Advertisement
১১ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

এদের সমর্থন করাও কিন্তু ‘অপরাধ’, কারণ কেউ মুসলমান মারতে লোক পাঠায়, আর এরা লোক পাঠায় গণতন্ত্র মারতে! 

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

কোনটা ‘অপরাধ’

সেমন্তী ঘোষকে ধন্যবাদ, তাঁর লেখায় (‘ভালই তো, চিনে নেওয়া গেল’, ১৬-৫), কী ভাবে নরেন্দ্র মোদীদের সমর্থন করে অপরাধী হতে পারি, তা চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে গৈরিক ধ্বজাধারীরা, এদের সমর্থন করা অবশ্যই অপরাধ। সমস্যাটা হচ্ছে, এদের সমর্থন না করে উল্টো দিকে গেলে কাদের পাব? যারা পঞ্চায়েত নির্বাচনকে নিমতলা শ্মশানঘাটে পাঠিয়েছিল, সারা ভারতে নির্বাচন শান্তিতে হলেও যাদের জন্য প্রতি ভোটে প্রতি দিন অশান্তি নিশ্চিত থাকে, ছাপ্পা মনে করায় বিহারকে, যাদের ভয়ে বুথের ত্রিসীমানায় যেতে ভয় পান গ্রামবাংলার বহু মানুষ, কারণ তাঁরা দেখেন উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, যারা শিল্পের নামে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে বলে আর তেলেভাজা শিল্প নিয়ে গর্ব করে, আর একটা গ্রুপ ডি-র চাকরির জন্য ৫০০০ লোকের পিছনে লাইন দিতে হয়, এবং বাংলার রাস্তায় রোড-শো করাটা যারা একমাত্র তাদের অধিকার বলে ভাবে (প্রধানমন্ত্রীকে থাপ্পড়, ওঠবোস— এগুলো তো জলভাত)? এদের সমর্থন করাও কিন্তু ‘অপরাধ’, কারণ কেউ মুসলমান মারতে লোক পাঠায়, আর এরা লোক পাঠায় গণতন্ত্র মারতে!

আর একটা কথা, সংবাদপত্রে কি লেখা যায়, একটি সংবিধানস্বীকৃত দলকে ভোট দিলে ‘অপরাধ’ হবে!

জয়ন্ত ভট্টাচার্য

কলকাতা-৩৪

বেশি চিন্তার
সেমন্তী ঘোষের লেখাটি আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, যেখানে একটি দলের বিরোধিতা করে অপর একটি দলকে ২০১৯ লোকসভা ভোটে জয়যুক্ত করার কথা প্রায় প্রতিটি ছত্রে লেখা হয়েছে। লেখাটিতে সবুজ গুন্ডামি ও গেরুয়া সন্ত্রাসের শ্রেণিবিভাগ করা মনে করিয়ে দেয় ভাল সন্ত্রাসবাদ ও খারাপ সন্ত্রাসবাদের কথা। একটির উপস্থিতি অন্যটিকে প্রাসঙ্গিক করে তোলে। যে মমতাজদের বাঁচানোর কথা বলা হয়েছে, প্রশ্ন হল, এই বঙ্গে তাঁদের বিপদে ফেলল কে? স্বাধীনতার পর যেখানে কখনও সাম্প্রদায়িকতা সমাজের মূলস্রোতে আসেনি, সেখানে গত ১০ বছরে হঠাৎ সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিল কেন? অনুপ্রবেশ সমস্যাকে ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার ও সীমান্ত এলাকার মানুষদের অভাব-অভিযোগ উপেক্ষা কেমন ধরনের রাজনীতি? যারা বিপদ তৈরি করল ভ্রান্ত নীতির প্রয়োগ ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য, তাদের রক্ষাকারী ভাবাটাই বাড়াবাড়ি রকমের অপ্রাপ্তমনস্কতা। নিকটের সুবিধার জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে না দেখতে চাওয়ার প্রয়াস বাংলার পক্ষে বিপজ্জনক। যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে, তাদের শাস্তি কাম্য। যারা বিদ্যাসাগরকে নিয়ে রাজনীতি করছেন, তাঁরা তাঁর আদর্শকে ভাঙছেন। কোনটি বেশি চিন্তার?
প্রদীপ ঘোষ
উত্তর দিনাজপুর

খাল কেটে কুমির
লেখাটির মোদ্দা কথা, বড় গুন্ডাকে রুখতে গেলে ছোট গুন্ডার অত্যাচার মেনে নিতে হবে। লেখিকা তফাত করেছেন অনিয়ন্ত্রিত জনতার ভাঙচুর আর নিয়ন্ত্রিত জনতার হিংসার মধ্যে। পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের হিংসা কি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত হিংসা ছিল না? উদ্দেশ্য ছিল, বিরোধীদের একটি আসনও দেব না। এখনও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী একই হুমকি দিয়ে চলেছেন। অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও বামফ্রন্ট সেকুলার ছিল। এখন সিপিএমের বহু কর্মী স্রেফ প্রাণের দায়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দু’বার বিজেপি সরকারকে সমর্থন করেছেন। এখন খাল কেটে কুমির ডেকে আনার পর, ‘কুমির অতি ভয়ানক জন্তু’ বলে আর্তনাদ করে লাভ নেই৷
রাজকুমার রায়চৌধুরী
কলকাতা-৭৫

অনুচিত
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার মতো গর্হিত কাজের নিন্দার ভাষা নেই। কিন্তু অসংখ্য মানুষের ভিড়ের মধ্যে ঠিক কারা এই মূর্তি ভাঙার কাজটা করল, সেটা এখনও ধোঁয়াশায় ভরা, বিশেষত যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে লেখিকা কিছু তথাকথিত প্রত্যক্ষদর্শীর উড়ে আসা কথা উদ্ধৃত করে একটি দলকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করেছেন। এ চেষ্টা রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের মানায়।
আরও লিখছেন, ‘‘বার বার একটা কৈফিয়তের সুরে শুনছি যে, তৃণমূলের উস্কানি ছিল। ছিল, নিশ্চয়ই ছিল। থাকবে না-ই বা কেন। বিজেপি যেখানে হাজারে হাজারে লোক বাইরের রাজ্য থেকে এনে বজরংবলী মিছিলে কলকাতার রাজপথ কাঁপাচ্ছে, সেখানে অন্য দল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে উস্কানি দেবে, এটাই তো প্রত্যাশিত।’’ এই মনোভাবের ভেতরেই দাঙ্গার বীজ অঙ্কুরিত হয়।
উনি লিখেছেন, ‘‘মমতা, রাহুল বা মায়াবতী বা অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হলেও হিংস্রতা অন্যায় কুশাসনের দিক দিয়ে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর বহু নীচেই তাঁদের স্থান হবে’’— এই ভবিষ্যদ্বাণী কেউ কি করতে পারেন?
অনিলেশ গোস্বামী
শ্রীরামপুর, হুগলি

লাভ কী?
বিজেপিকে ভোট দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তা হলে কাকে দেব? আমার এলাকার প্রাক্তন সাংসদকে নারদা কাণ্ডে ঘুষ নিয়ে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলতে শুনেছি। তিনি এ বারও আমার কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। যে হেতু সেমন্তীর মতে ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডামি আর বিজেপির বর্বরতা এখনও চরিত্রগত ভাবে আলাদা’’, তাই বিজেপিকে রুখতে তাঁকে দেব?
লেখা হয়েছে, ‘‘...তৃণমূল নেতা কর্মীদের গুন্ডামি ও অসভ্যতার সঙ্গে আমরা প্রত্যহ প্রবল ভাবে পরিচিত। তার আগে পরিচিত, সিপিএমের স্পর্ধা, দুর্নীতি ও গুন্ডামির সঙ্গে।’’ বামফ্রন্টের শেষ ১৫ বছর সিপিএমের বহু নেতা-কর্মীর ঔদ্ধত্য, গুন্ডামি, একাংশের দুর্নীতি দেখেছি। কিন্তু একদম শুরুর দিকটা তো সেই রকম ছিল না। অথচ তৃণমূলের প্রথম আট বছরের মধ্যেই গুন্ডামি, অসভ্যতা দেখলাম। শুধু তা-ই? তৃণমূলের দুর্নীতি, অসততা? ভর্তির সময় সিট নিয়ে কলেজগুলিতে তোলাবাজি, ইট-বালির সিন্ডিকেট? সারদা কেলেঙ্কারির আজও কোনও সুরাহা কেন হল না? এসএসসি-র এম্প্যানেল্‌ড চাকরিপ্রার্থীদের স্কুলে শূন্য পদের সংখ্যা প্রকাশের দাবিতে অনশন করতে হয় কেন? নারদা স্টিং অপারেশনে যাঁদের হাত পেতে ঘুষ নিতে দেখা গেল, তাঁদের কাউকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে শো-কজ়ও করা হয়নি। তবু তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত নয়?
সেমন্তী সঙ্গত ভাবেই লিখেছেন, ‘‘...এই ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ভোট নয়।’’ সন্দেহ নেই, এখন সবচেয়ে বড় বিপদ বিজেপি। কিন্তু ‘‘মমতা খারাপ না ভাল’’ ২০২১’এ ভেবে দেখার সুযোগ পাব তো? আরও তলিয়ে যাব না তো তত দিনে? বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূল বিকল্প হলে, বিপদ কি কমবে? এই যে হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে এত ঘৃণা, সেটা কিন্তু তৃণমূলের মদতে বেড়েছে। আমি ১৯ বছর শিক্ষকতা করি। আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দু ও মুসলমান পড়ে। ২০১১-র আগে ক্লাসে হিন্দু-মুসলমান ছাত্রের মধ্যে বিভেদ ছিল না। কিন্তু ২০১১-র পর মুখ্যমন্ত্রী ইমাম ভাতা চালু করলেন। হাইকোর্টে মামলায় রাজ্য সরকার হেরে যাওয়ার পর ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে সেই ভাতা চালু থাকল। সাচার কমিটির সুপারিশ কার্যকর না করে, ভোটের জন্য মুসলিম তোষণ শুরু হল। ইতিমধ্যে ভারতীয় মিডিয়া মোদী-হাওয়া বইয়ে দিয়েছে। হিন্দুত্বের অস্মিতা নিয়ে মোদী-শাহর আস্ফালনে আমোদিত আমার হিন্দু ছাত্রছাত্রীর একটা বড় অংশও। তাদের ইন্ধন দিল মুখ্যমন্ত্রীর মুসলিম তোষণ। বসিরহাটে যখন দাঙ্গা হল তখন আমার দুই ধর্মের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নিদারুণ ধর্মীয় বিদ্বেষ। তখন বুঝলাম, কতটা তীব্র ধর্মীয় হিংসার বাতাবরণ মোদী ও মমতা যৌথ উদ্যোগে তৈরি করেছেন। এখনও করে চলেছেন। দু’দলই তো রামনবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে। তাই তৃণমূল কি বিজেপিকে রুখতে পারবে? তা হলে বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়ে আমার লাভ কী?
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৫১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE