Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
Tea Gardens

চায়ের সঙ্কট

চা উৎপাদনে সরকারি ভর্তুকি দাবি করেছেন শিল্পপতিরা। সেই সঙ্গে, চিনে ভারতের চায়ের প্রচার করার জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছেন। প্রস্তাবগুলি বিবেচনার যোগ্য।

An image of Tea Garden

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৪
Share: Save:

জি২০ সম্মেলনে আগত বিদেশি অতিথিদের উপহার দেওয়া হয়েছে দার্জিলিং চা, এই সংবাদে খুশি দার্জিলিঙের চা উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা। তবে এমন উজ্জ্বল আনন্দের অপর পাশে রয়েছে উৎকণ্ঠার অন্ধকার। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন (আইটিএ)-এর বার্ষিক সভায় কেন্দ্রের অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব অমরদীপ সিংহ ভাটিয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, পঞ্চাশের দশকে রফতানি বাজারে ভারতীয় চায়ের অংশীদারি ছিল প্রায় বিয়াল্লিশ শতাংশ, এখন তা বারো শতাংশ। রফতানি বাড়াতে চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধির বার্তা দিয়েছেন সচিব। কিন্তু দার্জিলিং চা বিপুল সঙ্কটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, প্রবল ক্ষতির মুখে পড়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে একের পর এক বাগান। এই পরিস্থিতিতে চায়ের মান বৃদ্ধির আশা কতখানি বাস্তব? সম্প্রতি একটি বাণিজ্যিক চেম্বারের সভায় চা রফতানিকারীদের সংগঠনের পক্ষে এক মুখপাত্র দাবি করেন, কার্যত ‘আইসিইউ’-তে দার্জিলিঙের চা শিল্প। সংবাদে প্রকাশ, ফার্স্ট ফ্লাশ ও সেকেন্ড ফ্লাশ ছাড়া আর সব ধরনের চায়ের বাজারদর উৎপাদনের খরচের থেকে কম। এই বিপুল ক্ষতির জন্য একের পর এক চা বাগান বন্ধ হয়েছে, বহু ‘বট লিফ’ চা কারখানাতেও তালা ঝুলেছে। এই সঙ্কট এক দিনে তৈরি হয়নি। বছর ছয়েক আগে পাহাড়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনে চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পরে কোভিড অতিমারির ফলে বাগানে কাজ বন্ধ থাকা এবং রফতানিতে ঘাটতি ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়েছে। সর্বোপরি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চড়া রোদ, অনাবৃষ্টি এবং রোগের প্রাদুর্ভাবে জেরবার হচ্ছে চা বাগানগুলি। সংবাদে প্রকাশ, এ বছর তরাই ও ডুয়ার্স, দুই অঞ্চলেই দ্বিতীয় ফ্লাশ চায়ের উৎপাদন কমেছে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ।

এই পরিস্থিতিতে চা উৎপাদনে সরকারি ভর্তুকি দাবি করেছেন শিল্পপতিরা। সেই সঙ্গে, চিনে ভারতের চায়ের প্রচার করার জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছেন। প্রস্তাবগুলি বিবেচনার যোগ্য। তবে মনে রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গে চা শিল্পের পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলিও। চা পাতায় কীটনাশকের আধিক্য বিদেশের বাজারে ভারতীয় চায়ের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়েছে। কীটনাশকের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিও চালু রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের অর্ধেক চা পাতাই যখন উৎপন্ন হচ্ছে ছোট চা চাষিদের বাগানে, এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য যখন পোকার আক্রমণ বাড়ছে, তখন কীটনাশকের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত কঠিন। বস্তুত ছোট বাগানে উৎপাদিত পাতার গুণমানের নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে করা যাবে, এ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা করা হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে পঞ্চাশ হাজারের উপর ছোট চা বাগান রয়েছে। অতএব রাজ্যের চায়ের গুণমান উন্নত করে চা শিল্পকে লাভজনক করতে হলে এই চাষিদের সুযোগ-সুবিধা, এবং পরীক্ষাগারে তাদের উৎপাদিত পাতার নিয়মিত পরীক্ষাও প্রয়োজন। বড় চা বাগানগুলির সঙ্কটও কম নয়। সেখানে এক দিকে মজুরি না বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা চলছে, রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতা সত্ত্বেও তা মেটেনি, বহু শ্রমিক কাজ ছাড়ছেন। অন্য দিকে চা বাগানগুলি কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে লোকসান কমাতে চাইছে। সব মিলিয়ে ১৭০ বছরের প্রাচীন এই শিল্প তার মর্যাদার স্থানটি ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় গাঢ় হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE