Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Cyber Crime

স্বার্থরক্ষা

গ্রাহকের প্রান্ত থেকে তথ্য চুরি যাওয়ার ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনই বিভিন্ন সংস্থার তথ্যভান্ডার থেকেও তথ্য চুরি যায়। সেই প্রবণতাও গোটা দুনিয়াতেই ক্রমবর্ধমান।

An image of Cyber Crime

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৩২
Share: Save:

খবরের কাগজের পৃষ্ঠা ওল্টালে দু’এক দিন অন্তর এক বিশেষ গোত্রের সংবাদ চোখে পড়ে— অনলাইন জালিয়াতি। কেউ দুষ্কৃতীদের ওটিপি দিয়ে ঠকেছেন, কেউ কোনও লিঙ্কে ক্লিক করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কেউ লোভের বশে অপরাধীদের ফাঁদে পা দিয়েছেন, কেউ আবার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে। খুঁজলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে দু’টি বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া যাবে— এক, তাঁরা অনলাইন দুনিয়ার চালচলনের সঙ্গে তেমন অভ্যস্ত নন; এবং দুই, গত কয়েক বছরে ভারত যে দ্রুতগতিতে অনলাইন লেনদেনের পথে হেঁটেছে, তাতে তাঁরাও বাধ্য হয়েছেন সেই তালে তাল মেলানোর চেষ্টাতে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অনলাইন লেনদেনের এই দ্রুত অগ্রগতি ভারতীয় অর্থব্যবস্থার পক্ষে সুসংবাদ, এবং সে-বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের সাধুবাদও প্রাপ্য। কিন্তু, সেই অগ্রগতির দায় যদি প্রযুক্তি ব্যবহারে তুলনায় অদক্ষ মানুষদের উপরে বর্তায়— অভিজ্ঞতা বলছে, যাঁদের অধিকাংশই প্রবীণ নাগরিক— তা হলে বুঝতে হয়, পরিকল্পনায় ফাঁক থেকে গিয়েছে। এই ফাঁক অবশ্য বর্তমান সরকারের অভিজ্ঞান। কিছুই করা হয় না, বললে অবশ্য অনৃতভাষণ হবে। অনলাইন জালিয়াতি বিষয়ে নাগরিককে সচেতন করার জন্য জনজ্ঞাপন উদ্যোগ শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন হল। সেই বিজ্ঞাপনে নাগরিককে জানানো হয়, অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন কাজগুলি নিরাপদ, কোনগুলি বিপজ্জনক। সচেতনতা তৈরির এই উদ্যোগের গুরুত্ব খাটো করে দেখানোর প্রশ্নই নেই। কিন্তু, সেটুকুই কি যথেষ্ট? সেই উদ্যোগ সত্ত্বেও যাঁরা প্রতারিত হবেন— হয়তো নিজেদের ভুলেই— তাঁদের কি সেই ভুলের মাসুল গুনে দেওয়া ভিন্ন উপায়ান্তর থাকবে না?

গ্রাহকের প্রান্ত থেকে তথ্য চুরি যাওয়ার ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনই বিভিন্ন সংস্থার তথ্যভান্ডার থেকেও তথ্য চুরি যায়। সেই প্রবণতাও গোটা দুনিয়াতেই ক্রমবর্ধমান। সম্প্রতি একটি বৈশ্বিক সমীক্ষায় জানা গেল যে, দুনিয়ার সর্বত্রই এই ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় গ্রাহকের উপরে। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ, যে ক্ষেত্রে দোষের তিলমাত্রও গ্রাহকের নয়, সেই ক্ষেত্রেও তাঁরাই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। যে-হেতু কোনও এক জন গ্রাহক এবং কোনও একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার কোনও তুলনা চলে না, অতএব কোনও মধ্যস্থতাকারী শক্তি না থাকলে এই দ্বন্দ্বে প্রতি বারই গ্রাহকের পরাজয় নিশ্চিত। এখানেই সরকারের ভূমিকা। সমীক্ষা বলছে, তথ্য তছরুপের প্রবণতা ঠেকাতে কৃত্রিম মেধা ও অটোমেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে— যে সংস্থাগুলি এ কাজে এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তাদের তথ্যচুরির ঘটনা কমেছে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে। কিন্তু, সেই প্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যয়সাপেক্ষ, সেই কারণেই এখনও সিংহভাগ সংস্থা তা এড়িয়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা সরকারের কর্তব্য। যে সংস্থা তথ্য তছরুপ এড়াতে সন্তোষজনক ভাবে যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না, তথ্য চুরি গেলে তার আর্থিক দায় সেই সংস্থার উপরে বর্তাবে, এমন একটি নিয়ম সিংহভাগ সংস্থাকেই দায়িত্বশীল করবে। অন্য দিকে, ব্যাঙ্ক বা ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের ক্ষেত্রেও বিমা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে, যেখানে জালিয়াতি হলে তার জন্য বিমার টাকা পাওয়া যাবে। বাজারব্যবস্থায় গ্রাহকের স্বার্থরক্ষার দায়িত্ব সরকার অস্বীকার করতে পারে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime online hacker Hacking Online fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE