E-Paper

অনাগ্রহ

আর্থিক-সামাজিক এবং মানসিকতার এ-হেন বাধা সত্ত্বেও যে মেয়েরা বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫৬
Representational image of using digital payment.

বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা সম্পর্কে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ। প্রতীকী ছবি।

সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায়, কিন্তু ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা এখনও বাড়েনি। বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা পাওয়া যায়, দেশের এমন ৫০০০টি বিপণিতে সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ইনোভেশন হাব-এর তরফে এক সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে আছেন। তিন-চতুর্থাংশের অধিক মহিলা জানিয়েছেন, ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা ব্যবহার করে তাঁরা প্রকৃতপক্ষে নগদ টাকা তোলেন। তবে এই চিত্রের বিপরীত দিকটি যথেষ্ট ইতিবাচক। দেখা গিয়েছে, সার্বিক ভাবে বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা সম্পর্কে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ। মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন বিলের টাকা মেটানো, এবং নগদে টাকা তোলার ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সুবিধা নিচ্ছেন মেয়েরা। ডিজিটাল লেনদেনে অনীহা থাকলেও প্যানের জন্য আর্জি জানানো, কেনাকাটা, বিনোদন, পর্যটন-সংক্রান্ত পরিষেবার ক্ষেত্রে মেয়েদের একাংশ ডিজিটাল মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছেন।

ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে মেয়েদের পিছিয়ে পড়ার ইঙ্গিত অবশ্য অতিমারিকালেই স্পষ্ট হয়েছিল। অতিমারি চলাকালীন ডিজিটাল লেনদেনের সংখ্যা, এবং টাকার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ে। কিন্তু একই সঙ্গে প্রকট হয় লিঙ্গভিত্তিক ডিজিটাল বৈষম্য। অনেক সময় গৃহাভ্যন্তরের নারী-পুরুষ বৈষম্য মেয়েদের মোবাইলের মতো ডিজিটাল সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অতিমারিকালীন বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, এ দেশে পুরুষদের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম মেয়ের সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি মোবাইল ফোন আছে। এবং পুরুষদের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কম মেয়ে মোবাইলে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করেন। শহরের তুলনায় গ্রামে এই ব্যবধান অনেক বেশি। তা ছাড়া, ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই অর্থ-সংক্রান্ত কাজকর্মের সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের উপর। মেয়েদের, বিশেষত গ্রামীণ ভারতের মেয়েদের অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের অর্থ-সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। এই সব ক্ষেত্রে তাঁদের ডিজিটাল লেনদেনে অংশগ্রহণ অলীক কল্পনামাত্র। আর্থিক দুনিয়া থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হওয়ার ফলে অনেক মেয়ের মধ্যে এ বিষয়ে ভীতিও রয়েছে। ডিজিটাল লেনদেনে অনাগ্রহের পিছনে সেটাও একটা কারণ।

তবে, আর্থিক-সামাজিক এবং মানসিকতার এ-হেন বাধা সত্ত্বেও যে মেয়েরা বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ প্রচার, সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টার সম্মিলিত ফল এই পরিবর্তন। সুতরাং, সেই প্রচেষ্টা ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। মেয়েদের আর্থিক-সাক্ষরতার মতো বিষয়টির সঙ্গে আর্থিক নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা সরাসরি যুক্ত। বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা সম্পর্কে মেয়েদের সচেতনতা বৃদ্ধির হার শুভ ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু আর্থিক সচেতনতা বাড়লেও কেন ডিজিটাল লেনদেনে তাঁরা যথেষ্ট আগ্রহী হচ্ছেন না, সেই কারণগুলি খুঁজে বার করে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা জরুরি। এতে লিঙ্গভিত্তিক ডিজিটাল বৈষম্য দূর হবে, আর্থিক ক্ষেত্রে মেয়েদের ক্ষমতায়ন সম্পূর্ণ হবে। আধুনিক ভারতে এর গুরুত্বটি উপেক্ষণীয় নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Digital Payment Women

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy