Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সময়ের দাম

আধুনিক ভারত গঠিত হইবার দিন হইতেই একাধিক সময়-অঞ্চল সংক্রান্ত বিতর্কটি উঠিয়াছে। কিছু কাল পূর্বে ইহা লইয়া কেন্দ্রের নিকট দাবি জানাইয়াছিল উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অবশেষে সাব্যস্ত হইল, ভারতে দুইটি টাইম জ়োন বা সময়-অঞ্চল চলিবে না। লোকসভায় কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানাইয়াছেন, সব দিক বিবেচনার পরে তাঁহার মন্ত্রকের সচিব এবং ত্রিপুরার মুখ্যসচিবকে লইয়া গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি তাহা বাতিল করিয়াছে। জানা গিয়াছে, কারণটি স্ট্র্যাটেজিক, অর্থাৎ কৌশলগত। কৌশলটি কী, তাহা অবশ্য সরকার ভাঙিয়া বলে নাই। সুতরাং কয়টি অনুমানের উপর ভরসা করিতে হয়। এক, টাইম জ়োন বদলাইবার ক্ষেত্রে মনুষ্যঘটিত ভ্রমের আশঙ্কা থাকে। রেলকর্মীরা সময়ের সমন্বয় ঘটাইতে না পারিলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। দুই, উত্তর-পূর্বের মানুষ ভারতের ‘মূল ভূখণ্ড’ হইতে বিচ্ছিন্নতা অনুভব করিতে পারেন। তাহা দেশের ‘অখণ্ডতা’র পরিপন্থী। তিন, ব্যাঙ্ক-সহ যাবতীয় কার্যালয়কে নিরন্তর পারস্পরিক যোগাযোগ রাখিতে হইবে। সেই ক্ষেত্রেও জটিলতা বাড়িবে, সমস্যাও ঘটিতে পারে। বৃহত্তর অর্থে, আপত্তি প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত।

প্রশ্ন উঠিতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি এমন জটিলতা নাই? কিংবা ব্রাজ়িলে? ওই দুই দেশের মূল ভূখণ্ডই চারটি করিয়া সময়-অঞ্চলে বিভক্ত। রাশিয়ার দৃষ্টান্তও দেওয়া চলে। আবার অন্য দিকে, সমগ্র চিনে বেজিংয়ের সময়কে মান্য ধরিয়া একটি সময়-অঞ্চলের বন্দোবস্ত রহিয়াছে। ভারত যদি ‘চিনের পথই আমাদের পথ’ বলিয়া সন্তুষ্ট থাকে, থাকিতে পারে। তবে সেই ক্ষেত্রে ‘ডে লাইট সেভিং’-এর ন্যায় কার্যকর পন্থার কথা ভাবা দরকার। উনিশশো সত্তরের দশকের বিশ্বব্যাপী শক্তি সঙ্কটের পরে বহু দেশ গ্রীষ্মের দীর্ঘায়িত দিনগুলিতে ঘড়ির কাঁটা আগাইয়া দেয়। উহাতে অধিক দিবালোক কাজে লাগানো সম্ভব হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে ব্রিটিশ ভারতও তিন বৎসর এই পথে হাঁটিয়াছিল। কেবল কার্যকরতা নহে, ইহার পিছনে বিজ্ঞানের নিজস্ব যুক্তিও আছে। সমগ্র জীবজগৎ পৃথিবীর আবর্তনের সহিত তাল মিলাইয়া আপন শারীরবৃত্তীয় ছন্দটি বজায় রাখে। প্রসঙ্গত, ২০১৭-য় এই আবিষ্কারের স্বীকৃতিতেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার আসিয়াছিল।

বস্তুত, আধুনিক ভারত গঠিত হইবার দিন হইতেই একাধিক সময়-অঞ্চল সংক্রান্ত বিতর্কটি উঠিয়াছে। কিছু কাল পূর্বে ইহা লইয়া কেন্দ্রের নিকট দাবি জানাইয়াছিল উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ওই অঞ্চলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় অনেকখানি পৃথক। গত বৎসর অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু জানাইয়াছিলেন, তাঁহাদের অঞ্চলে বহু পূর্বে সূর্যাস্ত হওয়া এবং দেরিতে অফিস খুলিবার কারণে প্রভূত কাজের সময় অপচয় হইয়া থাকে। সমস্যা বরাবরই ছিল, কিন্তু বাস্তবানুগ সমাধান হয় নাই। দুই মাস পূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা কর্তৃক গঠিত প্রস্তাবে বলা হইয়াছিল, বর্তমান সময়টি অক্ষুণ্ণ রাখিয়া ইহা হইতে এক ঘণ্টা আগাইয়া অপর একটি টাইম জ়োন গঠন করা চলিতে পারে। দুইয়ের বিভেদরেখা হইবে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের সীমানা। ইহার সহিত যুক্ত হইবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। তবে শেষাবধি অগ্রাধিকার পাইল ‘কৌশলগত কারণ’। সময়ের দাম বোধ করি সেই যুক্তি অপেক্ষা বেশি নহে। সুকুমার রায় ঠিকই বুঝিয়াছিলেন, সময় চুরিচামারি করিয়াই জমাইতে হয়।

(এর আগে এই সম্পাদকীয়র সঙ্গে ব্যবহৃত ভারতের মানচিত্রে কিছু ভ্রান্তি থেকে গিয়েছিল। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Time Zone India IST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE