Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩
Mental Healthcare Institutions

মানবিকতার লড়াই

২০১৭ সালের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন অনুসারে, হাসপাতালের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে যাঁরা সমাজে প্রবেশ করছেন, তাঁদের পরিষেবা দানের দায়িত্বটি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের।

Representational image of Mental Health.

রোগমুক্তদের বেআইনি ভাবে আটকে রাখা হয় হাসপাতালে। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪০
Share: Save:

অ-মানবিক এবং ভয়াবহ পরিস্থিতি। দেশের ৪৬টি সরকারি মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে ঠিক এই কথাগুলিই জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তারা আরও উল্লেখ করেছে, মানসিক ভাবে অসুস্থ রোগীদের মানবাধিকারের বিষয়টি লঙ্ঘিত হয় এই সব প্রতিষ্ঠানে। রোগমুক্তদের বেআইনি ভাবে আটকে রাখা হয় হাসপাতালে। চিকিৎসক এবং কর্মীর সংখ্যাও অত্যন্ত কম। সুতরাং, কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের নোটিস পাঠানো হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বরাদ্দ, প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামোগত অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ উন্নতির রূপরেখা কী— এমত বিভিন্ন বিষয়ে ছ’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

দেশের সরকারি মানসিক হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। তিন বছর আগেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নিয়োজিত এক টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে উঠে এসেছিল দেশের ২৪টি রাজ্যের ৪৩টি মানসিক হাসপাতালের কয়েক হাজার রোগী সুস্থ হওয়ার পরও অবৈধ ভাবে হাসপাতালেই থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। মাত্র দু’টি রাজ্যে মেন্টাল হেলথ রিভিউ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অথচ, ২০১৭ সালের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইন অনুসারে, হাসপাতালের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে যাঁরা সমাজে প্রবেশ করছেন, তাঁদের পরিষেবা দানের দায়িত্বটি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে জানায়, সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর মানসিক রোগীকে সমাজে ফিরিয়ে আনতেই হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করতে হবে। তৎসত্ত্বেও কিছু ব্যতিক্রম বাদে রাজ্যগুলি এই কাজে অগ্রসর হয়নি। পরিকাঠামোর দিক থেকেও সরকারি মানসিক হাসপাতালগুলি বহু পিছিয়ে। এখনও মানসিক হাসপাতালেই মূলত মনোরোগীদের চিকিৎসা হয়, সাধারণ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগে ভর্তি করানোর প্রবণতা যথেষ্ট কম। জেলা বা ব্লক স্তরের হাসপাতালে মানসিক রোগ চিকিৎসার যথেষ্ট পরিকাঠামোও নেই।

কয়েক মাস পূর্বেই কলকাতায় মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র পাভলভ হাসপাতাল ঘুরে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মন্তব্য করেছিলেন, হাসপাতালের অভ্যন্তর মানুষের বসবাসের উপযুক্ত নয়। শুধু পাভলভ নয়, প্রায় সর্বত্রই হাসপাতালের পরিকাঠামোর তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে, সুচিকিৎসা এবং নজরদারির বিষয়টি কার্যত অসম্ভব। বছর দুয়েক আগে পাভলভে গলায় ডিম আটকে যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং সামগ্রিক ভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সরকারের উদাসীনতার বিষয়টি বারংবার আলোচিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি। সর্বোপরি, মানসিক রোগের ক্ষেত্রেও যে নির্দিষ্ট চিকিৎসা এবং নজরদারিতে নিরাময় সম্ভব, সেই বোধ কোনও স্তরেই গড়ে ওঠেনি। ফলে, পৃথক ভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগের কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। চিকিৎসার পরিভাষায় যাঁরা ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’, তাঁদের মধ্যে অনেকের হয়তো পরবর্তী জীবনে একটা সাহায্যকারী পরিকাঠামো প্রয়োজন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সুদীর্ঘ অবহেলা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার ভিতরেই একটা ফাঁক তৈরি করে দিয়েছে। ফলে মনোরোগীদের কাছে বৃহত্তর সমাজে ফেরার লড়াই কঠিন থেকে গিয়েছে, আজও।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.