Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Organic Food

সম্পাদক সমীপেষু: জৈবতেও বাণিজ্য

জৈব ফসল নিরাপদ, সুস্বাদু, প্রভৃতি ধারণাকে নতুন করে মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে সেই বিজ্ঞানই।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৮
Share: Save:

চিত্তাকর্ষক এবং ভাবনা-উদ্দীপক ‘পুনশ্চ ঢেঁকি’ (১০-৯) সম্পাদকীয়টি বেশ কিছু বড় সমস্যার অবতারণা করেছে। এক কালে যখন মানুষের এত চাহিদা ছিল না, হাতে সময়ও ছিল অঢেল, তখন নানা রকম সার-বিষহীন, দীর্ঘমেয়াদি দেশি ধানের চাষ হত। তার ভাত শুধু নয়, ফ্যানও ছিল স্বাদু। তৃপ্তি করে মানুষ খেতেন, তার সঙ্গে ডাল-তরকারি, মাছ-মাংস থাকুক বা না থাকুক। কিন্তু এখন চিত্র তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। টাকার চাহিদা প্রচুর। অথচ, চাষের জমি কমছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি জোগাচ্ছে সঙ্কর বীজ, রাসায়নিক সার আর কম সময়ে উৎপাদনের সহায়ক প্রযুক্তি। রাসায়নিক পদার্থের সহায়তায় বেড়ে উঠছে পোলট্রির হাঁস-মুরগি, মাছ, আনাজপাতি, ডাল, কলাই, ফল, মশলা প্রভৃতি। আজ মানুষের কাছে প্রকারের থেকে আকারটাই মুখ্য।

জৈব ফসল নিরাপদ, সুস্বাদু, প্রভৃতি ধারণাকে নতুন করে মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে সেই বিজ্ঞানই। বাজার-চালু অপেক্ষাকৃত কম দামের আনাজের কুফল, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার, এবং তার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে চলেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান, রসায়ন বা পরিবেশ বিজ্ঞান। তার ফলে জৈব পণ্যের বাজার ধরতে বৃহৎ পুঁজি উদ্যোগ করেছে। মানুষও সাধ্যমতো সেগুলো কিনছেন। কিন্তু এগুলি ক’জনের নাগালের মধ্যে? দাম তো কম নয়! এর পর রয়েছে কৃষকের আয়, অর্থাৎ লাভজনক কৃষির প্রশ্নও। আমাদের মতো দেশের মানুষ কী উপায়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষের নানা উপাদান জুটিয়েও রাসায়নিক ব্যবহারকারী উৎপাদকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন, তার কৌশল ভাবা দরকার। শেষ পর্যন্ত ঢেঁকি সারা দিনে কতটা পরিমাণ ধান ভানতে পারবে, লাভের মুখই বা কতটা দেখতে পাবেন চাষি, সেই প্রশ্নগুলোও কিন্তু কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

শান্তি প্রামাণিক, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

সোনালি তারকা

চিত্রতারকা দেব আনন্দের জন্ম ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩। তাঁর জন্মশতবর্ষ কি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের একটি উদ্‌যাপনের মুহূর্ত বলে পালিত হবে? দেব আনন্দ আজ ইতিহাসের এক ফুটনোট নন কি শুধু?

বাংলায় যেমন উত্তমকুমার, তেমনই হিন্দি সিনেমার ত্রিমূর্তি, দেব আনন্দ-রাজ কপূর-দিলীপকুমার তাঁদের নিজেদের জায়গায় অনড়। তাই বিভিন্ন আলোচনায় এঁদের উল্লেখ হতে থাকে, এঁদের ‘মিমিক’ করে শো হয়, সাদা-কালো মুঘল-ই-আজ়ম বা হম দোনো রঙিন হয়ে ওঠে। হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগের নির্মাণ এই তিন মহারথীর হাতে, তাই এঁরা অবিস্মরণীয়। নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছিলেন, তাঁর অবাক লাগে যে দেব আনন্দকে অনেকেই অভিনেতা বলতে চান না। অথচ, দেব আনন্দ এমন এক অভিনেতা, যিনি সবার থেকে স্বতন্ত্র রীতিতে অভিনয় করে দীর্ঘ সময় মানুষের মনে একটা জায়গা তৈরি করেছিলেন।

আসলে দেব আনন্দ জানতেন, দিলীপকুমারের প্রতিভার দুর্নিবার আকর্ষণ ও বিশাল ক্যানভাস তাঁর নেই, রাজ কপূরের আলাভোলা, দুঃখী অথচ আমুদে মানুষের চরিত্রচিত্রণ তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিপন্থী। তাই তিনি বেছে নেন তৃতীয় পথ— এমন এক আশ্চর্য, অননুকরণীয় অভিনয়রীতি, যা তাঁর মতো এক জন বিরল তারকাই আয়ত্ত করতে পারেন। এটি হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগের সূচনা ও বিস্তার ঘটাতে পেরেছিল। ‘দেব সাহাব’ বুঝে নিয়েছিলেন দর্শক তাঁর কাছে ঠিক কী চাইছেন, কোন অভিব্যক্তি ও স্টাইল পছন্দ করছেন, আর সেই অনুযায়ী তিনি তৈরি করে নিলেন নিজেকে। তাঁর দ্রুত বাচনভঙ্গি, বিশেষ শরীরী বিন্যাসের জন্য তাঁকে নিয়ে গড়ে উঠল মুগ্ধতা। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ, গণ-মনস্তত্ত্ব বুঝে আত্মনির্মাণ ও প্রভাব বিস্তার যাঁরা পারেন, তাঁদেরই আমরা ‘স্টার’ বলি। অমিতাভ বচ্চন কলেজে দেখেছিলেন সব ছাত্রের ফুলহাতা শার্টের উপর ফুলহাতা সোয়েটারটাই শুধু কনুই অবধি গোটানো। কালা বাজ়ার ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরেই।

হিন্দি ছবিতে অ্যাকশনের মধ্যেও রোম্যান্টিক ব্যাপার একটু থাকে। এর অন্যতম কান্ডারি ছিলেন দেব আনন্দ। তাঁর আত্মজীবনীর নাম রোম্যান্সিং উইথ লাইফ। যে সময়ে ড্রয়িংরুম-শোভিত নিপাট ভালমানুষ, মৃদুভাষী নায়করা ভারতীয় দর্শককে ক্লান্ত করে তুলেছেন, ঠিক তখন এক সুদর্শন যুবক মুখে বিড়ি, হাতে পায়রা, ঈষৎ বাঁকা টুপি ও অপরাধ-প্রবণতার এক নতুন মিশেল নিয়ে পর্দায় আসতেই আসমুদ্রহিমাচল ভারতের শ্রমজীবী, নিম্নবর্গের মানুষ তাঁকে উচ্ছ্বসিত হয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। স্মরণীয় হওয়ার এক অন্যতম পথ হল প্রথা ভাঙা, অমিতাভ বচ্চনের অনেক আগে দেব আনন্দ সেটাই করে দেখিয়েছিলেন।

১৯৫১ সালে বাজ়ি থেকে শুরু করে একের পর এক সুপারহিট ছবি করেন তিনি। তবে তাঁর জীবনের সেরা ফসল— গাইড। দেব আনন্দের প্রথম রঙিন ছবি, এমন এক ছবি যেখানে নায়ক মারা যায়। একের পর এক ছবিতে রোম্যান্টিক নায়ক সাজলেও নিজেকে একঘেয়ে হয়ে যেতে দেননি দেব সাহাব।

লন্ডন ২০১১, ডিসেম্বর। একটি ছোট চার্চ থেকে পুষ্পাচ্ছাদিত শবাধার নিয়ে বেরোলেন তাঁর আত্মীয়-বন্ধুরা। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে শুনেছি, “যে ট্যাক্সি চড়ে ওই চ্যাপেলে যাচ্ছিলাম তার চালক দিল্লির ছেলে। আমার মুখে খবরটা পেয়ে চমকে উঠল। তার পর আমাকে নামিয়ে দিয়ে সে-ও ঢুকে গেল চার্চে। কিন্তু বলুন, এই কি দেব আনন্দের শেষযাত্রা? এই ক’টা মাত্র লোক!” দেব আনন্দ হয়তো এটাই চাইতেন। যে জীবনবিলাসী বলে, “ম্যায় জ়িন্দগি কা সাথ নিভাতা চলা গয়া,” তাঁর কাছে মৃত্যু নিয়ে হইচই কেন প্রার্থিত হবে?

শুধু মনে পড়বে, বাঁ দিকে সামান্য হেলে, একটু ঝুঁকে তাঁর হেঁটে যাওয়া এবং একই সঙ্গে সেই চিরায়ত গান— “অভী না যাও ছোড়কর কর কে দিল অভী ভরা নহী।”

সুরঞ্জন চৌধুর, কলকাতা-৯৭

অলরাউন্ডার

সুমিত ঘোষের ‘আশা-আশঙ্কায় ঘোষণা বিশ্বকাপ দল’ (৬-৯) প্রতিবেদনের শিরোনামটি যথার্থ। সত্যিই, বিশ্বকাপের জন্য যে ১৫ জনের দল ঘোষণা হয়েছে, সেখানে রোহিত, বিরাট, জাডেজা, হার্দিক, শামি, সূর্যকুমারের মতো বিশ্বমানের ক্রিকেটাররা আছেন, যাঁদের উপর দেশবাসীর অগাধ আস্থা। এঁদের যে কেউ একটি ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে সক্ষম। পাশাপাশি ঈশান, রাহুল ও শুভমনের ব্যাটিং এবং সিরাজ় ও কুলদীপের বোলিং ভারতীয় দলের আস্থার জায়গা। এঁদের হাতে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের ছবি দেখার আশা আমরা করতেই পারি।

কিন্তু আশঙ্কার কথা এটাই যে, ক্রিকেটে ‘ব্যাটিং বিপর্যয়’ বলে একটা কথা চালু আছে। প্রথম পাঁচ বা ছ’জন ব্যাটার রান না পেলে অনেক সময় বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে লড়ার মতো মোট রান মেলে না, যদি না শেষ পাঁচ জনও ভাল রান পায়। সেই জন্য বর্তমান ক্রিকেটে, বিশেষ করে এক দিনের খেলায় নিয়মিত বোলার হিসাবে এমন পাঁচ জনকে রাখা হয়, যাঁদের মধ্যে অন্তত দু’-তিন জনের ব্যাটিং হাতটাও বেশ ভাল। তেমন ‘অলরাউন্ডার’ এই ভারতীয় দলে প্রকৃত অর্থে মাত্র দু’জন, রবীন্দ্র জাডেজা ও হার্দিক পাণ্ড্য। শার্দূল ঠাকুর ও অক্ষর পটেলকে ‘অলরাউন্ডার’ হিসাবে দলে নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। বাকি বোলারদের মধ্যে শামির কাছে কিছু রান আশা করা যেতে পারে।

শুধুমাত্র বোলার, এমন খেলোয়াড় এখন এক দিনের দলে বেমানান। শেন ওয়ার্ন, মুরলীধরন বা গ্লেন ম্যাকগ্রা-র মতো অসামান্য বোলার ব্যতিক্রম। তাই ভারতীয় দল নিয়ে কিছু চিন্তা রয়েই গেল।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Organic Farming Organic fertilizer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE