Advertisement
E-Paper

লাভ লোকসান

সহজ সত্যটি হইল, এই ভাবে বিলগ্নিকরণ হয় না। বিশেষত, এয়ার ইন্ডিয়ার মতো চরিত্রগত ভাবে গোলমেলে সংস্থার ক্ষেত্রে।

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০০:০৯

সরকার দোকান খুলিয়া বসিয়া থাকিল, কিন্তু ক্রেতার দেখা নাই। শেষ অবধি জানাইতে হইল, ভূভারতে একটি সংস্থারও এয়ার ইন্ডিয়ায় আগ্রহ নাই। সরকারি বিমান পরিষেবার সংস্থার ৭৬% সরকার বেচিয়া দিতে চাহিলেও কেহ কিনিতে চাহিল না। অতএব, যথাপূর্বম্। করদাতার টাকায় এয়ার ইন্ডিয়া লোকসানে চলিবে। প্রশ্ন হইল, যে সংস্থাটির বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে সাড়া পড়িয়া গিয়াছিল, সেই সংস্থাটির বিলগ্নিকরণ সম্ভব হইল না কেন? তাহার একটি উত্তর নিহিত আছে ৭৬ শতাংশে। অথবা, আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, বিক্রয়ের ৭৬ শতাংশ বাদ দিয়া যে ২৪ শতাংশ পড়িয়া থাকে, তাহাতে। এই পরিমাণ অংশীদারি সরকারের হাতেই থাকিবে। কেন, একাধিক লগ্নিকারী তাহা জানিতে চাহিয়াছিলেন। কেন্দ্রের উত্তর হইল, সরকার বহু বিবেচনা করিয়া স্থির করিয়াছে, এই অংশটুকু হাতে রাখিতে হইবে, অতএব তাহা সরকারের হাতে থাকিবে। এ হেন উত্তরের পর আর প্রশ্ন থাকে না। লগ্নিকারীরাও বুঝিয়া লইয়াছেন, দেনার দায়ে জর্জরিত এই সংস্থাটিকে কিনিলেও সরকারের হস্তক্ষেপ হইতে মুক্তি নাই। কে আর সাধ করিয়া সেই ঝঞ্ধাটে পড়িতে চাহে?

অন্য কারণ সংস্থার কর্মিসংখ্যা। পাকা, চুক্তিভিত্তিক, ঠিকা ইত্যাদি মিলাইয়া এয়ার ইন্ডিয়ায় চাকুরি করেন মোট ২৬,৯৭৮ জন। সংস্থার বিমানের সংখ্যা ১১৫। অর্থাৎ, গড়ে বিমান-পিছু কর্মীর সংখ্যা ২৩৫ জন। ইন্ডিগোতে বিমানপিছু কর্মীর সংখ্যা ১১১, জেটে ১৪২, স্পাইসজেটে ১৪০। বিমানের অনুপাতে কর্মিসংখ্যা যে কোনও বিমানসংস্থার কুশলতার একটি জরুরি মাপকাঠি। অর্থাৎ, এয়ার ইন্ডিয়া বহু পিছাইয়া আছে। তাহারও অপেক্ষা গুরুতর প্রশ্ন, অধিগ্রহণের পর কর্মী ছাঁটাই করিতে হইলে তাহার দায়িত্ব লইতে হইবে নূতন বিনিয়োগকারীকেই। এক দিকে তাহার জন্য বিপুল অর্থ প্রয়োজন, অন্য দিকে সরকারের ওজর এবং কর্মী-অসন্তোষও সামলাইতে হইবে। আগামী দুই তিন বৎসরে যে সংস্থা কয়েক শত কোটি টাকা লোকসান করিবে, তাহার জন্য এতখানি ঝামেলা সহ্য করা ব্যবসায়িক যুক্তিতে অসম্ভব। কেন কেহ এয়ার ইন্ডিয়ায় লগ্নি করিতে আগ্রহ প্রকাশ করে নাই, নরেন্দ্র মোদীরা বুঝিতেছেন কি?

সহজ সত্যটি হইল, এই ভাবে বিলগ্নিকরণ হয় না। বিশেষত, এয়ার ইন্ডিয়ার মতো চরিত্রগত ভাবে গোলমেলে সংস্থার ক্ষেত্রে। প্রথম কথা, এই বিমান সংস্থাটি ‘জাতির গর্ব’— এই জাতীয় ভোটমুখী আবেগবিলাস বিসর্জন দেওয়া বিধেয়। এয়ার ইন্ডিয়া একটি ক্ষতিতে-চলা সংস্থা এবং সেই ক্ষতির দায় বহন করিবার নৈতিক অধিকার সরকারের নাই, তাহা স্বীকার করিতে হইবে। ২৪% কেন, এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানার কোনও অংশই সরকারের হাতে রাখিবার সুযুক্তি নাই। সম্পূর্ণ বিলগ্নিকরণই বিধেয় ছিল। এবং, তাহার পূর্বে কর্মী-সংখ্যাকে গ্রহণযোগ্য স্তরে নামাইয়া আনাও প্রয়োজন ছিল। সহজ কথা, যাঁহারা লগ্নি করিতে আসিবেন, সরকারের রাজনীতির দায় তাঁহারা বহিবেন না। তাঁহারা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে লাভ-ক্ষতি বিচার করিবেন। এয়ার ইন্ডিয়া সেই বিচারের ধোপে টেকে নাই। পরের বার এই ত্রুটি শুধরাইয়া বিলগ্নিকরণের উদ্যোগ করিলে মুখ খানিক কম পুড়িতে পারে।

invest Air India Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy