Advertisement
১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Loan Bond

দায়বদ্ধতার অভাব

মালিকানা প্রতিষ্ঠায়, বিবাদ ঠেকাতে, ভবিষ্যৎ আদানপ্রদানের সুবিধার্থে, আইনি প্রয়োজন মেটাতে এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্যের নাগাল পেতে মূল দলিলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাঙ্কের তরফে যদি তা খোয়া যায় তবে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার যাবতীয় দায় বর্তায় সেই ব্যাঙ্কের উপরেই।

An image of loan

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৪০
Share: Save:

গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার সময় বাড়ির দলিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা রাখতে হয় ব্যাঙ্ক বা অন্য ঋণপ্রদানকারী আর্থিক সংস্থার কাছে। ঋণ পুরোপুরি শোধ না হওয়া পর্যন্ত নথিগুলি থাকে তাদের কাছেই। ঋণখেলাপি হলে এর সাহায্যেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করে থাকে তারা। কিন্তু অভিযোগ, ধার শোধ হওয়ার পরেও আসল নথি দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে কিছু ঋণদাতা সংস্থা। বহু ক্ষেত্রে এমন নথি খোয়াও যায়। তা ছাড়া, নথি ফেরতের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগত নীতি হেরফেরের কারণে আরও সমস্যা বাড়ে গ্রাহকদের। সম্প্রতি ব্যাঙ্কের এ-হেন গাফিলতি রোধে উদ্যোগী হয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। শীর্ষ ব্যাঙ্কটি নির্দেশিকা জারি করেছে যে, ঋণ শোধের ত্রিশ দিনের মধ্যে গ্রাহকের স্থাবর বা অস্থাবর— যে কোনও সম্পদের আসল নথি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে। নথি ফেরাতে দেরি হলে দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাঙ্কটিকে। শুধু তা-ই নয়, নথি ফেরাতে দেরি হলে তার উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করে গ্রাহককে তা জানাতে উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিকেই।

মালিকানা প্রতিষ্ঠায়, বিবাদ ঠেকাতে, ভবিষ্যৎ আদানপ্রদানের সুবিধার্থে, আইনি প্রয়োজন মেটাতে এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্যের নাগাল পেতে মূল দলিলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাঙ্কের তরফে যদি তা খোয়া যায় তবে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার যাবতীয় দায় বর্তায় সেই ব্যাঙ্কের উপরেই। যেমন, নথি হারানোর বিষয়ে একটি স্বীকারোক্তিপত্র গ্রাহককে প্রদান করা, পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করা, তিনটি সংবাদপত্রে (ইংরেজি এবং আঞ্চলিক ভাষায়) নোটিস ছাপানো, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিলের একটি সার্টিফায়েড কপি জোগাড় করা ইত্যাদি। শুধু তা-ই নয়, ব্যাঙ্কিং কোডস অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড অব ইন্ডিয়া-র ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ন্যূনতম মানদণ্ড অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হয় গ্রাহককে। কারণ উপযুক্ত কাগজপত্র ছাড়া সম্পত্তির ঠিকঠাক মূল্য মেলে না গ্রাহকের। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দূর অস্ত্, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নথি হারানোর দায়ই স্বীকার করে না আর্থিক সংস্থাগুলি। ফলে, লড়াই গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তাতে অর্থদণ্ড এবং সময় ব্যয়, দুই-ই হয় গ্রাহকের। আশার কথা, সময় ব্যয় হলেও উপযুক্ত আইনি পথে সুবিচারও মেলে। সম্প্রতি একটি প্রথম সারির বেসরকারি ব্যাঙ্ককে গ্রাহকের তথ্য হারানোর অভিযোগে ন্যাশনাল কনজ়িউমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল কমিশন পঁচিশ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হারানো সব নথি তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ব্যাঙ্কটি একটি কুরিয়ার পরিষেবা সংস্থার উপরে ওই দায় চাপানোর চেষ্টা করেছিল।

শুধু আসল নথিই নয়, ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ নথির ফোটোকপি পর্যন্ত নিজেদের কাছে ঠিকমতো গচ্ছিত রাখতে পারে না তারা, এমন অভিযোগও ওঠে। ফলে, হয়রানি বাড়ে গ্রাহকেরই। গ্রাহকের সুবিধা যেখানে ব্যাঙ্ক পরিষেবার অন্যতম উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, সেখানে বিপরীত চিত্রটিই ধরা পড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এটি যেন এক রকম ‘ট্র্যাডিশন’-এ পরিণত হয়েছে। ব্যাঙ্ক যদি গ্রাহকের সুবিধা অসুবিধার প্রতি দায়বদ্ধ না থাকে, সেই দায়বদ্ধতার পাঠ তাকে দিতে হবে। বি পি কানুনগো কমিটির সুপারিশে নেওয়া শীর্ষ ব্যাঙ্কের বর্তমান নির্দেশিকাটি তারই ইঙ্গিতবাহী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE