Advertisement
০৫ মে ২০২৪
National news

মনের কথা অনেক শোনালেন, এ বার একটু দেশের কথা শুনুন

সরকারের প্রতিটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তই সুচিন্তিত এবং দীর্ঘমেয়াদী লাভেই তাঁর সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ— এমন এক তত্ত্বের অবতারণার চেষ্টা করলেন। সমালোচকদের ‘নৈরাশ্যবাদী’ আখ্যা দিলেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫৫
Share: Save:

খুব জোরদার একটা জবাব দেওয়ার চেষ্টা হল যেন। সব দিক থেকে যখন ধেয়ে আসছে সমালোচনা, প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, একের পর এক আচম্বিত ধাক্কায় জাতীয় অর্থনীতি যখন অতিষ্ঠ, তখন আত্মপ্রশস্তির ঢক্কানিনাদ আগের চেয়েও বাড়িয়ে তোলা ছাড়া অন্য কোনও পথ খুঁজে পেলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সরকারের প্রতিটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তই সুচিন্তিত এবং দীর্ঘমেয়াদী লাভেই তাঁর সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ— এমন এক তত্ত্বের অবতারণার চেষ্টা করলেন। সমালোচকদের ‘নৈরাশ্যবাদী’ আখ্যা দিলেন। চটজলদি চমকে বিশ্বাসী নন তিনি, জাতীয় স্বার্থের স্থায়ী সংরক্ষণই একমাত্র লক্ষ্য, এমন এক ধারণা চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

নাগরিকের কাছে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ শ্রুতিসুখকর হবে সংশয় নেই। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দেহ বিস্তর।

আরও পড়ুন: দেশের অর্থনীতির তথ্য তুলে আত্মরক্ষায় মোদী

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রথম চমক যোজনা কমিশন তুলে দেওয়া। তার স্থান নিল নীতি আয়োগ। কী লাভ হল, এখনও স্পষ্ট হয়নি। এর পর আচমকা এক দিন বাতিল হয়ে গেল ৫০০ টাকা আর ১০০০ টাকার সব নোট। কয়েক মাস ধরে নাভিশ্বাস উঠে গেল গোটা অর্থনীতির। কালো টাকা কতটুকু উদ্ধার হল, জাল নোট কতটা ধরা পড়ল, এখনও তার সুস্পষ্ট হিসেব মিলল না। কিন্তু রাজকোষ ঠিক কত হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, সে হিসেব খুব পরিষ্কার করেই জানা গেল। নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলি জুটি থামলেন না সেখানেও। অত্যন্ত দ্রুততায় এবং অতি উৎসাহে গোটা দেশে প্রবর্তন করলেন অভিন্ন পরোক্ষ কর ব্যবস্থা জিএসটি। রাজকোষের উন্নয়ন তাতে কতটা হল, সে হিসেব এখনও বিশদে জানায়নি সরকার। তবে রোজকার বাজার যে আরও অগ্নিমূল্য হয়েছে এই নতুন কর ব্যবস্থার সুবাদে, সাধারণ নাগরিক তা প্রত্যেক দিন নয়, প্রতি মুহূর্তে টের পাচ্ছেন। এর পরেও সমালোচনা হবে না? এর পরেও সরকারকে আক্রমণের মুখে পড়তে হবে না?

আক্রমণ কিন্তু এখন আর শুধু বিরোধী শিবির থেকে নয়। ঘরের ভিতরেও এ বার আক্রমণের মুখে নরেন্দ্র মোদী। অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানার অর্থমন্ত্রী তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্‌হা কঠোর সমালোচনা করেছেন মোদী-জেটলির আর্থিক নীতির। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে, শিল্পোৎপাদনের পরিমাণ নেমে গিয়েছে, কৃষি মার খাচ্ছে, রফতানি কমে যাচ্ছে, কর্মসংস্থানহীনতা বাড়ছে— এ সব কথা বিরোধীরা বলেননি, যশবন্ত সিন্‌হা বলেছেন। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার নামতে নামতে ৫.৭ শতাংশে এসে ঠেকেছে— এ কথা বিরোধীরা বলেননি, অর্থ মন্ত্রকই বলছে। জ্বালানি তেলের দাম কিছুতেই কমতে চায় না— এ কথা মাইক ফুঁকে বলতে হচ্ছে না, জনসাধারণই উপলব্ধি করছেন। বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক সরকারি প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে এবং সরকারি ভর্তুকি দ্রুত অবলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে— এ সত্য সবার সামনেই উজ্জ্বল। কিন্তু সরকারি কোষাগারের উপরে ন্যস্ত থাকা বিভিন্ন অঙ্গীকার এত দ্রুত ঝেড়ে ফেলার পথে হেঁটেও মূল্যবৃদ্ধিতে বিন্দুমাত্র রাশ টানতে পারেনি সরকার। প্রধানমন্ত্রী এর পরেও নিজের আর্থিক নীতি পুনর্বিবেচনা করবেন না?

কোন পদক্ষেপ কেন করেছে সরকার, তার ব্যাখ্যা নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার দিয়েছেন। ‘মন কি বাত’-এ খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তিনি ঠিক কী চান। কিন্তু অনেক দিন তো হল। প্রধানমন্ত্রীর মনের কথা তো দেশ অনেক বারই শুনল। তবু তো ‘অচ্ছে দিন’-এর উপলব্ধি এল না। এ বার দেশের মনের কথাটা শোনা দরকার প্রধানমন্ত্রীর। বিপুল জনাদেশে সওয়ার হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রত্যাশার চাপও স্বভাবতই বিপুল। পরবর্তী জনাদেশের আগে তার কিছুমাত্রও যদি পূরণ না হয়, বিপদ নরেন্দ্র মোদীরই হবে। সুদিনের উপলব্ধি যদি সত্যিই আনতে চান, তা হলে দেশবাসীর মনটাকে বোঝার চেষ্টা করুন এ বার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE