Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: নজরুলের এক কবিতা

আপাত ভাবে নজরুল এই কবিতায় ‘দ্বীপান্তর’ বলতে তো আন্দামানকে ও আন্দামানের সেলুলার জেলকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু কবিতার শিরোনামে ‘বন্দিনী’ শব্দটি কবিতাটির বিষয়কে আরও প্রসারিত করেছে। আন্দামান এক ধাক্কায় ভারত মা হয়ে গেল।

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

নজরুলের এক কবিতা

• সরস্বতী পুজোর উদ্বোধন করবেন কাজী নজরুল ইসলাম। চন্দননগরের প্রাচীন ক্লাব ‘সন্তান সংঘ’-র আমন্ত্রণকে উপেক্ষা করেননি তিনি। এই উপলক্ষে নজরুল স্বরচিত কবিতা ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ পাঠ করলেন। ‘কবিতাটি রচিত হয়েছিল মাঘ, ১৩৩১ বঙ্গাব্দে। নজরুল রচনাসম্ভার জানাচ্ছে, কবিতাটির রচনাস্থান হুগলি। কবিকণ্ঠে কবিতাটির প্রথম পাঠস্থান চন্দননগর। পরে ১৯৪৫ সালে, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, সবুজ দ্বীপ আন্দামান আর সেলুলার জেলের বন্দিদের মুক্ত করেছিলেন নেতাজি সুভাষ। যা-ই হোক আপাত ভাবে নজরুল এই কবিতায় ‘দ্বীপান্তর’ বলতে তো আন্দামানকে ও আন্দামানের সেলুলার জেলকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু কবিতার শিরোনামে ‘বন্দিনী’ শব্দটি কবিতাটির বিষয়কে আরও প্রসারিত করেছে। আন্দামান এক ধাক্কায় ভারত মা হয়ে গেল।

কবিতা রচনাকালে, তখনও চলছে প্রতিবাদীদের ধরে ধরে, কালাপানি পার করে সেলুলার জেলে রেখে আসা। ‘বাণী যেথায় ঘানি টানে নিশিদিন’।

সরস্বতী পূজার উদ্বোধন করতে এসে, এ সব কেন? আসলে ব্রিটিশ পদানত ভারতে তখন মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ছিল না। তা যদি না থাকে, তা হলে বাগ্‌দেবী সরস্বতী বন্দনার আগে, দেশমাতৃকাকে বন্দিনি দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। নজরুলের কথায়— ‘পূজারি, কাহারে দাও অঞ্জলি?/মুক্ত ভারতী ভারতে কই?’ দেশ ও দশের মুক্তিতে দেশের সন্তানদের উপর আস্থা রেখেছিলেন নজরুল। বললেন— ‘ঢাক’ অঞ্জলি, বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ!’ বিভেদকামী অত্যাচারীদের হাত থেকে দেশকে মুক্তির দায়ভার নেবে সে দেশেরই সন্তান। সে-দিন উপস্থিত সন্তানদলের বুঝতে আর বাকি রইল না, নজরুল আসলে কী বলতে চাইছেন।

রমজান আলি

বর্ধমান

বক্সা ফোর্ট

• বক্সা ফোর্ট— নামটা শুনলেই এক রাশ ইতিহাস মনে ভিড় জমায়। সম্প্রতি রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী ভ্রমণের সময় গিয়েছিলাম সেখানে। কিন্তু এই ঐতিহাসিক স্থানে পৌঁছনোর এক ভিন্ন উদ্দেশ্যও ছিল। আমার পিতামহ ছিলেন ‘অনুশীলন সমিতি’র সদস্য, স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঢাকা ‘সেন্ট্রাল জেল’-এ দু’বছর কাটানোর পর, তাঁকে নিয়ে আসা হয় তৎকালীন ‘বক্সা জেল’-এ। তাই এই জেলের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা দাদুর থেকে সরাসরি শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল।

সান্তালাবাড়ি ছাড়িয়ে গাড়ি যখন এগোচ্ছে তখন থেকেই গায়ে কাঁটা দেওয়া অনুভূতি শুরু। ভাবতে লাগলাম, ১৯৪০-এর দশকে নিশ্চয় এর চেয়েও অনেক দূর থেকে বন্দিদের হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। দাদুর কাছ থেকেই শোনা— সেই সময় বন্দিদের হাত-পায়ে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হত ওই দুর্গম পথ দিয়ে। পথে চলতে চলতে কেউ নেতিয়ে পড়লে, চলত বেত। যদি একান্তই কেউ হাঁটার ক্ষমতা হারাত, তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হত ওই পাথুরে রাস্তা দিয়ে। বলা হয়— আন্দামানের ‘সেলুলার জেল’-এর পর এটিই ছিল সবচেয়ে দুর্গম এবং ভয়ংকর জেল। চার দিক পাহাড়ে ঘেরা। এখানে থাকত প্রচণ্ড ঠান্ডা। দুর্গম পথ এবং ঠান্ডাই ছিল বন্দিদের শায়েস্তা করার মোক্ষম উপায়।

একরাশ উৎসাহ নিয়ে তৈরি ছিলাম জায়গাটিকে চাক্ষুষ করার জন্য। কিন্তু দূর থেকেই ফোর্ট-টা দেখে, মনটা কু ডাকতে লাগল— কী ভগ্নদশা! ভুটিয়া বাড়ি-ঘর, চায়ের দোকান পেরিয়ে ফোর্টের মূল দরজায় গিয়ে হাজির হতেই চোখে পড়ল দুটি প্রস্তর-ফলক। বন্দিরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি দিয়েছেন এবং তার উত্তর দিয়েছেন কবিগুরু। কতকগুলো জং-ধরা দরজার ফ্রেম পেরিয়ে ফোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকতেই সেরেফ কান্না পেল। ফোর্টের চার পাশের জঙ্গল যে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই, প্রায় পুরো ফোর্টই ভেঙে পড়েছে।

যে-দেশের স্বাধীনতা আনার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা তাঁদের সর্বস্ব ত্যাগ করে, যৌবনের দিনগুলি জেলে কাটালেন, সে-দেশের সরকার তাঁদের সম্মান জানানোর প্রয়োজন মনে করে না! কেবল একটি স্মৃতি-ফলক উদ্বোধন করে দায় সেরে ফেললেই হয়ে গেল! সরকারের কি কর্তব্য ছিল না এই ভগ্নদশাপ্রাপ্ত ফোর্টটিকে ‘হেরিটেজ’-এর অন্তর্ভুক্ত করে রক্ষণাবেক্ষণ করা?

কতকগুলি স্থানীয় লোকের পয়সা রোজগারের ফিকিরে আদতে একটি ‘মিথ’-এ পরিণত হয়েছে বক্সা ফোর্ট। আসলে এখানে দ্রষ্টব্য বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। যে স্থানীয় বাসিন্দারা গাইড হিসাবে কাজ করেন, তাঁদের ঠিক তথ্য জানাই নেই! সাকুল্যে তিনটি ঘর এখনও আস্ত আছে, সেগুলিকে দেখিয়ে গাইড নিজের মনগড়া গল্প বলে গেলেন, কিন্তু সে গল্পে যতীন চক্রবর্তী বা আশুতোষ কাহালির উল্লেখ অবধি নেই। স্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, ভুটিয়া বস্তি যেখানে গড়ে উঠেছে, সেটি খুব সম্ভবত ফোর্টেরই অংশ ছিল আগে!

এখানেই শেষ নয়, গাইডকে জিজ্ঞেস করলাম, মিউজিয়ামে যাওয়া যাবে কি না। তিনি উত্তর দিলেন, ‘চাবি পাওয়া গেলে যাবে!’ একটু পরে রহস্য ভেদ হল। মিউজিয়ামটা ফোর্ট ছাড়িয়ে আরও একটু উঁচুতে। অবাক হয়ে দেখলাম, মিউজিয়ামের চাবি ঝোলানো রয়েছে স্থানীয় এক বাসিন্দার ঘরের বারান্দায়। সেখান থেকেই চাবি নিয়ে সবাই মিউজিয়াম দেখতে যান, অবশ্যই যদি জানা থাকে চাবির আস্তানা। ফলে গাইড না নিয়ে যাঁরা মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই ফিরে গেছেন। অথচ মিউজিয়াম দেখভাল করার জন্য এক জন সরকারি কর্মচারী রয়েছেন, কিন্তু তার দেখা মিলল না! মিউজিয়াম মানে একটা ঘর, যেখানে হাতে-গুনে ১০-১২ জন স্বাধীনতা-সংগ্রামীর ছবি দেখা গেল, কোনও লেখা ইতিহাস চোখে পড়ল না। এখানেই শেষ হল আমাদের বক্সা ফোর্ট ঘোরা।

এই লেখা পড়ে বক্সা ফোর্টকে বাঁচানো হবে, এমন দুরাশা পোষণ করি না। তার চেয়ে বড় কথা, বাঁচানোর মতো কিছু আর অবশিষ্টই নেই। এই লেখা শুধু এক জন লজ্জিত বাঙালির, যে বাংলার বাইরে বেড়াতে গিয়ে দেখেছে তাদের ঐতিহাসিক স্থান রক্ষা করার তাগিদ। এক জন লজ্জিত স্বাধীনতা-সংগ্রামীর পরিবারের সদস্যের, যে হলফ করে বলতে পারে, বাংলা বলেই এত অবমাননা, এত উদাসীনতা জুটেছে তার পূর্বপুরুষদের কপালে।

কমলিকা চক্রবর্তী

কলকাতা-৭৮

টিপু সুলতান

• তনিকা সরকার ও সুমিত সরকার তাঁদের সাক্ষাৎকারে (‘আরএসএস=বিজেপি’, ২৪-১১) বলেছেন টিপু সুলতানের নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ ও সেই প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা। টিপুর নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের উল্লেখ আছে এ পি জে আবদুল কালামের আত্মজীবনীতেও। বিজ্ঞানী কালাম আমেরিকার ভার্জিনিয়ার কাছে ওয়ালপস দ্বীপে ওয়ালপস ফ্লাইট ফেসিলিটি-তে গিয়েছিলেন। এটি ‘নাসা’র কেন্দ্র। এখানকার রিসেপশন লবিতে তিনি একটি ছবিতে দেখেন, একটি যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য, পিছনে কয়েকটি রকেট উড়ছে। যে সৈনিকরা রকেট ছুড়ছেন, তাঁরা শ্বেতাঙ্গ নন, কালো মানুষ। কৌতূহল চাপতে না পেরে তিনি এগিয়ে দেখেন, ছবিতে টিপু সুলতানের সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ করছে ব্রিটিশদের সঙ্গে।

কালাম জানিয়েছেন, ‘যে ঘটনাটি চিত্রিত হয়েছে, টিপু সুলতানের নিজের দেশে সেটি বিস্মৃত হলেও ভূ-মণ্ডলের আর এক দিকে তার স্মৃতি সযত্নে রক্ষিত হয়েছে। এক জন ভারতীয়কে ‘নাসা’ এই ভাবে যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক জন বীর হিসেবে উচ্চাসনে বসিয়েছে দেখে আমার ভাল লাগল।’

কালামের বই থেকে আরও জানতে পারি, ১৭৯৯ সালে তুরুখানাল্লির যুদ্ধে টিপু যখন নিহত হন, ব্রিটিশরা হাতে পেয়ে যায় সাতশোরও বেশি রকেট ও ন’শো রকেটের অন্তর্গত বিভিন্ন উপ-ব্যবস্থাদি। উইলিয়ম কংগ্রিভ রকেটগুলি ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। ব্রিটিশরা এগুলিকে নিয়ে বিপরীত কারিগরি পদ্ধতিতে এর নির্মাণের কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা করে।

উত্তমকুমার পতি

শালডিহা হাই স্কুল, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE