Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিদ্যুৎ চুরি রুখতে

গ্রামে তো বিদ্যুতের লাইন হল, এ বার আবেদন জমা পড়ছে না সংযোগ নেওয়ার। যাঁদের আবেদন জমা পড়ল তাঁরা হলেন লাইনের শেষ প্রান্তের গ্রাহক। লাইন চালু হল এবং লাইনের আওতায় বাকি গ্রাহকরা আবেদন না করে, হুকিং করেই বিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু করলেন।

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

‘ক্ষতি কমাতে গ্রামে বিদ্যুৎ নয়া নকশায়’ (৭-১) প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বলি, শুধুই ভোটবাক্সের দিকে তাকিয়ে গ্রাম বিদ্যুদয়ন হলে তো ক্ষতি হবেই। বিগত ১৯৭১-৭২ সালে গ্রাম বিদ্যুদয়নের শুরুতে আমি এই কর্মসূচি রূপায়ণে শামিল ছিলাম, এই রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায়, দফতরের ইঞ্জিনিয়ার পদে। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, গ্রামের কর্তাব্যক্তিবর্গের পছন্দেই ঠিক হয়, কতটা লাইন হবে, কত ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসবে এবং কোথায় বসবে, ৩ ফেজ়ের লাইন কতটা, ১ ফেজ়ের লাইন কতটা বাড়ানো হবে।

গ্রামে তো বিদ্যুতের লাইন হল, এ বার আবেদন জমা পড়ছে না সংযোগ নেওয়ার। যাঁদের আবেদন জমা পড়ল তাঁরা হলেন লাইনের শেষ প্রান্তের গ্রাহক। লাইন চালু হল এবং লাইনের আওতায় বাকি গ্রাহকরা আবেদন না করে, হুকিং করেই বিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু করলেন। গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির সভায় এ সব নিয়ে আলোচনা হলেও, কোনও সুফল হত না। বিনা পয়সায় সব জিনিসেরই ব্যবহার করার প্রবণতা থাকে, এবং এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ফলে, ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাওয়া, লাইনের ভোল্টেজ কমে যাওয়ার মতো ঘটনা নিত্যসঙ্গী। কারণের পিছনে না ছুটে, দায় বর্তায় বিদ্যুৎ দফতরের ওপর। কথায় কথায় কর্মী ও অফিসারদের ঘেরাও করারও বিরাম ছিল না।

আজ প্রায় ৫০ বৎসর পর নতুন করে আবিষ্কার হল, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। চোর যখন ধরা যাবে না, তালাচাবিতে খরচ করো, প্রযুক্তির খামতি ধরো। আমার চাকরিকালীন অবস্থায়, বিভিন্ন জেলায় শহর বা গ্রামের প্রতিনিধিদের নিয়ে, এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি দিতে সভা করেছি। ফল, যথা পূর্বং। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, কারও কোনও হেলদোল নেই। সব কিছুই পেতে কড়ি গুনতে হয়, বিদ্যুতে যেন ছাড়।

প্রতিটি জেলায়, সার্কল অফিসে, রাজস্ব বাড়াবার তাগিদে, এস অ্যান্ড এল পি নামে একটি শাখা ছিল। এর মুখ্য কাজই ছিল হুকিং বা ট্যাপিং বা মিটার কারচুপির মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা। এই কাজে বেরিয়ে আধিকারিকরা সহযোগিতা তো পানইনি, উপরন্তু বাধা পেয়েছেন এবং হেনস্থা হয়েছেন। আজ বিদ্যুৎ দফতরের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে ১ কোটি ৮৫ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। সোজা নিয়মে বলা যায়, আনুপাতিক হারে ক্ষতিও বেড়েছে। ক্ষতি কমাতে তাই শুধু বিদ্যুতের সরবরাহ পরিষেবার উন্নতিকল্পে, নয়া নকশায় প্রযুক্তিগত মানোন্নতিই যথেষ্ট নয়। সঙ্গে সঙ্গে উপভোক্তাদেরও মানসিকতার উন্নতিকল্পে নয়া নকশার প্রবর্তন প্রয়োজন। সর্বোপরি এলাকার উন্নতিকল্পে যে সব সরকারি বা বেসরকারি দফতর কাজ করছে, তাদের ঐকান্তিক সহযোগিতা পেতে হবে। মিটারের প্রযুক্তিগত মান যথেষ্ট উন্নত হওয়া সত্ত্বেও, চুরি করার প্রযুক্তিগত মানও বেড়েছে। মিটারের কারচুপি রোখা যায়নি।

মিটার দেখার জন্য নির্ধারিত কর্মীর একাংশও ঠিক রিডিং না নেওয়ার জন্য দায়ী। কর্মীর অভাবে, বাইরের এজেন্সি নিয়োগ করে, মিটার দেখার কাজ সঁপে দিয়ে, তাদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করলে, ক্ষতি তো হবেই। যাদের দায় বা দায়িত্ব কোনওটাই নেই, তাদের কব্জায় বিদ্যুৎ দফতরের কাজস্ব আদায়ের ভার।

বিদ্যুৎ দফতরের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে এবং সুদীর্ঘকাল বণ্টন শাখার কাজে অতিবাহিত করে, কিছু পরমর্শ।

১) ছোট ছোট লাইন বা সাবস্টেশন বসিয়ে যেমন তার সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব, তেমনই ওই সাবস্টেশনের আওতায় থাকা গ্রাহকদের নিয়মিত মিটার রিডিং হচ্ছে কি না দেখা এবং সাবস্টেশনের মিটারের সঙ্গে তার সঙ্গতি আছে কি না, নজর রাখতে হবে।

২) লাইন খোলা তারে না টেনে, এবিসি বা এরিয়াল বাঞ্চড কেব্‌ল ব্যবহার করতে হবে। এতে লাইনের মাঝপথে হুকিং বা ট্যাপিং করে চুরি বন্ধ করা যাবে। অতীতে, অনেক এলাকায় এই কেব্‌ল ব্যবহার করে সুফল পাওয়া গিয়েছে। ব্যয়সাপেক্ষ হলেও, রাজস্ব বাড়াতে এর প্রয়োজন।

৩) কোনও এলাকায় গ্রাহকসংখ্যা হ্রাস পেলে, বোঝা যায় মিটার ছাড়া বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে নজর দিতে হবে।

৪) হয়তো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া গ্রাহক বকেয়া টাকা মেটাচ্ছেন না বা পুনরায় সংযোগ নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তখন ওই বাড়িতে অন্য নামে সংযোগ আছে কি না দেখতে হবে এবং বকেয়া উদ্ধারের পথ বার করতে হবে।

৫) বন্ধ হয়ে যাওয়া কল-কারখানায় বকেয়া থাকা রাজস্ব আদায়ে তৎপরতা আনতে হবে। নানা অছিলায় বিদ্যুতের বিল না মেটানোর প্রবণতা প্রায় সব দফতরেই আছে, বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সভায় সেগুলোর প্রতি কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। কারখানার আর্থিক দুরবস্থার বিবেচনায় বিদ্যুৎ বিলের টাকা কিস্তিতে মেটাবার সুযোগ দিলেও তা মেটাতে অনীহা লক্ষ করা গিয়েছে। ক্ষতির মধ্যে এ বাবদ পরিমাণও কম নয়।

৬) বিকল বা অকেজো মিটার ও তৎসংলগ্ন যন্ত্রপাতির ঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ, ওই সময় এক শ্রেণির গ্রাহকদের অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু সেইমতো রাজস্ব আদায় হয় না।

শ্যামল গুহরায়

কলকাতা-৭৪

দাওয়াই

প্রায় দু’কোটির কাছাকাছি গ্রাহকের জন্য ঘোষিত চাহিদার চেয়ে কেন বহুগুণ বিদ্যুতের চাহিদা বণ্টন সংস্থাকে মেটাতে হয়, সে বিষয়ে অদ্যাবধি কোনও সমীক্ষা নজরে আসেনি। অথচ বিদ্যুৎ চুরির প্রাথমিক দায় কিন্তু এই অসৎ উপায়ে বিদ্যুৎ টেনে নেওয়ার। দীর্ঘ ৩৫ বছর চাকরির সূত্রে দেখেছি, আগে একযোগে পর্ষদের ভিজিল্যান্স দফতর প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ চুরির বিরুদ্ধে পুলিশি সহায়তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সকল জেলাতে গোপনে অভিযান চালাত, চোর ধরা পড়ত এবং পর দিন তা বিভিন্ন কাগজে, টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হত। এ ছাড়া জেলায় জেলায় হত বিদ্যুৎ চুরির বিরুদ্ধে একাধিক দিনের ক্যাম্প।

আগে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় পর্ষদ চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারত না বলে, বাধ্য হয়েই প্রত্যাশী গ্রাহকেরা হুক ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি করত। গত ৮ বছরে সেই সমস্যা দূরীভূত হয়েছে। তা হলে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে: কেন প্রায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ চুরি, যন্ত্রাংশ চুরি, পরিবাহী তার কেটে নেওয়া এবং প্যারালাল ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি হবে এবং তা রোখা যাবে না? নতুন প্রকৌশল আসছে ভাল কথা, কিন্তু তাতে কি গ্যারান্টি আছে বিদ্যুৎ চোর ও মদতকারীদের দমন নিশ্চিত হবে?

বিদ্যুৎ চুরি রোধে আবশ্যক প্রতিনিয়ত অভিযান করা। বিদ্যুৎ চোর এবং মদতকারীদের ধরে ২০০৩-এর কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী সরাসরি জেলে পোরা ও জরিমানা করা। সিদ্ধান্ত করা: চোরেরা চির কালের জন্য বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হবে।

এই দফতরে চাকরির সূত্রে দেখেছি, বিদ্যুৎ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরি করে বৃত্তিভোগী বিদ্যুৎ চোর, মোড়ল শ্রেণি, আঞ্চলিক মাতব্বর, প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, রাজনৈতিক আশ্রয়পুষ্ট দল এবং অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্ট এলাকার সজ্জনেরা জানলেও বাধ্য হয়ে প্রতাপের কাছে নীরব থাকেন। কোনও এলাকায় প্রতিপত্তিহীন কারও পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। এদের শায়েস্তা করা গুটিকয়েক বিদ্যুৎকর্মীর পক্ষেও অসম্ভব।

এ জন্য প্রয়োজন: ১) ধারাবাহিক প্রচার। ২) জনসংযোগ দফতর এবং ভিজিল্যান্স দফতর একযোগে অভিযানে শামিল হওয়া। ৩) প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পাক্ষিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ চুরির মালপত্র ইত্যাদির খতিয়ান কেন্দ্রীয় অফিসে জানানো। ৪) ধরা পড়া ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও মালপত্রের ছবি-সহ গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন।

নীহার মজুমদার

কলকাতা-৫৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘একই সঙ্গে দুই কিডনি প্রতিস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (কলকাতা, পৃ ১২, ৩১-১) রিনা মুখোপাধ্যায়ের নাম রিমা এবং বয়স ৬৪ প্রকাশিত হয়েছে। রিনাদেবীর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। কয়েক সপ্তাহ আগে নয়, তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন ২৮ জানুয়ারি। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Electricity Hooking WBSEDCL
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy