Advertisement
E-Paper

আবার বলি, চমৎকার

রাষ্ট্রীয় মহিমা প্রচারে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করিবার সর্বশেষ যে উদ্যোগ দেখা গেল, তাহা এই নরেন্দ্রভূমিতেও স্তম্ভিত করিয়া দেয়, নাগরিককে চোখ কচলাইয়া কবুল করিতে হয়: আবার বলি, চমৎকার।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০০:০০

ভারতের প্রাক্তন ও বর্তমান সেনাকর্তারা দিনে দুই বেলা বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ দিতেছেন, সংবাদমাধ্যমে বাণী শুনাইতেছেন, এমনকি সাংবাদিক ডাকিয়া সমালোচকদেক তিরস্কার করিতেছেন— সত্যই অভূতপূর্ব। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মহিমা প্রচারে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করিবার সর্বশেষ যে উদ্যোগ দেখা গেল, তাহা এই নরেন্দ্রভূমিতেও স্তম্ভিত করিয়া দেয়, নাগরিককে চোখ কচলাইয়া কবুল করিতে হয়: আবার বলি, চমৎকার। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক হইতে রাজ্যে রাজ্যে বার্তা আসিয়াছে, সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরমবীর চক্রে ভূষিত সৈনিকদের চিত্রমালা সংবলিত ফলক প্রতিষ্ঠিত হউক। দেড়শো বর্গফুট আয়তনের সেই কীর্তি-প্রাচীরের নকশাও দিল্লির কর্তারাই তৈয়ারি করিয়া পাঠাইয়াছেন, সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত সেনানীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে স্বনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং বাণীও আছে। দুষ্ট লোকে বলিতে পারে, নিজের ওই ছবিখানির প্রচারই তাঁহার প্রকৃত লক্ষ্য, বীর সৈনিকরা সেই প্রচারের প্রকরণমাত্র। দুষ্ট লোকে কী না বলে।

কিন্তু উদ্দেশ্য যাহাই হউক, প্রকল্পটি বিধেয় নহে। প্রথমত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী ভাবে চলিবে, সেখানে কাহার চিত্র বা মূর্তি থাকিবে, কোন গান গীত বা কোন স্তোত্র পঠিত হইবে, কাহার জন্মদিন বা প্রয়াণতিথি পালিত হইবে, তাহা স্থির করিবার অধিকার সেই প্রতিষ্ঠানের। রাষ্ট্র সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করিলে তাহা অন্যায় আধিপত্যবাদের দাপট হইয়া দাঁড়ায়। ভারতে এই দাপট বহুলপ্রচলিত। এই বিষয়ে কেন্দ্রে ও রাজ্যে ভেদ নাই। ভেদ নাই ইউপিএ এবং এনডিএ-র। গদিতে যে বসে, সে-ই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়ি ঘুরাইতে তৎপর হয়। তবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ছড়িতে সন্তুষ্ট নহে, মুগুর হাতে শিক্ষা-শাসনে নামিয়াছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বেমালুম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শৌর্য-প্রাচীর বসাইবার প্রস্তাব পাঠাইতেছে, রাজ্যপাল-আচার্য অম্লানবদনে শিক্ষামন্ত্রীকে ডাকিয়া সেই প্রস্তাব জানাইতেছেন। তাঁহার পদ এবং ভূমিকা, দুইই যে নিতান্ত আনুষ্ঠানিক, সে কথা হয়তো তাঁহার মনে থাকে না। কিংবা মনে রাখিবার উপায় তাঁহার নাই।

দ্বিতীয় অন্যায় আরও মৌলিক। যে সৈনিকরা দেশের প্রতিরক্ষায় শৌর্য ও সাহসের পরিচয় দিয়া সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হইয়াছেন, তাঁহারা অবশ্যই শ্রদ্ধার্হ। কিন্তু সেনাবাহিনী রণভূমিতে ও ছাউনিতে সুন্দর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামরিক শৌর্য-প্রাচীর কেবল দৃষ্টিকটু নহে, ক্ষতিকর। যথার্থ জ্ঞানচর্চার এক আবশ্যিক শর্ত যে কোনও তত্ত্ব বা বিশ্বাসকে নিঃসংকোচ সাহসে প্রশ্ন করিবার স্বাধীনতা। সামরিক বাহিনীর দর্শনে ও কর্মপন্থায় সেই স্বাধীনতার কোনও স্থান থাকিতে পারে না, আনুগত্যই তাহার স্বধর্ম। মোদীর ভারত সেই প্রশ্নহীন আনুগত্যকেই সমাজের স্বধর্ম করিয়া তুলিতে চাহিতেছে। ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যহ শৌর্য-প্রাচীরে প্রণাম জানাইয়া শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করিলে সমাজমানসে অতিজাতীয়তার ভিত আরও পোক্ত হইবে। তাহার দুর্লক্ষণ সুস্পষ্ট। লক্ষণীয়, কেন্দ্র-বিরোধিতায় অগ্রপথিক পশ্চিমবঙ্গ সরকারও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রস্তাবটিকে সরাসরি নাকচ করিবার সাহস সংগ্রহ করিতে পারে নাই, প্রধানমন্ত্রীর চিত্র সংযোজনে আপত্তিতেই আপন প্রতিবাদ সীমিত রাখিয়াছে। অনুমান করা যায়, পাছে জনারণ্যে জাতীয়তা-বিরোধী তকমা লাগিয়া যায়, সেই ভয়ে!

Military Armor-wall School Controversy Param Vir Chakra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy