হেমন্ত করকরেকে নিয়ে সাধ্বী প্রজ্ঞার বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে নানা মহলে সামলোচনার ঝড়।
এঁরা আবার অকাতরে দেশপ্রেমের শংসাপত্র বিলি করেন! দেশের জন্য সর্বোচ্চ বলিদান দিয়েছেন যিনি, তাঁকেও ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিতে এঁদের বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না।
গোটা দেশকে অবাক করে দিয়েছেন সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত এই সাধ্বীকে ভোটের ময়দানে নামিয়েছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল লোকসভা আসনে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাধ্বী। কিন্তু ময়দানে হাজির হওয়া মাত্রই সাধ্বী যে মন্তব্য করেছেন শহিদ হেমন্ত করকরের সম্পর্কে, তাতে গোটা দেশ স্তম্ভিত। মুম্বইয়ে ২৬/১১ জঙ্গি হানার সময় সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে হেমন্ত করকরে কী ভাবে মৃত্যু বরণ করেছিলেন, গোটা দেশ তা জানে। সেই হেমন্তকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিতে সাধ্বী প্রজ্ঞার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। গোটা দেশ চমকে গিয়েছে। ভোটের মরসুমে যে দল দেদার বিলোচ্ছে ‘দেশপ্রেমের’ সার্টিফিকেট, যে দল সাধ্বী প্রজ্ঞাকে ভোটের টিকিটও দিয়েছে, সেই বিজেপি-ও এই মন্তব্যকে হজম করতে পারেনি। সাধ্বীর মন্তব্যের সঙ্গে দলের অবস্থানের কোনও মিল নেই, দল হেমন্ত করকরেকে শহিদ হিসেবেই শ্রদ্ধা জানায়— বিজেপির তরফে এমনই জানানো হয়েছে। দেশজোড়া নিন্দার ঝড়ের মাঝে পড়ে সাধ্বী প্রজ্ঞা নিজে ক্ষমা চেয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত এই সাধ্বী প্রজ্ঞা। হেমন্ত করকরে ওই বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্ত করছিলেন এবং সাধ্বীকে দোষী সাব্যস্ত করতে তত্পর হয়েছিলেন। ভোপাল থেকে বিজেপির টিকিট পাওয়ার পরে সাধ্বী দাবি করেছেন, তাঁর অভিশাপেই জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে হেমন্ত করকরের। কী ভয়ঙ্কর অসংবেদনশীল এবং বিপজ্জনক মন্তব্য এটা! ভারতের সাধারণ নির্বাচনে যিনি প্রার্থী হয়েছেন, তিনি অক্লেশে এমন এক জনকে দেশবিরোধী বলে আখ্যায়িত করছেন, যিনি দেশের সুরক্ষার জন্য প্রাণ বলিদান দিয়েছেন। সাধ্বী অক্লেশে বলছেন যে, তাঁর অভিশাপে হেমন্ত করকরের ‘সর্বনাশ’ হয়েছে। একে শুধু অংসবেদনশীলতা বলব, না কি চূড়ান্ত অশিক্ষা এবং ঔদ্ধত্যের যুগপত্ প্রকাশ বলব? ভেবে পাই না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: হেমন্ত করকরে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, সাধ্বী প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু কমিশনের
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন। গোটা দেশে তাঁর মন্তব্য যে এ ভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে, দলও যে তাঁর পাশে দাঁড়াবে না, এ ভাবে যে নিন্দার ঝড় উঠে যাবে, সাধ্বী তা আগে বুঝতে পারেননি। যখন বুঝতে পেরেছেন, তখন তির বেরিয়ে গিয়েছে হাত থেকে। ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা তিনি করেছেন বটে। কিন্তু সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখা মাত্রই নিজের মানসিকতার যে ছবিটা তিনি প্রকাশ করে ফেলেছেন, তার জন্য নিন্দাবাক্য অপ্রতুল হয়ে পড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy