Advertisement
E-Paper

সুস্বাস্থ্যের দাম

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের একটি রায়ে স্পষ্ট করে দেয় যে, জীবনদায়ী ওষুধ সর্বসাধারণের কাছে সুলভ করতে দায়বদ্ধ কেন্দ্রীয় সরকার।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ০৫:৪০

সম্প্রতি চুরাশিটি অত্যাবশ্যক ওষুধের দাম বেঁধে দিল ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইস অথরিটি,’ যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবিটিসের ওষুধও রয়েছে। কোনও ওষুধ মহার্ঘ হয়ে উঠলে ডাক্তারের মত না নিয়েই তা বন্ধ করার প্রবণতা দেখা যায়। ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের কাছে এটাই বাস্তব। কেন্দ্রীয় সরকার ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করেছে ২০১৩ সালেই, কিন্তু বড় ওষুধ সংস্থাগুলি বরাবরই দাম বেঁধে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। তাদের যুক্তি, নতুন ওষুধ তৈরির কাজে অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য গবেষণার প্রয়োজন— নতুন ওষুধের স্বত্ব পাওয়ার পর ওষুধের দাম থেকেই সেই খরচ ওঠা সম্ভব। তাই স্বত্বাধীন ওষুধের দাম বেশি রাখাই ন্যায্য। সেই সঙ্গে, ওষুধের উপাদান, তার প্যাকেজিংয়ের খরচ বাড়ার জন্য ওষুধের দাম বেড়ে যায়। অত্যাবশ্যক ওষুধের দাম বাঁধার সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে ওষুধ সংস্থাগুলি বার বার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। শেষ অবধি সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের একটি রায়ে স্পষ্ট করে দেয় যে, জীবনদায়ী ওষুধ সর্বসাধারণের কাছে সুলভ করতে দায়বদ্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি যে এ বিষয়ে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে না, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে শীর্ষ আদালত। জনস্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন্দ্রের ওষুধের দাম-সংক্রান্ত নির্দেশে স্থগিতাদেশ না দেওয়ার পরামর্শ দেয় হাই কোর্টগুলিকে।

তাতে কেন্দ্রীয় সংস্থার ওষুধের দাম বেঁধে দেওয়ার প্রক্রিয়া আগের তুলনায় নির্বিঘ্ন হলেও, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজটি নিয়ে দোলাচল অব্যাহত। গত এপ্রিলেই অত্যাবশ্যক ওষুধের সর্বভারতীয় তালিকার প্রায় আটশোটি ওষুধের দাম দশ শতাংশেরও বেশি বাড়ানোর অনুমোদন দেয় সরকার, বিধিমতে যা সর্বোচ্চ সম্ভাব্য বৃদ্ধি। কোভিড অতিমারিতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের মৌলিক উপাদানগুলির দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে এই অনুমোদন দিতে হয়েছে। অতঃপর এখন ফের ওষুধের সর্বোচ্চ দামে সীমা অর্পণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বাজার ও জনস্বার্থের এই দ্বিমুখী টান অপ্রত্যাশিত নয়। এ-ও সত্য যে, মোটের উপর ভারতে ওষুধের দাম এখনও তুলনায় কম।

কিন্তু তাতেও ভারতের অধিকাংশ মানুষের কাছে চিকিৎসার খরচ সাধ্যাতীত। ভারতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অর্ধেকেরও বেশি তাঁদের সমস্যার কথা জানেন না, ডায়াবিটিসের রোগীদের চল্লিশ শতাংশ জানেন না রোগটি হওয়ার কথা। জেনেও চিকিৎসা করাতে পারেন না, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। চিকিৎসার খরচই চিকিৎসাকে অধরা রাখছে। চিকিৎসাকে সুলভ করতে হলে কিছু জীবনদায়ী ওষুধের দাম বাঁধা যথেষ্ট নয়। চিকিৎসকরা ব্র্যান্ডের পরিবর্তে জেনেরিক ওষুধ লিখলে চিকিৎসার খরচ কমে। কিন্তু, জেনেরিক ওষুধের মান পরীক্ষার ব্যবস্থা ভারতে অত্যন্ত দুর্বল। তাই সেগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসক ও রোগী, উভয়ই সন্দিহান। সেই সঙ্গে অকারণে বেশি দামি ‘কম্বিনেশন’ ওষুধ লেখার প্রবণতাও রয়ে গিয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে। এ সমস্যাগুলি অজানা নয়, প্রয়োজন সুষ্ঠু সমাধানের পরিকল্পনা। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন, ওষুধ নির্মাতাদের সংগঠন এবং সরকার, এই তিন পক্ষ জনস্বার্থে পরস্পর সহযোগিতা করবে কি না, প্রশ্ন সেখানেই।

medicines Central Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy