—প্রতীকী ছবি।
অবশেষে তালা খুলেছে। দীর্ঘ গরমের ছুটি, লোকসভা নির্বাচনের বাধা পেরিয়ে গত ১০ জুন থেকে সরকারি ও সরকারপোষিত বিদ্যালয়গুলিতে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাতে সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা ছন্দে ফিরল ভেবে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনও কারণ নেই। এ রাজ্যে নির্বাচনপর্ব খাতায়-কলমে শেষ হলেও বাস্তবে তার জের চলে দীর্ঘ দিন। এ বারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। নির্বাচন-উত্তর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা যথেষ্ট ছিল, এবং সেই কারণেই ফলপ্রকাশের পরেও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থেকে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ফলে অন্যত্র পঠনপাঠনে স্বাভাবিক ছন্দ ফেরার তোড়জোর চললেও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে তার দেখা মেলেনি। অভিজ্ঞতা বলে— কেন্দ্রীয় বাহিনী বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ণোদ্যমে পঠনপাঠন চালু করা সম্ভব হয় না। কারণ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রায় সমগ্র অংশই বাহিনীর অস্থায়ী বাসস্থানের চেহারা নেওয়ায় সেগুলিতে ফের পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সময়সাপেক্ষ। তত দিন সেখানকার শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পঠনপাঠনের অধিকার থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়।
ক্লাস বন্ধ থাকার বিকল্প হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে অনলাইন ক্লাস চালু রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, এ রাজ্যে এখনও অনলাইন পঠনপাঠন অফলাইন ক্লাসের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। অতিমারির ধাক্কায় প্রায় দু’বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইন ক্লাস চালু রাখার পরিণতিটি সুখের হয়নি। শহরাঞ্চলের আলোকবৃত্তের বাইরে এক বিরাট সংখ্যক দরিদ্র শিক্ষার্থী শুধুমাত্র শিক্ষাবঞ্চিতই থাকেনি, তাদের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতিও দেখা গিয়েছিল লক্ষণীয় ভাবে। এই বারের পরিস্থিতি তার সঙ্গে তুলনীয় নয় ঠিকই, কিন্তু এটাও ঠিক, তীব্র গরম, নির্বাচনী কর্মকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলার ঘাটতি প্রভৃতি নানা অজুহাতে যদি বার বার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির দরজা শিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তবে শিক্ষার স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকতে পারে না। শিক্ষা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিভিন্ন কারণে সেই ধারাবাহিকতায় আঘাত পড়লে শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। বিভাজনের প্রসঙ্গটিও উড়িয়ে দেওয়ার নয়। গ্রীষ্মের ছুটির ক্ষেত্রে যে দরাজ হাতে সরকারি এবং সরকারপোষিত বিদ্যালয়গুলিতে ছুটি বিতরণ করা হয়, অনেক বেসরকারি বিদ্যালয়ই সেই পথে হাঁটে না। এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বাহিনী যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে থেকে গিয়েছে, সেগুলি ছাড়া অন্যত্র মোটের উপর পড়াশোনা শুরু করা গিয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে এই ক্রমাগত বিভাজন লজ্জার।
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ও সরকারপোষিত বিদ্যালয়গুলিকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। পরিকাঠামোর অভাবে, উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষকের অভাবে প্রায়শই নিয়মিত পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজেও শিক্ষকরা নিয়োজিত থাকায় শ্রেণিকক্ষের বরাদ্দ সময়ে কোপ পড়ে। তদুপরি নির্বাচন এবং নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতির প্রয়োজনে বিদ্যালয়গুলির এ-হেন নির্বিচার ব্যবহার বিস্ময়ের উদ্রেক করে। কেন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাহিনীর থাকার বিকল্প ব্যবস্থা এত দিনেও করা গেল না, সেই প্রশ্নটি এক্ষণে তোলা আবশ্যক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবহার হোক শিক্ষার কাজেই। তাকে সরকারি খেয়ালখুশির আশ্রয়স্থল বানিয়ে তোলার চেষ্টাটি বিপজ্জনক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy