E-Paper

ক্ষতির চাষ

বীজের নমুনা, মাটির নমুনা, এবং চাষির কাছ থেকে চাষের বিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এখনই তার কারণ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৭
picture of farmers.

পর পর তিন বছর ক্ষতির মুখে পড়লেন আলুচাষি— সঙ্কট এ বার তীব্রতর। ফাইল চিত্র।

আলুচাষির হতাশ মুখ পশ্চিমবঙ্গে অতিপরিচিত দৃশ্য। তবু এ বছর আলু-চাষের সঙ্কট বিশেষ গুরুত্ব দাবি করে। প্রথমত, এ নিয়ে পর পর তিন বছর ক্ষতির মুখে পড়লেন আলুচাষি— সঙ্কট এ বার তীব্রতর। দ্বিতীয়ত, এ বার একই সঙ্গে উৎপাদন এবং বিপণন, দু’দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশ কিছু চাষি। আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা চাষের অনুকূল থাকা সত্ত্বেও বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক অংশে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে কম। বীজের নমুনা, মাটির নমুনা, এবং চাষির কাছ থেকে চাষের বিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এখনই তার কারণ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সংবাদে প্রকাশ, অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বাড়িতে বীজ প্রস্তুতকারী চাষিরা। এটা প্রত্যাশিতই। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন পশ্চিমবঙ্গের বহু চাষি এখনও উন্নত মানের পরীক্ষিত, পরিশোধিত বীজের নাগাল পাচ্ছেন না? পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ত্রিশ লক্ষ চাষি আলু ফলান, আলুর উৎপাদনে এ রাজ্যের স্থান ভারতে দ্বিতীয়। অথচ, শংসাপ্রাপ্ত বীজ সমবায়ের মাধ্যমে, বা অন্য কোনও স্বচ্ছ উপায়ে সুলভে বিক্রির কোনও উদ্যোগ করে না সরকার। আলু বীজের কালোবাজারির সামনে বাংলার চাষি অসহায়। প্রায় প্রতি বছর কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাড়ানো হয় বীজের দাম। এই মরসুমে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সারের কালোবাজারি। আলু-চাষে ব্যবহৃত সার এ বার বাজারদরের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি দরে কিনতে বাধ্য হয়েছেন বাংলার চাষিরা। এতে চাষের খরচ বেড়েছে, ফলে ক্ষতির ঝুঁকিও বেড়েছে।

যে ব্যবসায়ী-চক্র চাষের মরসুমে উপকরণের দাম বাড়ায়, তারই একাংশ ফসল ওঠার মরসুমে ধান-আলুর মতো ফসলে দামে ধস নামায়। ফলে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন চাষিরা। বর্তমানে অন্তত আট-দশ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করতে না পারলে চাষের খরচ ওঠে না। কিন্তু ২০১৯-২০ সালের পর থেকে সে দর ওঠেনি বাজারে। এমনকি এ বছর সরকার যে ক্রয়মূল্য ধার্য করেছে (সাড়ে ছ’টাকা), তাতেও যথাযথ বিনিয়োগকারী চাষির ক্ষতি বাঁচানো যাবে না। উপরন্তু, সরকারি ক্রয়ের প্রভাব আলুর বাজার দরে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই চাষির অসহায়তার ইঙ্গিত মিলছে আত্মহননে— কালনার এক আলুচাষির আত্মহত্যার পরে তাঁর পরিজন চাষের ক্ষতি এবং ঋণগ্রস্ততাকেই দায়ী করেছেন। গত কয়েক বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার চাষি আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্য বলে দেখালেও, অসরকারি নানা সমীক্ষায় এবং সংবাদে বার বার বাংলার চাষির আত্মহত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। তাঁদের মধ্যে আলুচাষির সংখ্যাই বেশি।

এই সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ওঠে সরকারি সহায়তার রূপটি নিয়ে। উৎপাদনে অনুদান-ভর্তুকি, এবং ফসল উঠলে সহায়ক মূল্যে ক্রয়, এই দু’টি বিষয়েই সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অল্প কিছু প্রভাবশালী যাতে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি, কখনও বা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বাজারে চাহিদা সম্পর্কে যথাযথ তথ্য চাষিকে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে না। উৎপাদন-বিপণনের প্রক্রিয়াকে বাজারের নিয়মের অনুবর্তী করতে না পারলে রাজকোষের উপর কৃষক-সহায়তার বোঝাই বাড়বে, চাষ লাভজনক হবে না। আলুর চাষি আর ক্রেতা, উভয় পক্ষকেই সেই ক্ষতি বহন করতে হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Potato Farming West Bengal Farmers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy