Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Editorial News

এত অকুতোভয় দুর্বৃত্তরা আজ!

রাষ্ট্র রয়েছে, আইন রয়েছে, প্রশাসন রয়েছে, পুলিশ রয়েছে, সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা রয়েছে। কিন্তু এই গোটা বন্দোবস্তটার প্রবর্তন যে উদ্দেশ্যে, সেই আইনের শাসন আদৌ রয়েছে কি? এই রকম একটা অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখিই দাঁড় করাচ্ছে মধ্যমগ্রামের ঘটনাটা।

ভয়ঙ্কর একটা খুনের সাক্ষী হল মধ্যমগ্রাম। প্রতীকী ছবি।

ভয়ঙ্কর একটা খুনের সাক্ষী হল মধ্যমগ্রাম। প্রতীকী ছবি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

গোটা ব্যবস্থার প্রতি কতটা অবজ্ঞা থাকলে এমনটা ঘটানো যায়! কতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠা গেলে আইনের শাসনকে এমন ভাবে নস্যাৎ করে ভয়াবহ অরাজকতার এই ছবিটা তৈরি করা যায়!

ভয়ঙ্কর একটা খুনের সাক্ষী হল মধ্যমগ্রাম। প্রকাশ্য দিবালোক, ব্যস্তসমস্ত শহর, স্বাভাবিক দিননামচা। সে সবের একেবারে মাঝ বরাবর বুক চিতিয়ে হানা দিল, এক দল দুষ্কৃতী। ঘিরে ধরল এক প্রোমোটারকে। পর পর গুলি করল প্রায় সবাই মিলে। তার পর মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ছুড়ে ত্রস্ত করল গোটা এলাকাকে। আগের চেয়েও বেপরোয়া ভঙ্গিতে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে গেল।

কতটা স্তম্ভিত হতে হবে বুঝে ওঠা যায় না এই রকম কোনও ঘটনাকে চোখের সামনে ঘটতে দেখলে। খুন-জখম, মারামারি বা গুলি-বোমা নতুন কিছু নয়। বছরভর অজস্র এমন ঘটনা ঘটতেই থাকে। অপরাধের শ্রেণি বিভাজনে মোটেই আর বিরল হিসেবে দেখা হয় না এই সমস্ত ঘটনাকে। কিন্তু মধ্যমগ্রামে যে ঘটনাটা ঘটল, যে ভঙ্গিতে ঘটল, যে রকম দৃশ্যপট তৈরি হল, তাতে বিস্ময়ের ঘোর কাটানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

রাষ্ট্র রয়েছে, আইন রয়েছে, প্রশাসন রয়েছে, পুলিশ রয়েছে, সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা রয়েছে। কিন্তু এই গোটা বন্দোবস্তটার প্রবর্তন যে উদ্দেশ্যে, সেই আইনের শাসন আদৌ রয়েছে কি? এই রকম একটা অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখিই দাঁড় করাচ্ছে মধ্যমগ্রামের ঘটনাটা। আইনের শাসন একেবারেই নেই, এমনটা বলা অতিশয়োক্তি হবে। আইনের শাসন না থাকলে রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়ে, সে কথা ঠিক। পুলিশ-প্রশাসন, কোর্ট-কাছারি, আইন-শৃঙ্খলার উপর আস্থা-ভরসা অধিকাংশেরই রয়েছে, সেই কারণেই ভারতীয় রাষ্ট্র স্বমহিমায় অস্তিত্বশীল। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বা আইনের শাসনের অস্তিত্বকে একটা অংশ যে স্বীকারই করে না, প্রশাসনের অস্তিত্বকে তারা যে গ্রাহ্যই করে না, সেও বেশ স্পষ্টতই প্রতীয়মান আজ। পুলিশ-প্রশাসনকে কতটা অবজ্ঞা করলে এমন অকুতোভয়ে খুন করা যায়, এমন সদর্পে নাগরিক সমাজকে ত্রস্ত করে তোলা যায়, এমন দাপটে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য চালানো যায়, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই দৃশ্যপট স্তম্ভিত করে, কিন্তু পরিস্থিতির অবনতিটাও একই সঙ্গে খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন
মধ্যমগ্রামে প্রোমোটার খুন, সেলুনে ঢুকে ৮টা গুলি

প্রশাসনকে দায় যে নিতেই হবে, সে কথা বলাই বাহুল্য। এ কথা ঠিক যে সরকার বা প্রশাসন কখনই আইন-শৃঙ্খলার অবনতি চায় না, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাক, এমনটাও চায় না। রাজ্যের বর্তমান প্রশাসকরাও আইন-শৃঙ্খলা বহাল বা অটুট রাখার প্রশ্নে আপসহীন মানসিকতার বলেই ধরে নেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্বৃত্তের মনে আতঙ্ক তৈরি করতে যে এই প্রশাসন অপারগ, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই।

প্রশাসন বা রাষ্ট্র আতঙ্ক সৃষ্টির যন্ত্র নয়। প্রশাসন বা রাষ্ট্র বরং নাগরিকের বিশ্বাসের সবচেয়ে বড় সৌধ। কিন্তু সব নাগরিক যে সুনাগরিক নন এবং সুনাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব-কর্তব্য যে সবচেয়ে বেশি, সে কথাটাও ভুললে চলে না। সেই দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে অটল থাকার স্বার্থে যদি দুর্বৃত্তের জন্য আতঙ্কের অপর নাম হয়ে ওঠা জরুরি হয়, তা হলে প্রশাসনকে তাও হতে হবে। সেই ভূমিকা পালনে এই প্রশাসন যে ব্যর্থ, তাতে কোনও সংশয় নেই। অসামাজিক তত্ত্ব এ রাজত্বে আতঙ্কিত নয়, অকুতোভয় বরং, সে কথা মাঝে মধ্যেই প্রমাণিত হচ্ছে। দুর্বৃত্তের মনে আতঙ্ক জাগাতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE