Advertisement
E-Paper

স্বীকৃতি

পুরুষ খেলোয়াড়রা যেখানে বছরে সাত কোটি টাকা অবধি রিটেনার ফি পান, সেখানে মহিলাদের সর্বোচ্চ প্রাপ্তির পরিমাণ পঞ্চাশ লক্ষ টাকা।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৫:২৯
পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি-তে সমতাবিধানের ক্ষেত্রে ভারত অন্যতম অগ্রদূত।

পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি-তে সমতাবিধানের ক্ষেত্রে ভারত অন্যতম অগ্রদূত। ফাইল চিত্র।

বিশ্বে প্রথম না হলেও পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি-তে সমতাবিধানের ক্ষেত্রে ভারত অন্যতম অগ্রদূত হিসাবে ক্রিকেট-ইতিহাসে ঠাঁই পাবে। কয়েক মাস আগে নিউ জ়িল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াতে সম্পূর্ণ সমতা প্রতিষ্ঠিত না হলেও মহিলা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বেড়েছে বহুলাংশে। শম্বুকগতিতে হলেও অন্য খেলার ক্ষেত্রেও ক্রমেই সমতাবিধানের পথে হাঁটছে ক্রীড়াবিশ্ব। মজুরি, বেতন বা সাম্মানিক, যে ভাষাতেই বলা হোক না কেন, অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে গোটা দুনিয়াতেই লিঙ্গ-অসাম্য অতি চড়া। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দুনিয়ায় গড়ে পুরুষরা এক ডলার উপার্জন করলে মহিলারা করেন ৭৭ সেন্ট, অর্থাৎ পুরুষদের চেয়ে প্রায় এক-চতুর্থাংশ কম বেতনে কাজ করেন মহিলারা। এই সর্বব্যাপী অসাম্যের মধ্যে অন্তত খেলার মাঠে যদি সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তার গুরুত্ব বাড়িয়ে বলা অসম্ভব। তবে, একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন— ভারতে বিসিসিআই-এর এই বহুপ্রশংসিত সিদ্ধান্তটিও কিন্তু প্রকৃতার্থে অসম্পূর্ণ। মহিলা খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি পুরুষদের সমান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রিটেনার ফি এখনও বিপুল পরিমাণে অসমান। পুরুষ খেলোয়াড়রা যেখানে বছরে সাত কোটি টাকা অবধি রিটেনার ফি পান, সেখানে মহিলাদের সর্বোচ্চ প্রাপ্তির পরিমাণ পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। কিন্তু আশা করা যাক, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড লিঙ্গ-সমতা পথে যে যাত্রার সূচনা করল, তা চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছবে।

এই লিঙ্গ-সমতার সিদ্ধান্তটি কি কেবলই সচেতনতা ও সদিচ্ছার ফল? লিঙ্গ-অসাম্যের মধ্যে যে প্রবল অন্যায় নিহিত আছে, তাকে দূর করার তাগিদ? সম্ভবত তা নয়। এর পিছনে বাজারের একটা ভূমিকা থাকা স্বাভাবিক। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, বিসিসিআই আগামী বছর থেকে মহিলা ক্রিকেটের আইপিএল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইপিএল-এর মতো প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণতই বাজার-নির্ভর। দর্শকদের মধ্যে যদি এই খেলার চাহিদা থাকে, কেবলমাত্র তখনই বিজ্ঞাপনদাতারা এই প্রতিযোগিতায় আগ্রহী হবেন। এবং, বিজ্ঞাপনের অর্থই প্রতিযোগিতার চালিকাশক্তি। অতএব, অনুমান করা চলে যে, হরমনপ্রীত কউর, স্মৃতি মান্ধানাদের খেলা দর্শকমহলে ততখানি চাঞ্চল্য এবং আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছে, যা বাজারকেও তাঁদের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। সম্পূর্ণ পুরুষশাসিত ক্রীড়াজগতে এই সাফল্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সাফল্যের আরও একটি মাপকাঠি হতে পারে বলিউড। যে বাজারের মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিক তৈরি হয়, ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের উপর সিনেমা নির্মিত হয়, সেই বাজারেই মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীদের বায়োপিক তৈরি হচ্ছে— অর্থাৎ, বাজারের প্রতিটি সূচক বলছে যে, মহিলা ক্রিকেটাররা নিজেদের জোরে নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছেন। বিসিসিআই-এর সিদ্ধান্ত বহুলাংশে সেই বাজারের স্বীকৃতির প্রতিধ্বনি। প্রশ্ন তো শুধু টাকাপয়সার নয়, প্রশ্ন সম্মানের। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটাররা সাম্প্রতিক কালে বিশ্বমঞ্চে যে ভাবে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন, তার সমতুল কৃতিত্ব পুরুষ ক্রিকেট দলের নেই। তাঁদের সেই কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। তা হলেই ভবিষ্যতে আরও অনেক মেয়ে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখার মতো জোর পাবেন। সচিন বা বিরাট নয়, তাঁরা মিতালি বা ঝুলন হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই খেলার মাঠে পা ফেলতে পারবেন।

Indian Women Cricket team Cricket BCCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy