Advertisement
০২ মে ২০২৪
Old Age

এখনও আছে সময়

ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বকে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া দেখিয়ে দিয়েছে, কী ভাবে ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড-এর সুফল অর্জন করা যায়। ভারতের পক্ষেও তা সম্ভবপর নয় কি?

An image of old

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:২৬
Share: Save:

বয়স বেড়েছে ঢের নরনারীদের। গোটা দুনিয়াতেই। ভারত আপাতত দুনিয়ার অন্যতম ‘তরুণ দেশ’, কিন্তু ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশিত গড় আয়ু এবং ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের দৌলতে এ দেশেও জনসংখ্যায় বয়স্কদের অনুপাত বাড়বে কয়েক দশকের মধ্যেই। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড-এর ইন্ডিয়া এজিং রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর জুলাইয়ে দেশে যেখানে ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা ছিল ১৪.৯ কোটি, সেটাই দ্বিগুণ হতে চলেছে ২০৫০ সালের মধ্যে। বয়সের কারণেই প্রবীণ নাগরিকরা সচরাচর নেট উপভোক্তা, নেট উৎপাদক নন। ফলে, যদি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর উৎপাদনশীলতা অপরিবর্তিত থাকে, তবে জনসংখ্যায় বয়স্কদের অনুপাত বাড়লে দেশের সার্বিক উৎপাদনশীলতা কমে। তবে, এ বিষয়ে ভারতের এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই, হাতে এখনও অনেক সময় আছে।

প্রয়োজন সেই সময়ের সদ্ব্যবহার। এ কথা বহু আলোচিত যে, ভারতের ‘ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড’ আছে। দুনিয়ার তরুণতম দেশগুলির অন্যতম এখন ভারত। বিশ্বের কুড়ি শতাংশ কর্মক্ষম মানুষ আগামী পঁচিশ বছরে থাকবেন ভারতে। আর দেশের বাষট্টি শতাংশ মানুষ থাকবেন কর্মক্ষম বয়স-বন্ধনীতে। ফলে, এই ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড ঘরে তোলার সুযোগ আগামী দুই বা তিন দশকেই পাওয়া যাবে। ‘ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড’ নির্ভর করে মূলত চারটি বিষয়ের উপরে— শিক্ষা ও কর্মদক্ষতা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং সুশাসন। ভারতের ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড-এর সুফল অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে, যদি সে কর্মক্ষম জনসংখ্যার জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে। পাশাপাশি, মানুষের জীবনসীমার বৃদ্ধির মাধ্যমেও দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির পথ সুগম করা সম্ভব উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মদক্ষতা সৃষ্টি এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ ও প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিরোধ করে। একটি সুস্থ এবং দক্ষ কর্মীর দল শুধু উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তা সরকারের আর্থিক চাপ কমায় এবং দেশের মূলধন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, ভারতের জনসংখ্যাই এ দেশকে বিশ্বের অন্যতম শক্তি করে তুলতে পারে। শুধু ক্রেতা হিসাবে নয়, শ্রমশক্তি হিসাবেও।

ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বকে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া দেখিয়ে দিয়েছে, কী ভাবে ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ড-এর সুফল অর্জন করা যায়। ভারতের পক্ষেও তা সম্ভবপর নয় কি? মুশকিল হল, আমাদের দেশে কথায় ও কাজে অনেক ফারাক। প্রধানমন্ত্রী মুখে ডেমোগ্র্যাফিক ডিভিডেন্ডের লাভ ঘরে তোলার কথা বলেন বটে, কিন্তু তার জন্য কাজের কাজ কিছু হয় না। শিক্ষায় সরকারের বাজেট বাড়ে না, স্বাস্থ্যেও নয়। তরুণ প্রজন্মের কারিগরি মানোন্নয়নের নামে মাঝে-মধ্যে কিছু প্রহসন হয়, বিশেষত নির্বাচনের মুখে। নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগকে সাহায্য করার রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছাটিও মূলত মৌখিক স্তরেই থেকে যায়, তার ফলিত প্রয়োগ ঘটে না। নিধিরাম সর্দারদের পক্ষে যুদ্ধ জয় করা সহজ কাজ নয়। ভবিষ্যতের জন্য সমৃদ্ধি অর্জন করা, যাতে ক্রমে বয়স্কদের সংখ্যাবৃদ্ধি হলেও ভারত স্বচ্ছন্দে তার সম্মুখীন হতে পারে— সেই স্বপ্ন দেখা আপাতত মুশকিল। হাতে এখনও সময় আছে, কিন্তু এখনই তৎপর না হলে সেই সুবিধাটুকুও হাতছাড়া হবে। সময় রাজনীতির তোয়াক্কা করে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Age United Nations report India's Population
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE