Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
S. Jaishankar

ভারসাম্যের পথ

সিঙ্গাপুর, ফিলিপিনস এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চিনকে বার্তা দেওয়াই নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য: বিদেশমন্ত্রীর বার্তায় স্পষ্ট।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১২
Share: Save:

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ত্রিদেশীয় বিদেশ সফর সম্পন্ন করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। মোদী সরকারের বর্তমান জমানার অন্তিম পর্বে এসেও ভারত-প্রশান্ত মহসাগরীয় সমুদ্র রণনীতি নিয়ে দিল্লি যে সক্রিয়, তার ইঙ্গিত মিলল সফরে। সিঙ্গাপুর, ফিলিপিনস এবং মালয়েশিয়ার মতো দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চিনকে বার্তা দেওয়াই নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য: বিদেশমন্ত্রীর বার্তায় স্পষ্ট। ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগই পরিচালিত হয় ভারত মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে। সুতরাং, এই অঞ্চলের ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ রয়েছে দিল্লির। লক্ষণীয়, উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা, উন্নয়ন, স্থায়িত্ব এবং শান্তির সার্বিক ভাবনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৫ সালে ‘সিকিয়োরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন’ বা ‘সাগর’ নীতির উপস্থাপন করেন, যা এ-যাবৎ দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তার মুখ্য অভিমুখ থেকেছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই মহাসাগর অঞ্চলে ভারতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চিনের কারণে। ভারত মহাসাগরে চিন তার প্রভাব বিস্তার করেছে মূলত দুই উদ্দেশ্যে— প্রথমত, শক্তি-সহ বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ আর দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা এবং অন্যান্য দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা। বস্তুত, ভারত মহাসাগর অঞ্চলে পশ্চিমি নৌ-শক্তিগুলির তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে চিন— এই অঞ্চলে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি সামরিক উপস্থিতি বহাল রেখে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর সামুদ্রিক অংশ-সহ ভারত মহাসাগরে বেজিং-এর ক্রমবর্ধমান বিস্তারনীতি তাই উদ্বেগ বাড়িয়েছে দিল্লির। শুধু তা-ই নয়, গত জানুয়ারিতে মলদ্বীপের চিন-ঘেঁষা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সে দেশ থেকে ভারতীয় সেনা সরিয়ে নেওয়ার দাবি এবং পরবর্তী সময়ে সেখানে চিনের একটি গবেষণামূলক জাহাজকে স্বাগত জানানো ঘৃতাহুতি দিয়েছে সেই উদ্বেগে। চিনের অনুপ্রবেশের জেরেই ইন্দো-প্যাসিফিক ভূরাজনীতিতে নিজের সক্রিয়তা বাড়াতে বাধ্য হয়েছে ভারত। এই সূত্রে ২০১৮ সালে শাংগ্রি-লা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দিলেও একই সঙ্গে আশ্বাস দেন যে, তাঁরা কারও স্বার্থ খর্ব করবেন না। ভারতের কাছে বিলক্ষণ স্পষ্ট, বিশ্ব পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। তৎসত্ত্বেও এই নতুন বিশ্ব ব্যবস্থাকে সবার জন্য মুক্ত, অবাধ এবং সমানাধিকারযুক্ত হওয়ার উপরেই জোর দিয়েছে দিল্লি, যা গড়ে উঠবে আইন এবং নীতির ভিত্তিতে এবং সংলাপের মাধ্যমে। এই পন্থার কেন্দ্রে রাখা হয়েছে আসিয়ানকে। কোয়াডের ক্ষেত্রেও একই পরিকল্পনা অবলম্বন করেছে ভারত। ভারত মহাসাগরে চিনের উপস্থিতি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আসিয়ান রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে যৌথ নৌ-মহড়ার মাধ্যমে দক্ষিণ চিন সাগরে ভারত তার উপস্থিতি বৃদ্ধি করলেও, আঞ্চলিক স্থিতবস্থার স্বার্থে চিনের সঙ্গে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলির বিবাদের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা গিয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উপরেই জোর দিয়েছে দিল্লি। আগামী লোকসভা ভোটে যে ফলই হোক না কেন, পূর্ব দিগন্তে আগামী দিনে ভারত এই কূটনীতি অনুসরণ করলেই মঙ্গল।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE