Advertisement
E-Paper

পুনরাবিষ্কার

অবিভক্ত বাংলার লোকসংস্কৃতির এমন সম্ভার দুর্লভ। কিন্তু অনুদান নাই, দুই বৎসর বেতন পান নাই কর্মীরা।

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০০:১১

অতীত কি তবে কথা কহিতে ভুলিবে? রাজ্যের জাদুঘরগুলি ধুঁকিতেছে। তাহাদের অমূল্য নিধি নষ্ট হইতে বসিয়াছে। অর্থের অভাবে তাহাদের প্রাণশক্তি তলানিতে ঠেকিয়াছে। ইহার অন্যতম উদাহরণ গুরুসদয় সংগ্রহশালা। অবিভক্ত বাংলার লোকসংস্কৃতির এমন সম্ভার দুর্লভ। কিন্তু অনুদান নাই, দুই বৎসর বেতন পান নাই কর্মীরা। স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁহারা বহন করিয়া চলিয়াছেন এই সংগ্রহশালাটি। অথচ বাঙালির বিশিষ্ট নান্দনিক বোধের পরিচায়ক দুই শিল্পধারা, কাঁথা এবং পটচিত্রের অতুলীয় নিদর্শন রহিয়াছে এই সংগ্রহশালায়। সম্প্রতি নাগরিকের নিকট চাঁদা চাহিয়া এই জাদুঘরটির পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ দেখা গিয়াছে। এই উদ্যোগ স্বাগত। কিন্তু প্রশ্ন উঠিবে এমন উদ্যোগের স্বল্পতা লইয়া। ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য লইয়া দম্ভ করিবার সময়ে লোকের অভাব নাই। সম্প্রতি উৎসাহ কিছু বাড়িয়াছে, কারণ ‘জাতীয়তাবাদ’ আস্ফালন করিতে চাহিলে প্রাচীন শিল্প-বিজ্ঞান-কারিগরির দৃষ্টান্ত কিছু সুবিধা করিয়া দেয়। কিন্তু ঐতিহ্যের যথাযথ সংরক্ষণের কর্তব্যে ফাঁকি পড়িতেছে। বহুবিধ সংগ্রহশালায় ভারতের বিচিত্র, অপরূপ শিল্প ইতিহাস নষ্ট হইতেছে। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের জাদুঘরটি সাধারণের জন্য আর উন্মুক্ত নাই। সংবাদে প্রকাশ, পাল ও সেন যুগের ভাস্কর্য, লোকশিল্পের নানা দৃষ্টান্ত, এবং তৎসহ রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, যামিনী রায় প্রমুখ শিল্পীদের রচিত চিত্র লোকচক্ষের আড়ালে থাকিতেছে, অনেকগুলির অবস্থাই করুণ।

মৌলিক প্রশ্নটি গভীর। কেন জাদুঘরের প্রতি এমন ঔদাসীন্য বাঙালি তথা ভারতীয়দের? সরকারি অনুদান মিলিলে সংগ্রহশালা চলিবে, না মিলিলে উঠিয়া যাইবে, এমন মনোভাব কেন স্বাভাবিক মনে হইয়া থাকে? কৃপণতাকেই ইহার কারণ ভাবিলে চলিবে না। বাঙালি দুর্গাপূজা-সহ বিবিধ উৎসবে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। তাহার খণ্ডাংশ পাইলে জাদুঘরগুলি ঘুরিয়া দাঁড়াইতে পারিত। অতীতের অপরূপ শিল্পসৃষ্টি সংরক্ষিত হইত, যাহার একটি বড় অংশ হরপার্বতীর মূর্তি। সেই মূর্তিগুলি অগণিত মৃন্ময়ী প্রতিমার অনুপ্রেরণা, কিন্তু ভক্তদের নিকট উপেক্ষিত। পাশ্চাত্যে দেখা যায়, বিবিধ সংগ্রহশালা সংরক্ষণে অগ্রণী হইয়াছে নাগরিক সমাজ। কখনও ধনী পরিবার, কখনও বাণিজ্যিক সংস্থার পক্ষ হইতে সম্পূর্ণ সংগ্রহশালা, অথবা তাহার কোনও একটি অংশের জন্য অনুদান প্রদান করা হইয়া থাকে। শিল্পের সংরক্ষণের জন্য অনুদান সামাজিক গৌরব বলিয়া গণ্য হয়। সরকার সেখানে জাদুঘরের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক নহে। সকল জাদুঘরই যে বৃহৎ, এমনও নহে। স্থানীয় ইতিহাস সংরক্ষণে স্থানীয় নাগরিক সংগঠনগুলি চাঁদা তুলিতেছে, এমন নিদর্শন অনেক রহিয়াছে।

পাশ্চাত্যে সাধারণ নাগরিক সংরক্ষণের আহ্বানে সাড়া দিতেছে, কারণ মানুষের সহিত বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়িয়াছে বিবিধ জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। সেগুলি কেবল দুর্বোধ্য প্রদর্শনী হইয়া নাই, নানা উপায়ে অতীতের সহিত বর্তমানের সংযোগ সাধন করিয়া চলিয়াছে। জাদুঘর একটি শহরের সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম কেন্দ্র। তাহা একাধারে বন্ধুদের মিলিত হইবার, শিশুদের বেড়াইবার, শিল্প ও ইতিহাসের ছাত্রদের শিখিবার, এবং বিদ্বজ্জনের আদানপ্রদান ও চর্চার স্থল। এই জনসংযোগ অত্যাবশ্যক। জাদুঘর নাগরিকের সহিত দূরত্ব না কমাইলে সঙ্কট বাড়িবে।

Museum Gurusaday Museum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy