Advertisement
E-Paper

নির্বাচনে সাজছে সোশ্যাল মিডিয়া, লক্ষ্য তরুণ ভোটার

বিগত পাঁচ বছরে বিশ্বের যে সব দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। লিখছেন শফিকুল ইসলামনির্বাচনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার নিয়ে বিতর্ক ইদানীংকালের বড় ইস্যু।

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০১:০৩

কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার গড়ার সুযোগ নিন, অমুক চিহ্নে নির্ভয়ে ভোট দিন, ভোট চাই ভোটারের, আশীর্বাদ চাই সকলের— বছরের পর বছর বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে এ সব স্লোগানই চলে আসছে। পোস্টার, লিফলেট, মাইকিংয়ের পাশাপাশি ছিল ভোটারদের উদ্দেশে খোলা চিঠি। তবে এখন সময় বদলেছে। পাল্টে যাচ্ছে নির্বাচনী প্রচারের কৌশল। ঐতিহ্যবাহী প্রচার পদ্ধতির পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা এখন সরব সামাজিক মাধ্যমেও।

যদিও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আনার আগে যাবতীয় রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনকে সার্টিফিকেট পেতে হবে। রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলি খতিয়ে দেখার জন্য গুগ্‌ল, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবকেও জানিয়েছে কমিশন। এই ধরনের বিজ্ঞাপন নিয়ে অভিযোগ সামলানোর জন্য এক জন অফিসারও নিয়োগ করা হয়েছে।

নির্বাচনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার নিয়ে বিতর্ক ইদানীংকালের বড় ইস্যু। প্রচারের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ফেসবুক, টুইটারে প্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে বহু রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এ বারের নির্বাচনে তাই কড়া হাতে সোশ্যাল মিডিয়া সামলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অরোরা। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য এবং জেলা স্তরে ‘মিডিয়া সার্টিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি’ রয়েছে। এর সঙ্গে প্রতিটি স্তরে এক জন করে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দিতে হলে এই কমিটির কাছ থেকে শংসাপত্র নিতে হবে। বাল্ক এসএমএস ও ভয়েস মেসেজকেও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে গণ্য করা হবে। ‘পেইড নিউজ’-এর দিকে কড়া নজর থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কমিশন সাফ জানিয়েছে, আর পাঁচটা ক্ষেত্রে যেমন নির্বাচনী আচরণবিধি চালু থাকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিক সেটাই বলবৎ থাকবে। প্রার্থী সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কত খরচ করছেন, বিশেষ দল তৈরি করে তার জন্য কত খরচ করছেন, তা-ও বিশদে জানাতে হবে।

এসব আছে, তবুও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের নিজেদের সমর্থনের পাল্লা ভারী করতে জাতীয় দলগুলি বিশেষ করে কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল, বামফ্রন্ট ও অন্য দল ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো মাধ্যমে বার্তা, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছে বা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রার্থীরা নিজেরাও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও ফ্যান পেজে প্রচার চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জনগণের আরও কাছে যেতে দলের সমর্থকেরা মোবাইলে বার্তা পাঠাচ্ছেন।

প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হোক বা না হোক, ১১ মার্চ সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার। তবে এর আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সরব রাজনৈতিক দলগুলি। দলীয় মনোনয়নপত্র পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যমে সমর্থন চাইবেন। অনেক প্রার্থী ফেসবুক লাইভে এসেও ভোটারদের কাছে নিজের পরিচিতি তুলে ধরবেন।

সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলি বিজ্ঞাপন সংস্থা, বিজ্ঞাপন নির্মাতা এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের নিয়োগ করছে। এসব সংস্থার মাধ্যমে তারা ফেসবুকে প্রচারের স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও এবং সামাজিক মাধ্যমের জন্য এক থেকে দেড় মিনিটের ভিডিও ক্লিপ তৈরি করছে। এ ছাড়াও রয়েছে চমৎকার গ্রাফিক্সের ডিজিটাল পোস্টার। এসব কাজে মডেল হিসেবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বলিউড, টলিউড তারকাদেরও যুক্ত করা হবে।

ফ্রিলান্সার হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের কাজ করবেন অনেক ব্যক্তি ও সংস্থা। এক বড় দলের নেতা জানালেন, এক মাস আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণার ভিডিও তৈরি শুরু হয়েছে। দুই থেকে তিন মিনিটের ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ ও থিম সংয়ের কাজ বেশি করা হচ্ছে। তিনি জানান, যে সব জায়গায় ইন্টারনেটের গতি স্লো সেখানে ওয়াইফাই-এ নিজস্ব চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন করতে প্রার্থীরা বেশি আগ্রহী। এ কারণে দুই মিনিট দৈর্ঘ্যের বিজ্ঞাপন বেশি তৈরি করা হয়েছে। তবে শহর এলাকায় ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাঁরা প্রচার চালাচ্ছেন ও আগামী দিনেও চালাবেন।

এ বার এক জন প্রার্থী কতটা আধুনিক ও প্রযুক্তিবান্ধব, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে সামাজিক মাধ্যমের প্রচারে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি, অনলাইন প্রচার এবং মোবাইলে বার্তা পাঠানোর কাজে। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত এই ব্যস্ততা থাকবে তাদের।

লোকসভা নির্বাচনে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারকে অত্যন্ত ইতিবাচক মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। অনলাইন প্রচারের মধ্যে দিয়ে খুব সহজেই তরুণদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। বিগত পাঁচ বছরে বিশ্বের যে সব দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এখানে দুই ধরনের প্রচার হচ্ছে বা হবে; একটি নিজেদের ভাল কাজের বর্ণনা, অন্যটি বিরোধী পক্ষকে নিয়ে অপপ্রচার। সেটা মাথায় রাখা দরকার। তবে মানুষ সচেতন, তাঁরা ঠিকটিই বেছে নেবেন।

তরুণদের আকৃষ্ট করতে প্রচারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল প্রচারে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তরুণদের ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনার প্রতিফলনও ঘটানো হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে অনেক দল এখনও বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তবে তারাও সাংগঠনিক ভাবে ডিজিটাল প্রচারণার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। মোবাইলে এসএমএস পাঠানো এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় বড় জায়গা দখল করতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

অন্য দিকে সোশ্যাল মিডিয়া মাথাব্যথার কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচনের কমিশনের। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে একে নিয়ে কী ভাবে কী করা হবে, তা ভেবে পাচ্ছে না কমিশন। জনজীবনে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। প্রচারের মাধ্যম হিসেবে তার ক্ষমতা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তাই সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার যাতে নির্বাচনে কোনও ভাবেই না ঘটে, তা নিয়েই চিন্তা বাড়ছে সকলের।

লেখক ভারতী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Social Media
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy