Advertisement
E-Paper

শিয়রে শমন দেখে ঈশ্বরের নাম জপা শুরু

অধিবেশন শুরুর আগে দুটো সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল। একটার আহ্বায়ক সরকার, অন্যটার আহ্বায়ক স্পিকার। বেশ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দল কিন্তু সরকারের ডাকা সর্বদল বৈঠক বয়কট করেছে। অর্থাত্ তাদের তরফে সঙ্ঘাতের বার্তা স্পষ্ট।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০৫:০০
বাদল অধিবেশন শুরু হল সংসদে। ছবি: সংগৃহীত।

বাদল অধিবেশন শুরু হল সংসদে। ছবি: সংগৃহীত।

আক্ষরিক অর্থেই ‘বাদল অধিবেশন’ শুরু হল সংসদে। ভারতীয় গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থানের আকাশে এই অধিবেশন জুড়ে মেঘের ঘনঘটা যে সাংঘাতিক ভাবেই দেখা যাবে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। বিরোধীদের গুরুত্ব যদি আর একটু আগে বুঝতেন নরেন্দ্র মোদীরা, তা হলে বাদল অধিবেশন এতটা মেঘাচ্ছন্ন নাও হতে পারত।

অধিবেশন শুরুর আগে দুটো সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল। একটার আহ্বায়ক সরকার, অন্যটার আহ্বায়ক স্পিকার। বেশ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দল কিন্তু সরকারের ডাকা সর্বদল বৈঠক বয়কট করেছে। অর্থাত্ তাদের তরফে সঙ্ঘাতের বার্তা স্পষ্ট। যে সব বিরোধী দল বৈঠক বয়কট করেনি, তারা আবার বৈঠকে সরকারকে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। অধিবেশনে সে সব প্রশ্ন নিয়ে যাতে আলোচনা হয়, সরকারকে তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে।

সংসদের অধিবেশনে সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের সঙ্ঘাত নতুন বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু নানা বিষয়ে একবগ্গা অবস্থানের জেরে দেশের বর্তমান শাসক শিবিরের সঙ্গে বিরোধীদের সম্পর্কে গভীর অবনতি এবং গত কয়েক সপ্তাহে দেশের সামনে পর পর ঘনিয়ে ওঠা গুচ্ছ সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে যখন শুরু হচ্ছে সংসদের অধিবেশন, তখন পরিস্থিতিটা যে অবশ্যই অনেক বেশি কঠিন, তা সরকার পক্ষও অভ্রান্ত বুঝতে পারছে।

গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন সংক্রান্ত বিতর্ক তীব্র হয়েছে। অমরনাথ ফেরত পুণ্যার্থীদের উপর জঙ্গি হামলা বড় ইস্যুর জন্ম দিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে সরকার যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে। ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তে ভারতীয় ও চিনা সেনার মুখোমুখি অবস্থান চলাকালীন ভুটান হঠাত্ সুর বদলে দু’পক্ষকেই সেনা প্রত্যাহার করতে বলায় নয়াদিল্লি যথেষ্ট বেকায়দায় পড়েছে। মোদী সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার জেরে চিন ছাড়াও নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলে বিরোধী শিবিরের বড় অংশ দাবি করছে। দার্জিলিং এবং বসিরহাটের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলার শাসকদলকে সংসদে চেপে ধরার সুযোগ ছিল কেন্দ্রের শাসক গোষ্ঠীর সামনে। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেষ মুহূর্তে সে হাওয়া ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। দার্জিলিং এবং বসিরহাট বিজেপির ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ এবং কেন্দ্রের ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ ও ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতা’র ফসল বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন। স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে, বাদল অধিবেশনে অস্ত্র হাতে নিয়ে নয়, গোটা অস্ত্রাগার হাতে নিয়ে সরকার পক্ষের মুখোমুখি হচ্ছে বিরোধী পক্ষ।

পরিস্থিতি অনুকূলে আনার চেষ্টাও সরকার করল। কিন্তু একেবারে অন্তিম লগ্নে। অধিবেশন শুরুর আগে যে রুটিন সর্বদল বৈঠকের আয়োজন হয়ে থাকে, সেই দুই রুটিন বৈঠককেই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা হল। তার কয়েক দিন আগে সব দলকে ডেকে কেন্দ্রের তরফে বোঝানোর চেষ্টা হল, ভারত-চিন সীমান্তে পরিস্থিতি ঠিক কী রকম। কিন্তু কোনও বৈঠকেই বিরোধীরা এমন কোনও অবস্থান নিল না, যা সরকারকে স্বস্তি দিতে পারে। সংসদের অন্দরে ঝড় তোলার তোড়জোড় যে বিরোধী শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছে, বিভিন্ন বৈঠকে সরকার পক্ষকে সে ইঙ্গিতই দেওয়া হল বরং।

এক দিনে কিন্তু এত সমস্যা মাথাচাড়া দেয়নি। একে একে সামনে এসেছে সঙ্কটগুলো। দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়ে তখনই যদি বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হত, তখন থেকেই যদি ধাপে ধাপে জট ছাড়ানোর চেষ্টা হত, এত সমস্যা সঙ্গী করে বাদল অধিবেশনে পা রাখতে হত না সম্ভবত। কিন্তু শিয়রে শমন হাজির হয়ে যাওয়ার পরে ঈশ্বরের নাম জপা শুরু করল কেন্দ্র। শেষ মুহূর্তে এসে বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা মনে পড়ল। মেঘের ঘনঘটা সামলাতে পারবেন তো নরেন্দ্র মোদী? জবাব দেবে বাদল অধিবেশন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Narendra Modi Anjan Bandyopadhyay all-party meet Monsoon session Parliament Newsletter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy