখ সাধারণত স্বৈরাচারীদের মধ্যে দেখা যায়। চোখে আঙুল দিয়ে তাঁদের ভুলগুলি দেখিয়ে দিলেও (একমাত্র সংবাদমাধ্যম ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সে সাহস দেখানো সম্ভব নয়) তাঁদের চোখে ‘নাথিং ইজ রং’, ‘কিস্যু হয়নি’।

প্রনব রাহা দুর্গাপুর-৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tiger Tribal Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE